
বাংলাদেশে বসেই আন্তর্জাতিক পর্নোগ্রাফি ওয়েবসাইটে নিয়মিত কনটেন্ট তৈরি ও প্রকাশের অভিযোগে বান্দরবান থেকে এক দম্পতিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সিআইডি জানিয়েছে, গ্রেপ্তারকৃত যুগল শুধু নিজেরাই নয়, অন্যদেরও এই অশ্লীল কনটেন্ট তৈরিতে উৎসাহিত করতেন।
সিআইডির ঘোষণায় বিস্তারিত
সোমবার প্রেস ব্রিফিংয়ে সিআইডি জানিয়েছে, দম্পতিটি ২০২৪ সাল থেকে বাংলাদেশের টপ মডেল হিসেবে পরিচিত হয়ে নীল ছবির কনটেন্ট তৈরি ও আন্তর্জাতিক সাইটে প্রকাশ করছিল। সিআইডি বলেছে, তাদের বিরুদ্ধে শুধু সাইবার অপরাধ নয়, মানি লন্ডারিং আইনের আওতায়ও মামলা হবে।
বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান বলেন, “এই যুগল বিদেশি ওয়েবসাইটে নিয়মিত পর্ন কনটেন্ট আপলোড করত। তাদের পরিচালিত চ্যানেলটি বিশ্বের শীর্ষপর্যায়ের পর্ন সাইটের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। তারা শুধু নিজেদের নয়, অন্যদেরও এই চক্রে যুক্ত করার অভিযোগে জড়িত।”
গ্রেপ্তারের পেছনের ঘটনা
সিআইডি সূত্রে জানা যায়, ভোরে বান্দরবান থেকে অভিযান চালিয়ে দম্পতিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তদন্তে উঠে এসেছে, দম্পতিটি দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে এসে নিজেদের অবস্থান তৈরি করেছিল। তারা নিজস্ব ভিডিও ধারণ, সম্পাদনা ও আপলোড করত, এবং আন্তর্জাতিক ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিপুল অর্থ উপার্জন করেছিল।
তাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারও তদন্তে উঠে এসেছে। তারা নিজেদের ‘মডেল’ হিসেবে পরিচয় দিত এবং নতুনদেরও যুক্ত করত, যার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পর্নোগ্রাফি সাইট থেকে মুনাফা অর্জন হতো।
বাংলাদেশে প্রভাব ও আইনি পরিপ্রেক্ষিত
বাংলাদেশে পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১২ অনুযায়ী, অশ্লীল কনটেন্ট তৈরি ও বিতরণ একটি ফৌজদারি অপরাধ। বিশেষ করে প্রকাশ্যে চেহারা দেখিয়ে কনটেন্ট তৈরি করা বাংলাদেশের ধর্মীয় ও সামাজিক পরিবেশের জন্য মারাত্মক অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়।
সিআইডি জানিয়েছে, শুধু দম্পতিই নয়, যারা এই অন্ধকার জগতে প্রবেশ করেছে তাদেরকেও নজর রাখা হচ্ছে। অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ জব্দ করার প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে।
আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে কার্যক্রম
তদন্তে দেখা গেছে, যুগলটি একাধিক আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে কনটেন্ট প্রকাশ করত। টেলিগ্রাম চ্যানেলও খোলা হয়েছিল, যেখানে কয়েক হাজার সদস্য সক্রিয় ছিল। সেখানে নতুন ভিডিওর লিঙ্ক এবং আয়ের স্ক্রিনশট শেয়ার করা হতো।
গবেষণামূলক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এক বছরের মধ্যে তারা ১১০টিরও বেশি ভিডিও প্রকাশ করেছে এবং উল্লেখযোগ্য দর্শক ও অনুসারী সংগ্রহ করেছে।
নতুনদের প্রলুব্ধ করার কৌশল
তদন্তে উঠে এসেছে, নতুনদের এই ইন্ডাস্ট্রিতে যুক্ত করার প্রলুব্ধকরণ করা হতো। তাদেরকে বলা হতো, “নতুন ক্রিয়েটর যুক্ত করুন, অর্থ উপার্জনের সুযোগ পাবেন।” এর ফলে বাংলাদেশে বসেই একটি পর্ন ভিডিও নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে।
বিশেষজ্ঞদের মন্তব্য
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ না নিলে দেশের যুবসমাজকে বিপজ্জনক পথে প্রলুব্ধ করা সহজ হয়ে যাবে। সাইবার অপরাধ বিশেষজ্ঞরা আরও উল্লেখ করেছেন, আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে এমন কর্মকাণ্ড দ্রুত শনাক্ত ও নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত জরুরি।
সিআইডি এই ধরনের অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ ধরনের অভিযান ভবিষ্যতে অপরাধীদের জন্য সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করবে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, সামাজিক সচেতনতা এবং অনলাইন কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণের জন্য আরও কার্যকর আইন প্রণয়ন করা প্রয়োজন।
এম আর এম – ১৮৫৮,Signalbd.com