বাংলাদেশ

ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা ৬০ হাজার ছুঁই ছুঁই, বিশেষজ্ঞরা সতর্ক

Advertisement

 দেশে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েই চলেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী চলতি বছরে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা ছুঁই ছুঁই ৬০ হাজার, মৃত্যু ২৪৫ জনে পৌঁছেছে।

সর্বশেষ পরিস্থিতি

সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৯৫০ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ সময় বরিশাল বিভাগে একজনের মৃত্যু হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রাত্যহিক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। চলতি বছর দেশে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা এখন পর্যন্ত ৫৯ হাজার ৮৪৯ জনে পৌঁছেছে। মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৪৫ জনে।

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের হাসপাতালগুলোতে ২৪ ঘণ্টায় ২৮৫ জন ভর্তি হয়েছেন। দুই সিটির বাইরে ঢাকা বিভাগের অন্যান্য এলাকায় আক্রান্তের সংখ্যা ১৩১ জন। বরিশাল বিভাগে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ১৯১ জন। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে ৬৪ শতাংশই পুরুষ। ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৬ থেকে ৩০ বছর বয়সীদের।

ডেঙ্গুর প্রভাব ও আশঙ্কা

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, এই হারে সংক্রমণ বৃদ্ধি পেলে আগামী নভেম্বর বা শীতের মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও তীব্র হতে পারে। এমনকি এর প্রভাব পরবর্তী বছরেও থাকতে পারে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বে–নজীর আহমেদ বলেন, “ডেঙ্গুতে মৃত্যু বা সংক্রমণ কমছে না। এ মাসের শেষ দিকে বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে, যা মশার বংশবৃদ্ধি বাড়াবে এবং রোগীর সংখ্যা তত বেশি হতে পারে।”

চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে সর্বাধিক সংক্রমণ ও মৃত্যু দেখা গিয়েছিল। তবে অক্টোবরেও সংক্রমণ আগের মাসের চেয়ে বেশি। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, সঠিক পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।

ডেঙ্গুর কারণ ও বিস্তার

ডেঙ্গু রোগের প্রধান বাহক হলো এডিস মশা। শীতের আগে বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতা মশার প্রজনন বাড়ায়। বিশেষ করে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও বরিশাল অঞ্চলে জলাবদ্ধতা এবং আবর্জনার কারণে মশার বিস্তার বেশি দেখা যায়।

জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, ঢাকা শহরের বাইরে ডেঙ্গুর বিস্তার নিয়ন্ত্রণে সরকারের কার্যক্রম খুব সীমিত। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা স্থানীয় সরকার থেকে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় সংক্রমণ আরও ছড়িয়ে পড়ছে।

আক্রান্তদের প্রোফাইল

নতুন আক্রান্তদের মধ্যে ১৬ থেকে ৩০ বছর বয়সী যুবকরা সর্বাধিক। পুরুষরা আক্রান্তের মধ্যে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ। এটি প্রমাণ করে যে কাজের জায়গা বা বাইরে চলাচলের ফলে সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি।

ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপর চাপ সৃষ্টি করছে। বিশেষজ্ঞরা দ্রুত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন।

প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

ডেঙ্গু প্রতিরোধে সাধারণ মানুষকে কিছু নিয়ম মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

  • বাড়ির চারপাশে জলাবদ্ধতা না রাখা
  • পুকুর বা টবে পানি স্থির না রাখতে বলা
  • মশা দমন স্প্রে ও মশারি ব্যবহার
  • সচেতনতা বৃদ্ধি ও ডেঙ্গু সম্পর্কিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা

সরকারকে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে, বিশেষ করে ঢাকার বাইরে যেখানে সংক্রমণ তীব্র।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

অধ্যাপক বে–নজীর আহমেদ বলেন, “ডেঙ্গু ঢাকার বাইরে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। এটি নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে স্থানীয় সরকার ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি।” তিনি আরও বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকার যদি যথাযথ ব্যবস্থা না নেন, তবে সংক্রমণ আরও বাড়বে এবং স্বাস্থ্যব্যবস্থা চাপের মুখে পড়বে।”

চলতি বছর দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ উদ্বেগজনক মাত্রায় বেড়েছে। সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্য। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, স্বাস্থ্য সচেতনতা ও সরকারি কার্যকর পদক্ষেপ ছাড়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে পারে।

পরবর্তী সপ্তাহে আরও বৃষ্টি ও নিম্নচাপের কারণে মশার বিস্তার বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই জনসাধারণের সতর্কতা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং সরকারী পদক্ষেপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

এম আর এম – ১৮৫১,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button