
রাজধানীর শেওড়াপাড়ায় একটি আবাসিক ভবনে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। প্রাথমিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ও আগুনের সূত্রপাত জানা যায়নি। আগুনে হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি, তবে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের তৎপরতা
আজ মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে রাজধানীর শেওড়াপাড়া এলাকায় একটি বহুতল ভবনে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। মুহূর্তের মধ্যেই আগুনের তীব্রতা বাড়তে থাকলে স্থানীয় বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন এবং নিরাপদ দূরত্বে সরে যান।
খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার কাজ শুরু করে। দীর্ঘ প্রায় ৪০ মিনিট চেষ্টার পর ফায়ার সার্ভিস আগুনের বিস্তার থামাতে সক্ষম হয়। এ সময় ভবনের নিচতলায় ব্যাপক ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে, যা স্থানীয়দের মধ্যে আরও আতঙ্কের সৃষ্টি করে।
আগুনের সূত্রপাত নিয়ে এখনো স্পষ্ট তথ্য নেই
ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, অগ্নিকাণ্ডের কারণ এখনো নিশ্চিত নয়। তবে ধারণা করা হচ্ছে, ভবনের নিচতলার কোনো বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়ে থাকতে পারে। আগুন পুরোপুরি নিভে যাওয়ার পর তদন্তের মাধ্যমে বিস্তারিত জানা যাবে।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা শিহাব সরকার জানান, “আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ চেষ্টা করি। দ্রুত সময়ের মধ্যে আগুনের বিস্তার থামাতে পারায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো গেছে।”
পূর্বে এমন ঘটনা ঘটেছে কি?
শেওড়াপাড়া এলাকাটি ঘনবসতিপূর্ণ হওয়ায় এর আগেও এখানে ছোটখাটো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। বিশেষ করে বৈদ্যুতিক সংযোগের দুর্বল ব্যবস্থাপনা ও ভবনের অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা না থাকায় এই ধরনের ঝুঁকি বাড়ছে।
স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, “এই এলাকায় আগেও কয়েকবার আগুন লেগেছে। কিন্তু প্রতিবারই আমরা দেখি, ভবনগুলোতে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতি নেই। এতে করে আমাদের আতঙ্ক আরও বেড়ে যায়।”
স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া ও আতঙ্ক
ঘটনার সময় ভবনের ভেতরে থাকা বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেকে হুড়োহুড়ি করে নিচে নামতে থাকেন। স্থানীয়রা ফায়ার সার্ভিসের তৎপরতায় সন্তোষ প্রকাশ করলেও ভবনের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
একজন নারী বাসিন্দা বলেন, “আমরা তখন ঘরে রান্না করছিলাম। হঠাৎ বাইরে চিৎকার শুনে বের হই, দেখি নিচে ধোঁয়া। দ্রুত বাচ্চাদের নিয়ে নিচে নেমে আসি।”
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ
অগ্নিকাণ্ডের খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই স্থানীয় থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। তারা আগ্রহী জনতাকে দূরে সরিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখে। ভবনের আশপাশে ট্রাফিক সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়, যাতে করে ফায়ার সার্ভিস নির্বিঘ্নে কাজ করতে পারে।
পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, “আমরা স্থানীয়দের সহযোগিতা চেয়েছি এবং নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে বলেছি। এ ধরনের ঘটনায় দ্রুত প্রতিক্রিয়া না হলে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।”
ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ও সম্ভাব্য তদন্ত
ঘটনার সময় ভবনের ভেতরে কিছু দোকান ও আবাসিক ফ্ল্যাটে আগুনের প্রভাব পড়ে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।
একজন কর্মকর্তা বলেন, “আগুনের প্রকৃতি ও উৎস সম্পর্কে নিশ্চিত হতে আমাদের সময় লাগবে। ভবনের মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে তদন্ত কাজ চালানো হবে।”
বিশেষজ্ঞদের মতামত: নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ঘাটতি
নগর পরিকল্পনাবিদ ও অগ্নিনির্বাপণ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকার অধিকাংশ আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা পর্যাপ্ত নয়। অগ্নিনির্বাপণ প্রশিক্ষণ, অ্যালার্ম সিস্টেম ও ফায়ার এক্সিট না থাকায় অগ্নিকাণ্ডের সময় মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ে এবং জীবন হুমকিতে পড়ে।
বিশেষজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ার আবুল হাসান বলেন, “প্রতিটি ভবনে কমপক্ষে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র, অ্যালার্ম সিস্টেম এবং জরুরি নির্গমন পথ থাকা বাধ্যতামূলক। এই বিষয়গুলো নিয়মিত মনিটর করা দরকার।”
সারসংক্ষেপ
শেওড়াপাড়ার এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা আরও একবার নগরের ভবন নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। অগ্নিকাণ্ডে কোনো হতাহতের ঘটনা না ঘটায় অনেকেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেও ভবিষ্যতে বড় ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে ভবন মালিক ও কর্তৃপক্ষকে সচেতন হতে হবে।
পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা না থাকলে ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা আরও ভয়াবহ হতে পারে — এমনটি বলছেন বিশ্লেষকরা। এখন সময় এসেছে নিয়মিত মনিটরিং ও কঠোর নিরাপত্তা মানদণ্ড আরোপের।
এম আর এম – ০৪৬২, Signalbd.com