বাংলাদেশ

এ বছরের ডিসেম্বর বা আগামী বছরের জুনে নির্বাচন ধরে ইসি প্রস্তুতি নিচ্ছে: ইসি সানাউল্লাহ

বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন (ইসি) চলতি বছরের ডিসেম্বর অথবা আগামী বছরের জুনে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ তথ্য জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। তিনি আজ সোমবার রাজশাহী জেলার ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমের সভায় এ কথা বলেন।

সভার আয়োজন

রাজশাহী আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার এবং জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল আলম। সভায় জেলা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা এবং নিবন্ধন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত কর্মীরা তাদের মতামত তুলে ধরেন।

নির্বাচনের সময়সূচি

নির্বাচন কমিশনার সানাউল্লাহ বলেন, “নির্বাচনের সময়টা নির্বাচন কমিশনের হাতে নেই। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার গত ১৬ ডিসেম্বরের বক্তব্য থেকে একটি ধারণা পাওয়া গেছে। তিনি বলেছেন, যদি সংস্কারকাজ সংক্ষিপ্ত করতে হয় এবং রাজনৈতিক দলগুলো সেই পর্যায়ে এসে দাঁড়ায়, তাহলে আগামী ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে। আর যদি সংস্কার কার্যক্রম আরও বাড়ানো হয়, তাহলে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব।”

স্থানীয় সরকার নির্বাচন

স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ব্যাপারে তিনি বলেন, “স্থানীয় নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশন নেয় না। নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব হচ্ছে জাতীয় নির্বাচন ও রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করা। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় যখন সিদ্ধান্ত নেয়, তখন সেই নির্বাচন তারা করে দেয়। সুতরাং, এই নির্বাচন হবে কি হবে না, কখন হবে, এটা সরকারই সিদ্ধান্ত নেবে।”

ভোটার তালিকা হালনাগাদ

ভোটার তালিকায় বৈধ বাংলাদেশি কেউ বাদ না পড়েন, সে ব্যাপারে ইসি সানাউল্লাহ বলেন, “আমাদের পরিপত্রের মধ্যে রয়েছে অনলাইন জন্মনিবন্ধন লাগবে। কারণ, এটি বেশি বিশ্বাসযোগ্য। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, জন্মনিবন্ধনেও অনেক ভুলভ্রান্তি রয়েছে। কোনো একটি জেলায় গিয়ে দেখলাম, একটি পৌরসভায় ব্যাপক ভুলভ্রান্তি রয়েছে। ভুলটা না নিয়ে সঠিকতা নিশ্চিত করে কাজ করতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “আমাদের উদ্দেশ্য কাগজ চেক করা নয়, বরং বৈধ বাংলাদেশিকে অন্তর্ভুক্তি করা। যদি কোনো কাগজ পেতে হয়, তাহলে তাঁকে সহযোগিতা করতে হবে। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই তিনি যেন ভোটার থেকে বাদ না পড়েন।”

ভোটার নিবন্ধন প্রক্রিয়া

ইসি সানাউল্লাহ বলেন, “ভোটার তালিকা নিয়ে খুব বেশি জালিয়াতি করার সুযোগ নেই। কারণ, ডেটাবেজের মাধ্যমে এটি কেন্দ্রীয়ভাবে ক্রস চেক করা হয়। সমস্যা হয় মৃত ভোটারদের যথাযথভাবে বাদ না দেওয়ার কারণে। আমাদের জনগণ এতটা সচেতন নন যে, কেউ মারা গেলে অফিসে গিয়ে ফরম পূরণ করে মৃত্যুর সংবাদ দেন। এ কারণে বাড়ি বাড়ি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “ছবি ছাড়া বর্তমানে ভোটার নিবন্ধন হওয়ার সুযোগ নেই। এটি জনসচেতনতার ব্যাপার এবং এখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের বড় ভূমিকা রয়েছে।”

নির্বাচন কর্মকর্তাদের দায়িত্ব

বিগত নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী নির্বাচন কর্মকর্তাদের বিষয়ে তিনি বলেন, “বিগত নির্বাচনে যাঁরা দায়িত্ব পালন করেছেন, তাঁরা কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নন। যদি কেউ সুপরিকল্পিতভাবে কোনো অন্যায় করে থাকেন, তাঁকে আইন ও আদালতের সামনে যেতে হবে। এ ধরনের একটি বিষয় সংস্কার কমিশন প্রতিবেদনও নিয়ে এসেছে। এটি নির্বাচন কমিশনের বিষয় নয়, এটি আইন ও আদালতের বিষয়।”

নির্বাচন কমিশনার সানাউল্লাহর বক্তব্য থেকে স্পষ্ট যে, বাংলাদেশে আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে এবং ভোটার তালিকা হালনাগাদ প্রক্রিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং নির্বাচনের সময়সূচি নিয়ে জনগণের মধ্যে আগ্রহ বাড়ছে। আশা করা হচ্ছে, নির্বাচন কমিশন সঠিকভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করবে এবং একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করবে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button