বাংলাদেশ

সালমান শাহ হত্যা মামলা: স্ত্রীসহ ১১ আসামির তথ্য ইমিগ্রেশনে পাঠালো পুলিশ

Advertisement

চিত্রনায়ক সালমান শাহ হত্যা মামলার আসামিদের দেশত্যাগ রোধে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের কাছে তথ্য পাঠিয়েছে পুলিশ। শনিবার (২৫ অক্টোবর) রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম ফারুক সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সালমান শাহর মৃত্যুর ২৯ বছর পর তার সাবেক স্ত্রী সামিরা হকসহ মোট ১১ জনকে এ মামলায় আসামি করা হয়েছে।

ঘটনা ও পুলিশি পদক্ষেপ

মামলার তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ওসি গোলাম ফারুক জানান, “আদালতের নির্দেশে সালমান শাহ হত্যা মামলা নেওয়া হয়েছে। মামলায় ১১ জনকে এজাহারভুক্ত আসামি করা হয়েছে, পাশাপাশি অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকেও আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আসামিদের খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। কেউ কেউ দেশের বাইরে থাকতে পারেন। তাই তাদের দেশে থাকা নিশ্চিত করতে মোবাইল ট্র্যাকিংসহ বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। দেশের বাইরে যেতে না পারে সেজন্য নামসহ তথ্য ইমিগ্রেশনে পাঠানো হয়েছে।”

মামলার বাদী হলেন সালমান শাহর মামা আলমগীর কুমকুম। গত ২১ অক্টোবর মধ্যরাতে রমনা থানায় এই হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।

আসামিদের তালিকা

মামলায় উল্লেখিত প্রধান আসামিদের মধ্যে রয়েছেন:

  • সামিরা হক (সালমান শাহর সাবেক স্ত্রী)
  • লতিফা হক লুসি
  • ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই
  • চলচ্চিত্রের খলনায়ক ডন
  • রিজভী আহম্মেদ ওরফে ফরহাদ
  • ডেডিড, জাভেদ, ফারুক, রুবী, আব্দুস ছাত্তার, সাজু

মামলায় অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকেও আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। পুলিশের ভাষ্য, “কেউ কেউ বর্তমানে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন।”

মামলার ইতিহাস ও প্রেক্ষাপট

সালমান শাহ (চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার ইমন) ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকার ইস্কাটনের ফ্ল্যাটে ঝুলন্ত অবস্থায় মৃত অবস্থায় পাওয়া যান। তখন বিষয়টি প্রথমে অপমৃত্যু হিসেবে দেখানো হয়েছিল।

তার বাবা কমরউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী অভিযোগ করেন, তার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। এরপর ১৯৯৭ সালে আদালতে একটি আবেদন করা হয়। সেই বছরের নভেম্বর মাসে সিআইডি তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে, যেখানে বলা হয়, সালমান শাহ আত্মহত্যা করেছেন।

সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরী চূড়ান্ত প্রতিবেদনে সন্তুষ্ট হননি এবং দীর্ঘ ২৯ বছর ধরে হত্যার মামলা চালিয়ে যাচ্ছেন। পরবর্তী সময়ে মামলার তদন্তে র‌্যাব এবং পিবিআই অংশ নিয়েছে। ২০২০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পিবিআই চূড়ান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, পারিবারিক কলহ এবং মানসিক চাপের কারণে সালমান শাহ আত্মহত্যা করেছেন।

তদন্তের বর্তমান অবস্থা

রমনা মডেল থানা পুলিশ এখন মামলার তদন্তের দায়িত্বে আছে। আদালতের নির্দেশে মামলাটির একটি প্রতিবেদন আগামী ৭ ডিসেম্বরের মধ্যে দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ওসি ফারুক জানান, “আমরা সকল আসামির অবস্থান যাচাই করছি। দেশে থাকা বা বিদেশে থাকা অনুসারে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে তাদের দেশে থাকা নিশ্চিত করা হচ্ছে।”

পুলিশ এই মুহূর্তে মোবাইল ট্র্যাকিং, ডাটাবেস যাচাই এবং অন্যান্য প্রযুক্তিগত উপায়ে আসামিদের অবস্থান শনাক্ত করছে।

বিশেষজ্ঞ ও আইনজীবীর মতামত

আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “মামলার আসামিদের দেশত্যাগ রোধ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি তদন্ত প্রক্রিয়াকে সহজ করবে। দেশের বাইরে গেলে তদারকি কঠিন হয়ে যাবে।”

চলচ্চিত্র জগতের বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সালমান শাহর মৃত্যুর ২৯ বছর পর এই মামলা আবারও আলোচনায় আসায়, এটি নৈতিক ও সামাজিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। তারা বলছেন, “যা-ই হোক, ন্যায়বিচার নিশ্চিত হওয়া উচিত।”

সামাজিক প্রতিক্রিয়া

সালমান শাহর ভক্ত ও চলচ্চিত্র জগতের ব্যক্তিরা এই মামলার প্রতি আগ্রহী। তারা আশা করছেন, দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে। অনেকে মনে করছেন, মামলার প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হলে দেশের বিচার ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা আরও দৃঢ় হবে।

সালমান শাহ হত্যা মামলায় আসামিদের দেশত্যাগ রোধের জন্য ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষকে তথ্য পাঠানো হলো। মামলার তদন্ত চলছে, আসামিদের অবস্থান শনাক্তের মাধ্যমে দেশের বাইরে যাওয়া রোধ করা হচ্ছে। দীর্ঘ ২৯ বছরের পরে মামলার এই পদক্ষেপ ন্যায়বিচারের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে ধরা হচ্ছে।

পাঠকের প্রশ্ন হতে পারে, “আসামিদের দেশে থাকা নিশ্চিত হলে তদন্ত কেমন প্রভাব ফেলবে?”—এটি পরবর্তী সময়ে আদালতের কার্যক্রম এবং পুলিশের প্রতিবেদন দেখেই স্পষ্ট হবে।

এম আর এম – ১৯৩৫,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button