বাংলাদেশ

বারবার ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, তারেক রহমানের উদ্বেগ

Advertisement

দেশজুড়ে সম্প্রতি একের পর এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সর্বশেষ রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো কমপ্লেক্সে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর শনিবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক বার্তায় তিনি বলেন, “এই ধরনের ধারাবাহিক অগ্নিকাণ্ডে আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।”
তিনি ক্ষতিগ্রস্ত সবাইকে সমবেদনা জানিয়ে ফায়ার সার্ভিস ও উদ্ধারকর্মীদের সাহসিকতার প্রশংসা করেন।

শাহজালাল বিমানবন্দরের কার্গো কমপ্লেক্সে ভয়াবহ আগুন

শনিবার দুপুরে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ এলাকায় হঠাৎ ভয়াবহ আগুন লাগে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, কার্গো এলাকার একটি স্টোরেজ ইউনিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের আরও কয়েকটি গুদামে।

ফায়ার সার্ভিসের প্রায় দীর্ঘ ৭ ঘণ্টার প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুনে প্রচুর পণ্য ও মালামাল পুড়ে গেছে। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত প্রাণহানির খবর পাওয়া না গেলেও কয়েকজন কর্মী ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হন।

এ ঘটনায় বিমানবন্দরের কার্গো কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়, যা দেশের আমদানি-রপ্তানি খাতে তাৎক্ষণিক প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

তারেক রহমানের প্রতিক্রিয়া: “আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন”

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পরপরই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লিখেছেন,
“ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো কমপ্লেক্সে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। ক্ষতিগ্রস্ত সবাইকে আমার সমবেদনা এবং প্রার্থনা রইল যেন সবাই নিরাপদে থাকেন।”

তিনি আরও বলেন, “যারা সাহসিকতার সঙ্গে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন— ফায়ার সার্ভিস, সশস্ত্র বাহিনী ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থা— তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা জানাই।”

তারেক রহমান একই সঙ্গে আহ্বান জানান, সম্প্রতি চট্টগ্রাম ইপিজেড ও মিরপুরের পোশাক কারখানার অগ্নিকাণ্ডসহ এসব ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করা প্রয়োজন, যাতে ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া যায়।

সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ডের ধারাবাহিকতা ও জনমনে আতঙ্ক

গত কয়েক সপ্তাহে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে একাধিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। মিরপুরের একটি গার্মেন্টস কারখানায় আগুনে বিপুল পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়, এর পরপরই চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ইপিজেড) ঘটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধারাবাহিক অগ্নিকাণ্ড শুধুমাত্র অব্যবস্থাপনা বা নিরাপত্তা ঘাটতির কারণেই ঘটছে না, বরং এটি অবকাঠামোগত দুর্বলতা ও মাননিয়ন্ত্রণের অভাবেরও প্রতিফলন।

প্রতিনিয়ত এসব দুর্ঘটনা ঘটতে থাকায় সাধারণ মানুষ যেমন আতঙ্কিত, তেমনি ব্যবসায়ীরাও অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন।

নিরাপত্তা ঘাটতি ও তদন্তের দাবি

তারেক রহমানের বক্তব্যের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে বিএনপির নেতারা বলেছেন, দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যাপ্ত নয়।
তারা দাবি করেছেন, প্রতিটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পরই তদন্তের কথা বলা হয়, কিন্তু বেশিরভাগ সময়ই সেই তদন্তের ফলাফল প্রকাশ করা হয় না।

অন্যদিকে ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা বলছেন, অনেক স্থাপনায় অগ্নিনিরাপত্তা মানদণ্ড উপেক্ষা করা হয়। নিয়মিত পরিদর্শন না হওয়ায় ঝুঁকি থেকেই যায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভবিষ্যতে বড় কোনো বিপর্যয় ঠেকাতে হলে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

অগ্নিকাণ্ডের প্রভাব: অর্থনীতি ও জননিরাপত্তা

দেশের অন্যতম ব্যস্ত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো এলাকায় আগুন লাগার ফলে শুধু বিমান চলাচল নয়, আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমেও বড় ধরনের বিঘ্ন ঘটে।
অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, বিমানবন্দর কার্গো সেকশনে অগ্নিকাণ্ড ঘটলে তা সরাসরি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য প্রবাহে প্রভাব ফেলে।

এ ছাড়া অগ্নিনিরাপত্তা নিয়ে জনমনে নতুন করে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাধারণ মানুষ সরকারের দায়িত্বহীনতার সমালোচনা করছেন এবং দ্রুত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন।

“অবহেলা নয়, প্রয়োজন কাঠামোগত পরিবর্তন”

অগ্নিনিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধে কেবল প্রশাসনিক ব্যবস্থা নয়, প্রয়োজন নীতি ও কাঠামোগত পরিবর্তন।
বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির (বুয়েট) এক অধ্যাপক বলেন, “অগ্নিনিরাপত্তা মানদণ্ড কেবল নথিতে নয়, বাস্তবায়ন পর্যায়ে আনতে হবে। পুরনো স্থাপনাগুলোকেও নিরাপত্তা আপগ্রেড করতে হবে।”

তারা আরও বলেন, বড় বড় দুর্ঘটনা ঠেকাতে আগেই ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করা এবং নিয়মিত অগ্নিনিরাপত্তা মহড়া চালানো জরুরি।

ভবিষ্যতের করণীয় কী?

বারবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মানুষের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
তারেক রহমানের মতো রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্যে যেমন এই উদ্বেগের প্রতিফলন রয়েছে, তেমনি এটি সরকার ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর জন্য একটি সতর্কবার্তাও বটে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রতিটি বড় দুর্ঘটনার পর শুধু তদন্ত নয়, বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণই হতে পারে ভবিষ্যৎ বিপর্যয় রোধের একমাত্র উপায়।
তবে প্রশ্ন রয়ে গেছে—পরবর্তী অগ্নিকাণ্ডের আগে কি আমরা প্রস্তুতি নিতে পারব?

এম আর এম – ১৮৩৬,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button