
ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি আগামী ডিসেম্বরে ঢাকায় আসার পরিকল্পনা করছেন। এটি হবে বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক সফর। ঢাকায় তার আগমনের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক, বাণিজ্যিক ও প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সম্পর্ক আরও মজবুত করার লক্ষ্য রাখা হয়েছে।
সফরের প্রস্তুতি ও সময়সূচি
ঢাকা ও রোমের কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, বড় দিনের পর ডিসেম্বরে সফরের প্রস্তুতি চলছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, “সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স এখনও বাকি আছে, তবে আশা করা হচ্ছে দ্রুত সমস্ত আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে।”
এর আগে ৩০ আগস্ট জর্জিয়া মেলোনির ঢাকায় আসার কথা ছিল। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জটিল পরিস্থিতির কারণে সফরটি স্থগিত হয়। তখন বাংলাদেশ, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের সফরও একই কারণে পিছিয়ে যায়।
সফরের মূল এজেন্ডা
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা জানান, জর্জিয়া মেলোনির ঢাকা সফরে তিনটি মূল বিষয় আলোচনার প্রধান হবে। এগুলো হলো:
- বাণিজ্যিক সহযোগিতা: দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি।
- প্রতিরক্ষা সম্পর্ক: যৌথ সামরিক ও নিরাপত্তা উদ্যোগ এবং প্রশিক্ষণ কার্যক্রম।
- অভিবাসন নীতি: বৈধ অভিবাসন এবং দু’দেশের নাগরিকদের জন্য সুবিধাজনক নীতিমালা।
সফরের সময় উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক ও দুই দেশের সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে।
ইতিহাস ও পূর্ববর্তী সফর
১৯৯৮ সালে ঢাকায় এসেছিলেন ইতালির তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রোমানো প্রোদি। সেই সফর ছিল বাংলাদেশের জন্য ইতালির কোনো প্রধানমন্ত্রীর প্রথম সফর।
জর্জিয়া মেলোনির এই সফর হবে দ্বিতীয়বারের মতো কোনও ইতালিয়ান প্রধানমন্ত্রী ঢাকায় আসছেন। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সময় ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোনো শীর্ষ নেতার এটাই প্রথম ঢাকা সফর হওয়ার কারণে এটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ফাঁকে দুই নেতা বৈঠক করেছিলেন। বৈঠকে দুই দেশ ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছিল।
কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রভাব
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই সফর বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক অবস্থানকে শক্তিশালী করবে। বিশেষ করে ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ইতালির প্রধানমন্ত্রীর সফর গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখবে।
সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ইতালির মধ্যে বাণিজ্যিক বিনিয়োগ এবং প্রযুক্তি, কৃষি ও শিক্ষা খাতে সহযোগিতা আরও বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হবে।
ব্যবসায় ও বাণিজ্যিক সম্ভাবনা
জর্জিয়া মেলোনির সফরের সময় ব্যবসায়িক মেলাও আয়োজন করা হতে পারে। এতে ইতালির বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের ব্যবসায়িক সুযোগের সাথে পরিচিত হবেন। বিশেষ করে শিল্প, প্রযুক্তি এবং অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।
সফরটি ইতালির বিভিন্ন কোম্পানির জন্য বাংলাদেশের বাজারে নতুন সুযোগ তৈরির সম্ভাবনাও বাড়াবে।
বিশ্লেষণ ও বিশেষজ্ঞ মতামত
কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই সফরের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও সুসংহত হবে। বিশেষত দক্ষিণ এশিয়ার বাজারে ইতালির বিনিয়োগ ও অংশীদারিত্বের সুযোগ বাড়বে।
বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, অভিবাসন, নিরাপত্তা ও বাণিজ্য সংক্রান্ত আলোচনার মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী সহযোগিতা ও সমঝোতা স্থাপন সম্ভব হবে।
ডিসেম্বরে ঢাকায় আসছেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি। এটি বাংলাদেশের জন্য কূটনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ সফর। সফরের মাধ্যমে বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা ও অভিবাসন নীতি নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি দুই দেশের সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হবে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই সফরের সাফল্য বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অবস্থানকে শক্তিশালী করতে এবং ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে সহযোগিতার নতুন পথ তৈরি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এম আর এম – ১৯২৪,Signalbd.com