
নেপালের রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে নতুন নেতা নির্বাচনের দাবিতে এবার আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে র্যাপার এবং স্বাধীন রাজনৈতিক নেতা বালেন্দ্র শাহ। সাবেক প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি পদত্যাগের পর দেশজুড়ে বিক্ষোভ ও উত্তেজনার মধ্যেই জনমত তাকে দেশের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাচ্ছে।
বালেন্দ্র শাহ: নতুন নেতার সম্ভাবনা
বালেন্দ্র শাহ কাঠমান্ডুর মেয়র এবং এক পরিচিত স্বতন্ত্র রাজনৈতিক নেতা। শুধু রাজনীতিতেই নয়, তিনি একজন র্যাপার, সঙ্গীতশিল্পী এবং কবি হিসেবেও জনপ্রিয়। তাঁর এই বহুমুখী পরিচয় এবং নাগরিক উদ্যোগে সক্রিয় ভূমিকা তাকে জনমতের মুখ্য প্রার্থী হিসেবে তুলে ধরেছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী অলির পদত্যাগের আগে জনগণ ধারাবাহিকভাবে বিক্ষোভে নেমেছিল। পার্লামেন্ট ভবন, প্রেসিডেন্ট ভবন এবং ওলির বাসভবনের আশপাশে আগুন ও ভাঙচুর চালানো হয়। পুলিশ ও সেনাবাহিনী বিক্ষোভকারীদের নিয়ন্ত্রণে আনতে চেষ্টা করলেও কিছু স্থানে পরিস্থিতি এখনো উত্তেজনাপূর্ণ।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
বালেন্দ্র শাহ জন্মগ্রহণ করেন ১৯৯০ সালের ২৭ এপ্রিল, কাঠমান্ডুতে। তিনি মৈথিল-মধেশি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এবং সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক ও স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। ২০২২ সালে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে কাঠমান্ডুর মেয়র নির্বাচনে বিজয়ী হন।
মেয়র হিসেবে বালেন্দ্র শাহ নগর পরিষদের বৈঠকগুলো সরাসরি সম্প্রচার করেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যকর করেন এবং অবৈধ নির্মাণ উচ্ছেদে কার্যকর পদক্ষেপ নেন। এই উদ্যোগগুলোর কারণে তিনি সাধারণ জনগণের মধ্যে জনপ্রিয় এবং বিশ্বাসযোগ্য নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন।
সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব
রাজনীতিতে প্রবেশের পাশাপাশি বালেন্দ্র শাহ হিপ-হপ ও র্যাপ সঙ্গীতের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছেন। তার গান এবং কবিতা সামাজিক এবং রাজনৈতিক সচেতনতা বাড়াতে সহায়ক হিসেবে বিবেচিত। এই কারণে তরুণরা তাকে নতুন নেতৃত্বের সম্ভাব্য প্রতীক হিসেবে দেখছেন।
তবে তার কিছু উদ্যোগ বিতর্কের কারণও হয়েছে। নদীর তীরবর্তী অবৈধ দখল উচ্ছেদ এবং ফেডারেল সরকারের সঙ্গে দ্বন্দ্ব কিছু অংশের মধ্যে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
জনমত ও বিক্ষোভকারীর দৃষ্টি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী অলির পদত্যাগের পর বিক্ষোভকারীরা বালেন্দ্র শাহকে নতুন নেতা হিসেবে দেখতে চাইছে। তারা মনে করছে, তার আধুনিক প্রশাসনিক নীতি এবং স্বচ্ছ নগর ব্যবস্থাপনা নেপালের রাজনৈতিক অস্থিরতা কমাতে সাহায্য করবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য জনগণ এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে সমন্বিতভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এককভাবে জনপ্রিয়তা সবসময় কার্যকর নেতৃত্বের নিশ্চয়তা দেয় না, তবে তা রাজনৈতিক সম্ভাবনার বড় সূচক হতে পারে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
নেপালের রাজনৈতিক অস্থিরতা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। প্রতিবেশী দেশ ভারত এবং চীন নেপালের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে সতর্কতা প্রকাশ করেছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোও শান্তিপূর্ণ সমাধান এবং সংলাপের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের আহ্বান জানিয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বালেন্দ্র শাহর সম্ভাব্য নেতৃত্ব আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে একটি ইতিবাচক বার্তা হতে পারে, যদি তিনি শান্তিপূর্ণ এবং সংহত সরকার গঠনে সফল হন।
সংক্ষিপ্তসার
নেপালের রাজনৈতিক অস্থিরতার মাঝে বালেন্দ্র শাহর সম্ভাব্য নেতৃত্ব দেশের জন্য নতুন দিক নির্দেশনা হতে পারে। তবে রাজনৈতিক সমাধান এবং স্থিতিশীলতার জন্য শুধুমাত্র জনপ্রিয়তা যথেষ্ট নয়। জনমত, রাজনৈতিক দল এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমন্বয়ই হবে ভবিষ্যতের স্থিতিশীল নেপালের মূল চাবিকাঠি।
এম আর এম – ১২৬৬,Signalbd.com