বাংলাদেশ

 রাতের ভোটের আইডিয়া ছিল তৎকালীন আইজিপি  জাবেদ পাটোয়ারীর : সাবেক আইজিপি মামুন

Advertisement

২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে রাতের ভোট কার্যক্রমের পরিকল্পনা আসে তৎকালীন আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারীর কাছ থেকে, যা পরে মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়ন করা হয় বলে আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন।

প্রধানমন্ত্রী দপ্তর ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে রাতের ভোট কার্যক্রম বাস্তবায়নের অভিযোগ নতুন করে সামনে এসেছে। সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন এক জবানবন্দিতে দাবি করেছেন, এই আইডিয়ার মূল উৎস ছিলেন তৎকালীন আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারী, যিনি প্রথমে এই পরিকল্পনা প্রস্তাব করেন এবং পরে সরকারি পর্যায় থেকে তা বাস্তবায়নের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়।

রাতের ভোটের পরিকল্পনার উৎস নিয়ে মামুনের জবানবন্দি

সাবেক আইজিপি মামুনের বক্তব্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগের রাতেই ব্যালট বাক্স পূর্ণ করে রাখার প্রস্তাব দেন তৎকালীন আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারী। এরপর বিষয়টি সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে উপস্থাপন করা হয়। পরে জেলা প্রশাসন থেকে শুরু করে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে এই পরিকল্পনা কার্যকর করার নির্দেশনা দেওয়া হয়।

জবানবন্দিতে মামুন উল্লেখ করেন, ডিসি, ইউএনও, এসিল্যান্ড, পুলিশ ও বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তারা সক্রিয়ভাবে এই প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করেছিলেন।

গুম, ক্রসফায়ার ও রাজনৈতিক প্রভাবের অভিযোগ

চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন আদালতে আরও জানান, ২০১৮ সালের নির্বাচনের সময় ও এর আগে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা আসতো প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে। গুম, নির্যাতন এবং ক্রসফায়ার সংক্রান্ত নির্দেশনা দেওয়া হতো সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর সামরিক উপদেষ্টা তারিক সিদ্দিকীর মাধ্যমে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এসব কার্যক্রম বাস্তবায়নে সরাসরি ভূমিকা রাখত।

তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী কর্মকর্তাদের বিশেষ পদক (বিপিএম, পিপিএম) দিয়ে পুরস্কৃত করা হতো।

দীর্ঘদিন গুম থাকা ব্যারিস্টার আরমানের প্রসঙ্গ

জবানবন্দিতে সাবেক আইজিপি মামুন উল্লেখ করেন, ব্যারিস্টার আরমানকে দীর্ঘ সময় ধরে গোপনে রাখা হয় র‍্যাবের টিএফআই সেলে। বিষয়টি পরবর্তীতে আইজিপি বেনজীর আহমেদ তাকে জানান। তবে সব জানার পরও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি বলে মামুন দাবি করেন।

ঢাকার পুলিশে গোপালগঞ্জ কর্মকর্তাদের প্রভাব

আদালতে দেওয়া সাক্ষ্যে মামুন আরও অভিযোগ করেন, ঢাকায় কর্মরত পুলিশের অধিকাংশ কর্মকর্তা গোপালগঞ্জ থেকে আসা হওয়ায় তারা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা মানতেন না। এই কর্মকর্তাদের নিয়ন্ত্রণ করতেন এডিশনাল আইজিপি মনিরুল ইসলাম ও ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার হাবিবুর রহমান। তবে এ দুজনের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ছিল এবং তারা আলাদা গ্রুপে প্রভাব বিস্তার করতেন।

রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় স্বীকার করে এবং ঘটনার বিস্তারিত তথ্য প্রদান করে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন আদালতে রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন করেন। ২০২৫ সালের ১০ জুলাই আদালত তার এই আবেদন মঞ্জুর করে। এর মাধ্যমে বহু অজানা তথ্য সামনে এসেছে, যা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের প্রতিক্রিয়া

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই জবানবন্দি দেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিরপেক্ষতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলছে। যদি এসব অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তবে নির্বাচন কমিশন ও সরকারের দায়িত্বশীলতার ওপর এর বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে।

ভবিষ্যৎ প্রভাব

ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের দাবি উঠছে। অনেকেই মনে করছেন, এই জবানবন্দি প্রকাশের পর আসন্ন নির্বাচন ও সরকারি কর্মকর্তাদের ভূমিকা নিয়ে জনগণের আস্থা পুনর্গঠনে বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে।

শেষ কথা 

 ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে রাতের ভোটের অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে দেশের রাজনীতিতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল। এবার সাবেক আইজিপির দেওয়া জবানবন্দি সেই বিতর্ককে নতুন করে উসকে দিয়েছে। তবে ভবিষ্যতে এই অভিযোগ কতটা প্রমাণিত হয় এবং এর ফলে দেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় কী ধরনের পরিবর্তন আসে, তা সময়ই বলে দেবে।

এম আর এম – ০৬০৭ , Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button