
সরকারি খাতের কর্মকর্তাদের জন্য নতুন জাতীয় বেতন কাঠামো প্রণয়নের পাশাপাশি এবার বেসরকারি খাতের চাকরিজীবীরাও সুখবর পাবেন। ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) মহাসচিব মো. আলমগীর জানান, বেসরকারি খাতের বেতন কাঠামো সংক্রান্ত প্রস্তাবনা শিগগিরই জাতীয় বেতন কমিশনে জমা দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, বেসরকারি খাতের বেতন নির্ধারণ মূলত মালিক ও কর্মচারীর পারস্পরিক বোঝাপড়ার ওপর নির্ভর করে। তবে ন্যূনতম বেতন চার সদস্যের পরিবার চালানোর যোগ্যতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া উচিত।
বেসরকারি খাতের বর্তমান বেতন পরিস্থিতি
এফবিসিসিআই মহাসচিব বলেন, “প্রাইভেট সেক্টর সর্বদা কম খরচে বেশি উৎপাদন চায়। তবে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে কর্মীদের ন্যূনতম জীবনের নিশ্চয়তা দেওয়া জরুরি।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেশে বেশিরভাগ দেশীয় কোম্পানিতে বেতন কাঠামো এখনও তুলনামূলকভাবে দুর্বল।
তিনি বেতন বৃদ্ধির কম হারকে মূলত চাকরিপ্রার্থীর উচ্চ সংখ্যার সঙ্গে যুক্ত করেছেন। কোম্পানিগুলো সহজেই বিকল্প কর্মী নিয়োগ দিতে পারে, ফলে বিদ্যমান কর্মীরা চাপের মধ্যে থাকে। এ ছাড়া পর্যাপ্ত অডিট ও শ্রমিক অধিকার রক্ষার তদারকির অভাবও এই সমস্যার অন্যতম কারণ।
নতুন বেতন কাঠামোর লক্ষ্য ও প্রস্তাবনা
মো. আলমগীর জানান, নতুন বেতন কাঠামোতে ন্যূনতম বেতন ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকার মধ্যে নির্ধারণ করা হবে। এর মাধ্যমে একজন কর্মজীবী বিলাসিতা না করেও সম্মানজনক ও স্থিতিশীল জীবনযাপন করতে পারবে। বেতন নির্ধারণে শুধু বাজার চাহিদা নয়, মূল্যস্ফীতির প্রভাবও বিবেচনায় নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, বিদেশি কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানে বেতন কাঠামো তুলনামূলকভাবে ভালো হলেও দেশের বেশিরভাগ কোম্পানিতে তা এখনও সীমিত। তাই দেশের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাঠামো অনুযায়ী একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ন্যায্য বেতন কাঠামো প্রণয়ন করা গুরুত্বপূর্ণ।
প্রভাব ও সুবিধা
নতুন বেতন কাঠামোর মাধ্যমে বেসরকারি চাকরিজীবীরা আর্থিক স্থিতিশীলতা এবং কর্মসংস্থানের নিরাপত্তা পাবেন। এছাড়া, বেতন সমন্বয়ের মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।
অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, নতুন কাঠামো প্রণয়নের ফলে শ্রম বাজারে ন্যায্যতা বৃদ্ধি পাবে এবং কর্মীদের প্রেরণা বাড়বে। এর ফলে প্রতিষ্ঠানগুলোও কর্মী ধরে রাখার ক্ষেত্রে লাভবান হবে।
বিশ্লেষণ ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বেতন কাঠামোতে অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতিমালা প্রয়োগ করলে সরকারী-বেসরকারি খাতের মধ্যে বৈষম্য হ্রাস পাবে। মো. আলমগীর আশাবাদী যে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই কাঠামো কার্যকরভাবে প্রয়োগ হলে বেসরকারি খাতের কর্মীদের আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য বৃদ্ধি পাবে।
তিনি বলেন, “নাগরিকদের মানবিক মর্যাদা রক্ষা এবং ন্যায্য জীবিকার নিশ্চয়তার জন্য একটি টেকসই বেতন কাঠামো জরুরি। অন্যথায় বৈষম্য ও দুর্নীতি আরও বৃদ্ধি পাবে।”
সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব
নতুন বেতন কাঠামোর বাস্তবায়ন কেবল বেসরকারি চাকরিজীবীরাই নয়, সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতিকেও সাপোর্ট করবে। উচ্চতর বেতন কর্মীদের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে এবং স্থানীয় বাজারে অর্থনীতির চাকা ঘুরতে সাহায্য করবে।
এছাড়া, কর্মীরা যদি ন্যায্য ও স্বচ্ছ বেতন কাঠামোর অধীনে কাজ করতে পারেন, তবে কর্মদক্ষতা ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাবে।
নতুন বেতন কাঠামোর মাধ্যমে বেসরকারি খাতের চাকরিজীবীরা আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য এবং মানবিক মর্যাদা অর্জন করতে পারবে। সরকারের উদ্যোগ ও বেসরকারি সংস্থার সমন্বয়ের মাধ্যমে এটি বাস্তবায়িত হলে দেশে ন্যায্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বেতন পরিবেশ নিশ্চিত হবে।
এম আর এম – ১৯০০,Signalbd.com