বাংলাদেশ

শপথ নিলেন পিএসসির নতুন সদস্য একেএম আফতাব হোসেন প্রামাণিক

Advertisement

বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) নবনিযুক্ত সদস্য একেএম আফতাব হোসেন প্রামাণিক শপথ গ্রহণ করেছেন।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত এক আনুষ্ঠানিক আয়োজনে তিনি শপথ নেন।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ নবনিযুক্ত এই সদস্যকে শপথ বাক্য পাঠ করান।

শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানটি হয় সুপ্রিম কোর্টের সম্মানিত জাজেস লাউঞ্জে, যেখানে উপস্থিত ছিলেন পিএসসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোবাশ্বের মোনেম, সদস্য অধ্যাপক ড. ফেরদৌস আরফিনা ওসমান, কমিশন সচিবালয়ের সচিব মো. আব্দুর রহমান তরফদার, এবং পিএসসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

এর মধ্য দিয়ে পিএসসির মোট সদস্য সংখ্যা দাঁড়াল ১৯ জনে।

পিএসসি কী এবং এর ভূমিকা

বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (Public Service Commission – PSC) একটি সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান, যা দেশের সরকারি চাকরিতে নিয়োগ ও পদোন্নতির স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার দায়িত্বে রয়েছে।
বাংলাদেশ সংবিধানের ১৩৭ থেকে ১৪১ অনুচ্ছেদ পর্যন্ত এই কমিশনের ক্ষমতা ও দায়িত্ব নির্ধারিত আছে।

পিএসসি মূলত সরকারি চাকরির বিসিএস পরীক্ষা, নন-ক্যাডার নিয়োগ, এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার নিয়োগ প্রক্রিয়া তদারকির দায়িত্ব পালন করে থাকে।

প্রতিষ্ঠানটির অন্যতম মূল লক্ষ্য হচ্ছে— সরকারি প্রশাসনে যোগ্য, দক্ষ ও মেধাবী মানবসম্পদ নিয়োগ নিশ্চিত করা, যাতে রাষ্ট্রযন্ত্রের কার্যক্রম আরও গতিশীল হয়।

নতুন সদস্য একেএম আফতাব হোসেন প্রামাণিক সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

একেএম আফতাব হোসেন প্রামাণিক একজন অভিজ্ঞ প্রশাসক ও শিক্ষানুরাগী হিসেবে পরিচিত।
তিনি দীর্ঘ কর্মজীবনে সরকারি প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।
সরকারি সেবার প্রতি তার নিষ্ঠা, দায়িত্ববোধ ও সততার জন্য সহকর্মী মহলে তিনি ব্যাপকভাবে প্রশংসিত।

তিনি বিশ্বাস করেন— পিএসসি দেশের মানবসম্পদ উন্নয়ন ও প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান।
শপথ গ্রহণের পর তিনি বলেন,

“আমি পিএসসিকে আরও আধুনিক, প্রযুক্তিনির্ভর ও স্বচ্ছ করতে কাজ করতে চাই। দেশের তরুণ প্রজন্ম যাতে সরকারি চাকরিতে যোগদানের ক্ষেত্রে আস্থা পায়, সেটিই হবে আমার প্রথম অঙ্গীকার।”

শপথ অনুষ্ঠানের পরিবেশ ও তাৎপর্য

সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে ছিল এক শান্ত, মর্যাদাপূর্ণ পরিবেশ।
নবনিযুক্ত সদস্যের প্রতি সহকর্মীদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানানো হয়।

পিএসসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোবাশ্বের মোনেম বলেন—

“পিএসসির দায়িত্ব অত্যন্ত সংবেদনশীল। নতুন সদস্যের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা কমিশনের কার্যক্রমকে আরও শক্তিশালী করবে বলে আমরা আশা করছি।”

তিনি আরও বলেন, কমিশনের প্রতিটি সিদ্ধান্ত যেন স্বচ্ছতা ও ন্যায়ের মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হয়, সেটিই পিএসসির অঙ্গীকার।

পিএসসির সদস্য নিয়োগের প্রক্রিয়া

বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী, পিএসসির চেয়ারম্যান ও সদস্যদের নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি।
তারা নির্দিষ্ট মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেন এবং কমিশনের স্বাধীনতা সংবিধান দ্বারা সুরক্ষিত।

সদস্যদের নিয়োগের ক্ষেত্রে সাধারণত প্রশাসন, শিক্ষা, সামরিক বা সরকারি ব্যবস্থাপনায় অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।
এই বৈচিত্র্যময় পেশাগত পটভূমি পিএসসির সিদ্ধান্ত গ্রহণে আরও ভারসাম্য আনে।

পিএসসির বর্তমান কাঠামো ও কাজের অগ্রগতি

বর্তমানে পিএসসি চেয়ারম্যানসহ ১৯ জন সদস্যের সমন্বয়ে পরিচালিত হচ্ছে।
কমিশনের অধীনে রয়েছে একটি সচিবালয়, যা প্রতিদিনের প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পিএসসি ডিজিটাল ব্যবস্থাপনায় বড় অগ্রগতি অর্জন করেছে।
বিসিএস পরীক্ষার আবেদন, ফি পরিশোধ, ও ফলাফল প্রকাশ এখন সম্পূর্ণ অনলাইনে সম্পন্ন হয়।

এছাড়া, দুর্নীতি বা অনিয়ম প্রতিরোধে ই-মনিটরিং ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে, যা পরীক্ষার্থীদের মধ্যে আস্থা তৈরি করেছে।

পিএসসির সামনে বর্তমান চ্যালেঞ্জ

যদিও পিএসসি স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়া বজায় রাখতে সচেষ্ট, তবুও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে—

  • সময়মতো নিয়োগ কার্যক্রম শেষ করা
  • নন-ক্যাডার পদের পরীক্ষাগুলোকে আরও দ্রুত ও আধুনিক করা
  • আবেদনকারীদের অভিযোগের দ্রুত নিষ্পত্তি
  • পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের আশঙ্কা রোধে নিরাপত্তা আরও জোরদার করা

নতুন সদস্য একেএম আফতাব হোসেন প্রামাণিক দায়িত্ব গ্রহণের পর এই বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেখার প্রতিশ্রুতি দেন।

পিএসসির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

কমিশনের নতুন নেতৃত্ব তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে।
পিএসসি এখন একটি “ডিজিটাল নিয়োগ কমিশন” হিসেবে নিজেদের রূপান্তর করতে চায়।

আগামী দিনে পরিকল্পনায় রয়েছে—

  • অনলাইন সাক্ষাৎকার ব্যবস্থা চালু করা
  • ডিজিটাল ভেরিফিকেশন সিস্টেম
  • অভিযোগ ব্যবস্থাপনা প্ল্যাটফর্ম উন্নয়ন
  • বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রশাসন বিভাগের সাথে সমন্বয় বৃদ্ধি

তরুণ প্রজন্মের প্রত্যাশা

বাংলাদেশের তরুণ সমাজের কাছে সরকারি চাকরি এখনও সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত কর্মক্ষেত্র।
প্রতি বছর প্রায় ৫ লাখেরও বেশি প্রার্থী বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন।

তারা চান— পিএসসি আরও দ্রুত, নিরপেক্ষ ও প্রযুক্তিনির্ভর হোক।
নতুন সদস্যের দায়িত্বগ্রহণ তরুণদের মাঝে নতুন আশার সঞ্চার করেছে।

শপথ গ্রহণের গুরুত্ব

রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের শপথ গ্রহণ শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়; এটি দায়িত্ব, সততা ও জনগণের প্রতি অঙ্গীকারের প্রতীক।
নতুন সদস্যদের মাধ্যমে পিএসসি আরও শক্তিশালী ও গতিশীল হবে— এমনটাই আশা করছেন প্রশাসন বিশেষজ্ঞরা।

প্রশাসন বিশেষজ্ঞদের মতামত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম বলেন,

“পিএসসি হচ্ছে রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের হৃদপিণ্ড। এখানে অভিজ্ঞ ও সৎ সদস্য যোগ হলে এর কর্মদক্ষতা বহুগুণে বাড়ে।”

তিনি আরও বলেন, প্রযুক্তিনির্ভর নিয়োগ ব্যবস্থাই এখন সময়ের দাবি।

সরকারের শুভেচ্ছা ও প্রত্যাশা

সরকারি সূত্রে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকেও নতুন সদস্যকে অভিনন্দন জানানো হয়েছে।
সরকার আশা করছে, তার নেতৃত্বে পিএসসির কাজের গতি আরও বৃদ্ধি পাবে এবং নিয়োগ প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ হবে।

নতুন সদস্য একেএম আফতাব হোসেন প্রামাণিকের যোগদান পিএসসির কার্যক্রমে নতুন প্রাণ সঞ্চার করবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন দেশের প্রশাসনিক মেধা নির্বাচনের মূল প্রতিষ্ঠান হিসেবে সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসেছে।
তরুণ প্রজন্মের স্বপ্ন, দেশের উন্নয়ন আর প্রশাসনিক কাঠামোর ভিত্তি— সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু এই কমিশন।

অতএব, নতুন সদস্যের শপথ শুধু একটি আনুষ্ঠানিক ঘটনা নয়, বরং এটি বাংলাদেশের প্রশাসনিক ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা।

MAH – 13431 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button