রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা ফার্মগেটে আবারও মেট্রোরেলের একটি বিয়ারিং প্যাড খুলে নিচে পড়ে যাওয়ার ঘটনায় একজন পথচারীর প্রাণহানি ঘটেছে। রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার সময় ঘটনার পর থেকে পুরো মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।
নিহতের পরিচয়
প্রত্যক্ষদর্শী এবং পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নিহতের নাম আবুল কালাম আযাদ। তার বয়স আনুমানিক ৩৫ থেকে ৪০ বছর। তার বাড়ি শরীয়তপুর জেলায়। স্থানীয়রা জানান, তিনি সাধারণত ফার্মগেট এলাকা দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করতেন।
ঘটনার বিবরণ
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আবুল কালাম আযাদ ফার্মগেট এলাকায় হেঁটে যাচ্ছিলেন, সেই সময় হঠাৎ মেট্রোরেলের পিলারের উপরের অংশ থেকে একটি ভারী ধাতব বিয়ারিং প্যাড নিচে পড়ে তার মাথায় আঘাত করে। স্থানীয়রা দ্রুত তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনার পরপরই আশপাশের এলাকা আতঙ্কে কেঁপে ওঠে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সেই মুহূর্তে প্রচুর রক্তপাত হয়েছিল। অনেকেই চিৎকার করে সাহায্যের জন্য ডাক দিয়েছিলেন। পুলিশ এবং উদ্ধারকারী দল দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে।
মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার কারণে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত পুরো মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কখন পুনরায় চলাচল শুরু হবে তা এখনও নিশ্চিত নয়।
ডিএমটিসিএল-এর একজন কর্মকর্তা বলেন, “আমরা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছি। মেট্রোরেল যাত্রীরা নিরাপদ থাকবেন, সেজন্য পুরো লাইন বন্ধ রাখা হয়েছে। আহত বা প্রাণহানির বিষয়ে আমরা দ্রুত খোঁজ নিচ্ছি।”
ফার্মগেটের পূর্ববর্তী দুর্ঘটনা
এই ঘটনা নতুন নয়। গত বছরের সেপ্টেম্বরে একই এলাকায় একটি বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়েছিল। তবে সে সময় কেউ প্রাণহানি ঘটেনি। এই ধরনের পুনরাবৃত্তি উদ্বেগজনক বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাডগুলো নিয়মিতভাবে পরীক্ষার মাধ্যমে রক্ষণাবেক্ষণ করা প্রয়োজন। বিয়ারিং প্যাড হলো মেট্রোরেলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা কাঠামোর ভারবহন নিশ্চিত করে। এর মধ্যে কোনো খারাপ বা ক্ষতিগ্রস্ত অংশ থাকলে এটি বড় ধরনের দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে।
নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতি
প্রায়ই দেখা যায়, মেট্রোরেলের নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতি দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করছেন, ফার্মগেট এলাকা অত্যন্ত ব্যস্ত, যেখানে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করে। এমন স্থানে দুর্ঘটনা ঘটলে যে পরিমাণ জন-হানি হতে পারে, তা কল্পনা করা যায়।
নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, “বিয়ারিং প্যাড নিয়মিত চেক করা উচিত। এই ধরনের উপাদান যদি ঝুঁকিপূর্ণ হয়, তা অবিলম্বে প্রতিস্থাপন করতে হবে। শুধু রক্ষণাবেক্ষণ নয়, সাধারণ মানুষকে সতর্ক করার জন্যও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।”
স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া
স্থানীয়রা এই ঘটনায় ভীত ও উদ্বিগ্ন। একজন দোকানদার বলেন, “এলাকা দিয়ে চলাচল করা এখন ভয়ঙ্কর হয়ে গেছে। আমরা চাই কর্তৃপক্ষ দ্রুত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিক।”
অন্যান্য একজন পথচারী বলেন, “গত বছরও এমন ঘটনা ঘটেছিল। প্রশাসন কিছু শিখেনি বলে মনে হয়। আমাদের জীবন মূল্যবান, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।”
পুলিশের পদক্ষেপ
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ জানিয়েছে, তারা ঘটনাস্থল ঘিরে রেখেছে এবং তদন্ত শুরু করেছে। একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে এটি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ঘটেছে। তবে আমরা আরও বিস্তারিত তদন্ত করবো। কোনো অভিযোগ বা অবহেলার বিষয় থাকলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ভবিষ্যতের ঝুঁকি
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, যদি মেট্রোরেলের উপাদান এবং রক্ষণাবেক্ষণে যথাযথ মনোযোগ না দেওয়া হয়, ভবিষ্যতে আরও দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। ঢাকা শহরে মেট্রোরেল যাত্রীরা প্রতিদিন শত শত মানুষ, তাই নিরাপত্তা ব্যবস্থা অবিলম্বে শক্তিশালী করা প্রয়োজন।
ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে তারা সকল বিয়ারিং প্যাড পরীক্ষা করে ঝুঁকিপূর্ণ অংশ শনাক্ত করবে এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার করবে।
সমাধানের সুপারিশ
বিশেষজ্ঞরা সুপারিশ করছেন:
- নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ও ত্রুটি নির্ণয় পরীক্ষা বৃদ্ধি করতে হবে।
- বিয়ারিং প্যাড ও অন্যান্য ভারবহন উপাদান প্রতিস্থাপন করার সময় নির্ধারিত মান নিশ্চিত করতে হবে।
- জনসাধারণকে নিরাপত্তা সতর্কবার্তা দেওয়া এবং বিপজ্জনক এলাকা চিহ্নিত করা উচিত।
- দুর্ঘটনা ঘটলে দ্রুত উদ্ধার ব্যবস্থা ও চিকিৎসা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
MAH – 13486 I Signalbd.com



