বাংলাদেশ

নির্বাচন ঘিরে অপশক্তি মোকাবেলায় প্রস্তুত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

Advertisement

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যাতে স্থিতিশীল থাকে, সে জন্য সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়েও নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার এস এম সাজ্জাত আলী বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) রাজধানীর একটি পাঁচতারকা হোটেলে আয়োজিত ‘ট্রাফিক সচেতনতা ও নিরাপদ সড়ক’ বিষয়ক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন—

“নির্বাচন ঘিরে কোনো অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে চাইলে তা কঠোর হাতে দমন করা হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখন অনেক বেশি সক্ষম, আধুনিক প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ। আমরা যেকোনো অপশক্তিকে মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তুত আছি।”

তিনি আরও বলেন,

“গোপনে অনলাইনের মাধ্যমে কিছু গোষ্ঠী আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের কার্যক্রমে বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করছে। কেউ যদি নাশকতা, ভাঙচুর বা সহিংসতা করে, পুলিশ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে। কোনো ধরনের অবৈধ কর্মকাণ্ড বরদাশত করা হবে না।”

শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের লক্ষ্যে সমন্বিত প্রস্তুতি

ডিএমপি কমিশনার জানান, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ঘিরে শুধু রাজধানী নয়, সারাদেশে নিরাপত্তা পরিকল্পনা সাজানো হয়েছে। প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে থাকবে সিসিটিভি নজরদারি, মোবাইল টহল দল এবং গোয়েন্দা নজরদারি।

পুলিশ সদর দপ্তর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একযোগে নির্বাচনী নিরাপত্তা সেল গঠন করেছে। সেখানে প্রতিদিনই মাঠপর্যায়ের তথ্য বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন,

“আমরা চাই জনগণ যেন নির্ভয়ে ভোট দিতে পারে। নির্বাচন গণতন্ত্রের উৎসব, সেটি যেন উৎসবের পরিবেশেই অনুষ্ঠিত হয়।”

নির্বাচন কমিশনও ইতোমধ্যে বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় বৈঠক করেছে। নির্বাচনকালীন সময় সশস্ত্র বাহিনী, র‌্যাব, বিজিবি, আনসার, কোস্টগার্ড—সব বাহিনীর সমন্বিত টিম মাঠে থাকবে বলে জানানো হয়েছে।

ট্রাফিক ব্যবস্থায় যৌথ উদ্যোগ প্রয়োজন

অনুষ্ঠানে ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন,

“শুধু পুলিশের একার পক্ষে ট্রাফিক ব্যবস্থা উন্নত করা সম্ভব নয়। সড়ক ও ফুটপাত ব্যবস্থাপনা, পার্কিং নিয়ন্ত্রণ, গণপরিবহন শৃঙ্খলা—এসব ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানের আন্তরিকতা দরকার।”

তিনি মনে করেন, নাগরিক সচেতনতা বাড়াতে পারলে দুর্ঘটনা কমবে, সড়কে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। এ সময় তিনি চালক, পথচারী ও গাড়ির মালিকদের আইন মানার আহ্বান জানান।

নির্বাচন ঘিরে গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজধানী ও বড় শহরগুলোতে বিশেষ গোয়েন্দা নজরদারি চালানো হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেসব গোষ্ঠী মিথ্যা তথ্য বা গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করছে, তাদেরও পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।

একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, “দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখন অত্যাধুনিক নজরদারি প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। সাইবার মনিটরিং ইউনিট প্রতিনিয়ত অনলাইন কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করছে যাতে কেউ ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে না পারে।”

নির্বাচন কমিশনের আহ্বান: সবার অংশগ্রহণে উৎসবমুখর ভোট

অন্যদিকে, নির্বাচন কমিশনের (ইসি) এক সদস্য জানিয়েছেন, কমিশন চায় একটি অংশগ্রহণমূলক, শান্তিপূর্ণ ও অবাধ নির্বাচন। এজন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ চলছে।

তিনি বলেন, “জনগণ যেন ভয়ভীতিমুক্ত পরিবেশে ভোট দিতে পারেন, সেটাই আমাদের মূল লক্ষ্য। নির্বাচন কেবল রাজনৈতিক ইস্যু নয়, এটি গণতন্ত্রের ভিত্তি।”

ইসি সূত্রে জানা গেছে, ভোটার তালিকা হালনাগাদসহ ইভিএম প্রস্তুত, নিরাপত্তা পরিকল্পনা, এবং ভোটকেন্দ্রের সিসিটিভি স্থাপন—সব দিকেই দ্রুত অগ্রগতি হচ্ছে।

অতীত অভিজ্ঞতা ও ভবিষ্যৎ প্রস্তুতি

বাংলাদেশে অতীতের নির্বাচনগুলোতে কখনও কখনও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে কিছু এলাকায় সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা দেখা গিয়েছিল।

তবে এবারের নির্বাচনে সরকার ও প্রশাসন দুটোই জানিয়েছে, শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণ নিশ্চিত করতে তারা সর্বোচ্চ সতর্ক।

ডিএমপি কমিশনার বলেন,

“আমাদের সদস্যরা নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ পেয়েছে। কোনো প্রকার প্ররোচনা বা চাপের কাছে নতি স্বীকার করা হবে না। জনগণের নিরাপত্তা আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।”

নাগরিক প্রত্যাশা

রাজধানীর বাসিন্দা ও সাধারণ ভোটারদের মধ্যে দেখা গেছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। অনেকেই আশা করছেন, এবার হয়তো সত্যিই সহিংসতামুক্ত নির্বাচন সম্ভব হবে।

মিরপুরের বাসিন্দা সেলিনা আক্তার বলেন,

“আমরা চাই ভোট যেন শান্তিপূর্ণ হয়। আগের মতো ভয়ের মধ্যে ভোট দিতে চাই না।”

অন্যদিকে মতিঝিলের ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন,

“আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি সজাগ থাকে, তাহলে কেউই বিশৃঙ্খলা করতে পারবে না। এবার সাধারণ মানুষ শান্তিতে ভোট দিতে চায়।”

পুলিশের করণীয় ও জনসচেতনতা

পুলিশ বলছে, শুধু আইন প্রয়োগ নয়, জনগণের সহযোগিতাই তাদের সবচেয়ে বড় শক্তি। জনগণ যদি সন্দেহজনক কিছু দেখেন, সঙ্গে সঙ্গে নিকটস্থ থানায় বা ‘ডিএমপি কন্ট্রোল রুমে’ জানানোর অনুরোধ জানানো হয়েছে।

এছাড়া নির্বাচনের আগে ও চলাকালে পুলিশ সদস্যদের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের জন্য বিশেষ ছুটি স্থগিত রাখা হয়েছে।

ডিএমপি কমিশনার জানান, “আমাদের লক্ষ্য নিরাপদ, নিরপেক্ষ ও উৎসবমুখর নির্বাচন। এজন্য পুলিশ, র‌্যাব, ও অন্যান্য সংস্থার মধ্যে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ থাকবে।”

সাইবার নিরাপত্তা ও গুজব প্রতিরোধ

নির্বাচন ঘিরে অনলাইন গুজব, ভুয়া খবর বা উত্তেজনামূলক প্রচারণা প্রতিরোধে বিশেষ টিম কাজ করছে।

ডিএমপি’র সাইবার ক্রাইম ইউনিট জানিয়েছে, তারা ২৪ ঘণ্টা অনলাইন পর্যবেক্ষণ করছে। কেউ যদি বিভ্রান্তিকর পোস্ট বা সহিংসতার উস্কানি দেয়, দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ইউটিউব কনটেন্ট পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।

নির্বাচন কেবল রাজনীতির প্রতিযোগিতা নয়—এটি জাতির ভবিষ্যৎ নির্ধারণের এক গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। সেই প্রক্রিয়াকে সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও শান্তিপূর্ণ রাখতে যে ভূমিকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পালন করে, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ডিএমপি কমিশনার এস এম সাজ্জাত আলীর কথায়,

“বাংলাদেশ পুলিশ জনগণের পাশে আছে, এবং থাকবে। গণতন্ত্রের স্বার্থে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনের জন্য আমরা সর্বদা প্রস্তুত।”

MAH – 13447 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button