প্রযুক্তি

গোপনীয়তা লঙ্ঘনের অভিযোগে গুগলকে ৫১ হাজার কোটি টাকা জরিমানা

Advertisement

গুগল—প্রযুক্তির রাজা না প্রাইভেসির শত্রু?

গুগল আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। গুগল সার্চ, জিমেইল, ইউটিউব, গুগল ম্যাপ বা গুগল ক্রোম—প্রতিদিনের ইন্টারনেট ব্যবহারের অনেকাংশই এই সেবার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। তবে যতই প্রযুক্তি উন্নত হোক, একটি প্রশ্ন সবসময় থেকেই যায়—আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য কতটা সুরক্ষিত? সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা আবারও সেই প্রশ্নকে সামনে নিয়ে এসেছে।

ব্যবহারকারীর গোপনীয়তা লঙ্ঘনের অভিযোগে গুগলকে বিপুল পরিমাণ অর্থ জরিমানা করেছে মার্কিন আদালত। এই রায় শুধু গুগলের জন্য নয়, সমগ্র প্রযুক্তি বিশ্বের জন্য বড় একটি বার্তা বহন করছে।

কেন গুগলকে জরিমানা করা হলো?

অভিযোগ ছিল, গুগল ব্যবহারকারীর লোকেশন ট্র্যাকিং অপশন বন্ধ রাখার পরও তাঁদের তথ্য সংগ্রহ করত। শুধু তাই নয়, গুগল নিজের প্ল্যাটফর্ম ছাড়াও তৃতীয় পক্ষের অ্যাপ যেমন উবার, লিফট, আমাজন, আলিবাবা, ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম থেকেও তথ্য সংগ্রহ করত।

২০১৮ সালে একাধিক মার্কিন অঙ্গরাজ্যে তদন্ত শুরু হয়। পরবর্তীতে ২০২০ সালে প্রায় ৯ কোটি ৮০ লাখ ব্যবহারকারী ও ১৭ কোটি ৪০ লাখ ডিভাইসের পক্ষ থেকে গুগলের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। অভিযোগ ছিল, ব্যবহারকারীরা যখন লোকেশন হিস্ট্রি বা ট্র্যাকিং বন্ধ করতেন, তখনও গুগল তাঁদের গতিবিধি নজরদারি করত।

জরিমানার পরিমাণ কত?

মামলার শুনানি শেষে যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত গুগলকে ৪২৫ মিলিয়ন ডলার অর্থাৎ প্রায় ৫১ হাজার কোটি টাকা জরিমানা করার নির্দেশ দেয়। আদালতের মতে, গুগল ব্যবহারকারীর অনুমতি ছাড়া তথ্য সংগ্রহ করে গোপনীয়তা লঙ্ঘন করেছে।

অভিযোগকারী পক্ষের আইনজীবী জানিয়েছেন, এই ঘটনায় তাঁদের প্রায় ১১ হাজার ডলারের বিজ্ঞাপনী বাজেট নষ্ট হয়েছে। এছাড়াও অনেক ক্লায়েন্টও হারিয়েছেন তারা।

গুগলের প্রতিক্রিয়া কী?

গুগল জানিয়েছে, তারা এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবে। প্রতিষ্ঠানটির দাবি, তাদের প্রাইভেসি টুল ব্যবহারকারীদের নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং ব্যবহারকারী যখন সেটি বন্ধ করে, তখন গুগল কোনো তথ্য সংরক্ষণ করে না।

তবে আদালত বলেছে, গুগল তিনটি অভিযোগের মধ্যে দুটি ক্ষেত্রে দোষী প্রমাণিত হয়েছে। যদিও রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে, গুগল ইচ্ছাকৃতভাবে বা খারাপ উদ্দেশ্যে এ কাজ করেনি।

গুগলের বিরুদ্ধে অন্য মামলা

এই রায়ের পাশাপাশি গুগলের বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতা-বিষয়ক আরেকটি বড় মামলা চলছে। আদালত জানিয়েছে, গুগলকে ক্রোম ব্রাউজার বিক্রি করতে হবে না, তবে তারা যেন একচেটিয়াভাবে কোনো চুক্তি করতে না পারে। এছাড়া প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে ডেটা শেয়ার করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া বিজ্ঞাপন প্রযুক্তি ক্ষেত্রে গুগলের একচেটিয়া আধিপত্য নিয়ে চলতি মাসেই নতুন মামলার শুনানি শুরু হবে।

প্রযুক্তি বিশ্বে এর প্রভাব

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই রায় শুধুমাত্র গুগলের জন্য নয়, পুরো প্রযুক্তি খাতের জন্য সতর্কবার্তা। গোপনীয়তা এখন একটি বড় ইস্যু এবং ব্যবহারকারীর আস্থা ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন টিকে থাকতে পারে না।

ইউরোপের জিডিপিআর আইন এবং ভারতের ডেটা প্রোটেকশন বিলের মতো উদ্যোগগুলো দেখাচ্ছে, বিশ্বব্যাপী ডেটা সুরক্ষা আইন আরও কঠোর হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বড় প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বচ্ছ নীতি গ্রহণ করতে হবে।

ব্যবহারকারীর করণীয়

  • প্রাইভেসি সেটিংস নিয়মিত পরীক্ষা করুন
  • অপ্রয়োজনীয় অ্যাপের অনুমতি সীমিত করুন
  • ভিপিএন ব্যবহার করুন
  • বিকল্প ব্রাউজার ও সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার বিবেচনা করুন

গুগলের এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করে, ডিজিটাল যুগে গোপনীয়তা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। প্রযুক্তি যত উন্নত হবে, ডেটা সুরক্ষার গুরুত্ব তত বাড়বে। এখন সময় এসেছে প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বচ্ছ নীতি এবং ব্যবহারকারীদের সচেতনতার।

MAH – 12710,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button