
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সদস্য জুবায়েদ হোসাইন হত্যার ঘটনায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে মাহির রহমানসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে। সোমবার (২০ অক্টোবর) রাতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মল্লিক আহসান উদ্দিন সামী এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
ঘটনার প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে, রবিবার (১৯ অক্টোবর) পুরান ঢাকার আরমানিটোলার নূরবক্স লেনের ‘রৌশান ভিলা’-এ এক ছাত্রীকে প্রাইভেট পড়াতে গিয়ে জুবায়েদকে হত্যা করা হয়। পুলিশের মতে, হত্যাকাণ্ডের পেছনে ছাত্রীর প্রেমঘটিত কারণ প্রধান ভূমিকা রেখেছে।
পুলিশী জানানো বিস্তারিত
বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম সোমবার সকালে ঘটনার প্রাথমিক তথ্য সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন। তিনি জানান, হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত মাহির রহমান এবং তার বন্ধু নাফিস জড়িত।
ওসি বলেন, “মাহির রহমান এবং ওই ছাত্রীর মধ্যে প্রায় নয় বছরের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সম্প্রতি তাদের সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর ছাত্রীটি জুবায়েদকে পছন্দ করেন। এই তথ্য জানার পর মাহির তার রাগ-ক্ষোভের ক্রোধে জুবায়েদকে হত্যা করে।”
পুলিশ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্তরা হত্যাকাণ্ডের স্বীকারোক্তি দিয়েছে। এছাড়া তারা হত্যার জন্য ব্যবহৃত অস্ত্র ও অন্যান্য প্রমাণ সরবরাহ করেছে।
হত্যাকাণ্ডের পেছনের প্রেক্ষাপট
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসংগঠন এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জুবায়েদ শাখা ছাত্রদলের সক্রিয় নেতা ছিলেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ও ছাত্রসংগঠনের মধ্যে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতেন।
ছাত্র সমাজের সূত্রে জানা যায়, মাহির রহমান এবং নিহত ছাত্রীর মধ্যে ছোটবেলা থেকে পরিচয় ছিল। দীর্ঘদিনের সম্পর্কের টানাপোড়েন এবং প্রেমঘটিত দ্বন্দ্বই শেষ পর্যন্ত হত্যাকাণ্ডে রূপ নেয়।
গ্রেফতার অভিযান ও পুলিশি পদক্ষেপ
ডিএমপি ও বংশাল থানার যৌথ অভিযানে মাহির রহমান, নাফিস এবং আরও একজন সহযোগীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা ও হত্যার অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, তদন্ত আরও এগিয়ে নিয়ে গিয়ে সকল প্রাসঙ্গিক তথ্য ও সাক্ষীর বিবৃতি সংগ্রহ করা হচ্ছে। এছাড়া হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যক্তিদেরও শনাক্ত করা হবে।
ঘটনার প্রভাব ও সমাজের প্রতিক্রিয়া
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্থানীয় ছাত্রসংগঠনগুলো হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। একাডেমিক এবং সামাজিক মহল থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়নের দাবি উঠেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রেমঘটিত ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব কখনও কখনও মারাত্মক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। তাই শিক্ষার্থীদের মনস্তাত্ত্বিক সহায়তা এবং মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবার ওপর গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
আইন ও বিচার প্রক্রিয়া
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে, গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার কার্যক্রম নিশ্চিত করা হবে। পুলিশের পরিকল্পনা অনুযায়ী, হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী এবং প্রমাণ সংগ্রহের মাধ্যমে মামলাটি দ্রুত আদালতে প্রেরণ করা হবে।
আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর চারপাশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করা উচিত। শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যথাযথ পদক্ষেপ অপরিহার্য।
সমাজ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দৃষ্টিভঙ্গি
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছে। তারা বলেছে, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা এবং মানসিক সহায়তা নিশ্চিত করা বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব।
শিক্ষার্থীরা সামাজিক মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দ্রুত ও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।
জবি শিক্ষার্থী জুবায়েদ হত্যার ঘটনায় মাহিরসহ তিনজন গ্রেফতার হলেও পুরো ঘটনার প্রেক্ষাপট এখনও তদন্তাধীন। এটি শিক্ষার্থী সমাজে নিরাপত্তা ও মানসিক সহায়তার গুরুত্ব পুনরায় আলোচনায় এনেছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পরিবার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে একসাথে কাজ করতে হবে।
এম আর এম – ১৮৭২,Signalbd.com