অ্যাম্বুলেন্সে তুলে আমাকে ৫ জন বিবস্ত্র করে মারধর করেছে, বোতল দিয়ে উরুতে আঘাত করেছে

গাজীপুর টঙ্গী পূর্ব থানার ইমাম মুফতি মহিবুল্লাহ মিয়াজীকে (৬০) পঞ্চগড়ে উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেছেন, একের পর এক হুমকি ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
গাজীপুরের টঙ্গী পূর্ব থানার বিটিসিএল টিঅ্যান্ডটি কলোনি জামে মসজিদের ইমাম মুফতি মহিবুল্লাহ মিয়াজী নিখোঁজ হওয়ার এক দিন পর পঞ্চগড় থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি আছেন। কথা বলতে পারলেও বিছানা থেকে উঠতে পারছেন না। তিনি জানিয়েছেন, তাকে অ্যাম্বুলেন্সে তুলে পাঁচজন বিবস্ত্র করে মারধর করা হয়েছে এবং বোতল দিয়ে উরুতে আঘাত করা হয়েছে।
নিখোঁজ ও উদ্ধার পরিস্থিতি
বৃহস্পতিবার ভোরে পঞ্চগড় সদর উপজেলার হেলিপ্যাড এলাকায় সড়কের পাশে তাকে উদ্ধার করা হয়। স্থানীয়রা একটি গাছের সঙ্গে পা বাঁধা অবস্থায় মুফতি মহিবুল্লাহকে পড়ে থাকতে দেখেন এবং পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসে খবর দেন।
পুলিশ জানায়, ‘৯৯৯’ কলের মাধ্যমে খবর পেয়ে তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। পরবর্তীতে তার পরিচয় নিশ্চিত হয়ে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।
ইমামের বক্তব্য ও নির্যাতনের বিবরণ
মুফতি মহিবুল্লাহ মিয়াজী বলেন, বুধবার ফজরের নামাজের পর হাঁটতে বের হলে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে পাঁচজন এসে তার মুখে কাপড় চাপিয়ে তুলে নিয়ে যায়। এরপর তারা তাকে বিবস্ত্র অবস্থায় মারধর করে। তিনি জানান, “বোতলে পানি ভরে সেই বোতল দিয়ে আমার উরুতে মারধর করেছে। তারা প্রমিত বাংলায় কথা বলছিল, তবে তাদের বাংলাদেশি বলে মনে হয়নি। এক এক করে সব আলেমকে ক্ষতি করার হুমকিও দেওয়া হয়েছে।”
তিনি আরও অভিযোগ করেছেন, কয়েক মাস ধরে চিঠি ও ফোনের মাধ্যমে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। ইসকনের পক্ষ থেকে তাকে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বিষয়ে অবস্থান পরিবর্তনের জন্য চাপ দেওয়া হয়েছে।
চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য পরিস্থিতি
পঞ্চগড় সিভিল সার্জন ডা. মিজানুর রহমান জানান, হাসপাতালে ভর্তি করে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তার পূর্বে মাথায় অপারেশন হয়েছে এবং তিনি কিডনি ও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। বর্তমানে তার স্বাস্থ্য পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মুফতি মহিবুল্লাহ জুমার খুৎবায় সামাজিক অবক্ষয়, পারিবারিক মূল্যবোধ এবং উগ্রপন্থি সংগঠনের কার্যক্রম নিয়ে বক্তব্য দেওয়ার পর থেকে একাধিকবার হুমকির শিকার হয়েছেন। সর্বশেষ ২১ অক্টোবরও তাকে হুমকি দেওয়া হয়।
নিখোঁজ হওয়ার পর তার পরিবারের পক্ষ থেকে টঙ্গী পূর্ব থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।
এ ঘটনার প্রতিবাদে পঞ্চগড়ে বিভিন্ন ইসলামি সংগঠনের নেতাকর্মীরা শহরের চৌরঙ্গী মোড় থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিল প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে শেষ হয়। পথসভায় বক্তারা ইসকনকে দায়ী করে মুফতি মহিবুল্লাহকে অপহরণ ও নির্যাতন করার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।
বিশ্লেষণ
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। এমন ধরনের অপহরণ ও শারীরিক নির্যাতন ধর্মীয় নেতাদের মধ্যে ভয় সৃষ্টি করতে পারে এবং সমাজে অস্থিরতা ছড়াতে পারে।
পুলিশের তদন্ত এখনও চলছে, এবং পরিবারের দাবি অনুসারে অভিযুক্তদের দ্রুত শনাক্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা প্রয়োজন।
মুফতি মহিবুল্লাহ মিয়াজীর অ্যাম্বুলেন্সে অপহরণ ও নৃশংস নির্যাতনের ঘটনা সমাজে শোক ও উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। তদন্ত চলাকালীন সময়ে নিরাপত্তা বৃদ্ধি, দোষীদের আইনি শাস্তি, এবং সমাজে শান্তি বজায় রাখার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।
এম আর এম – ১৯১৮,Signalbd.com