
বিকেলে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে সাময়িকভাবে বন্ধ থাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ফ্লাইট চলাচল আবার শুরু হয়েছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর রাত ৯টা থেকে বিমান ওঠানামা স্বাভাবিক হয় বলে নিশ্চিত করেছে কর্তৃপক্ষ। যাত্রীদের ভোগান্তি কমাতে সব সংস্থা সমন্বিতভাবে কাজ করছে।
রাত ৯টা থেকে ফ্লাইট চালু
শনিবার (১৮ অক্টোবর) বিকেলে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। দুপুর ২টা ১৫ মিনিটে লাগা সেই আগুনের কারণে বিমান ওঠানামা সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। প্রায় ৭ ঘণ্টা চেষ্টার পর ফায়ার সার্ভিস আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনে।
রাত ৯টার দিকে ফ্লাইট চলাচল পুনরায় শুরু হয় বলে নিশ্চিত করেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তথ্য কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম। প্রথমে দুবাই থেকে আসা ফ্লাই দুবাইয়ের একটি ফ্লাইট নিরাপদে অবতরণ করে। এরপর ধীরে ধীরে ইউএস-বাংলা, ইন্ডিগো ও অন্যান্য এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটও নিয়মিত চলাচল শুরু করে।
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তবেই কার্যক্রম পুনরায় শুরু করা হয়েছে। কোনো ফ্লাইট স্থগিত বা বাতিলের কারণে যাত্রীদের যে অসুবিধা হয়েছে, তা কমাতে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সার্বক্ষণিক সহায়তা প্রদান করছে।
অগ্নিকাণ্ডের প্রেক্ষাপট ও উদ্ধার তৎপরতা
বিকেল ২টা ১৫ মিনিটে বিমানবন্দরের ৮ নম্বর গেট সংলগ্ন কার্গো ভিলেজে হঠাৎ আগুন লাগে। মুহূর্তেই ঘন কালো ধোঁয়ায় চারপাশ ঢেকে যায়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ২০টি ইউনিট প্রায় ৭ ঘণ্টা চেষ্টার পর ফায়ার সার্ভিস আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনে।
অগ্নিকাণ্ডের সময় বিমানবন্দর এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। যাত্রীরা ফ্লাইট বিলম্বের কারণে টার্মিনাল এলাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষায় ছিলেন। তবে সৌভাগ্যবশত এ ঘটনায় কোনো প্রাণহানি ঘটেনি।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দ্রুত পদক্ষেপের কারণে বড় ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানো গেছে। আগুন লাগার কারণ অনুসন্ধানে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বিমান মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য ও তদারকি ব্যবস্থা
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন নিজে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে উদ্ধার ও পুনরায় ফ্লাইট কার্যক্রম চালুর পুরো প্রক্রিয়া তদারকি করেছেন।
মন্ত্রণালয় জানায়, “ফায়ার সার্ভিস, বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ এবং নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর সমন্বিত পদক্ষেপে পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। আমরা যাত্রীদের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি।”
মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, তদন্তের মাধ্যমে অগ্নিকাণ্ডের উৎস চিহ্নিত করা হবে এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
যাত্রীদের ভোগান্তি ও প্রতিক্রিয়া
দীর্ঘ সময় বিমান ওঠানামা বন্ধ থাকায় শত শত যাত্রী চরম ভোগান্তিতে পড়েন। অনেকে অভিযোগ করেন, আগুন লাগার পরপরই ফ্লাইট বিলম্ব বা বাতিলের তথ্য যথাসময়ে জানানো হয়নি। টার্মিনালে ডিজিটাল বোর্ডে ফ্লাইট স্ট্যাটাস আপডেট না থাকায় যাত্রীদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়।
এক যাত্রী বলেন, “আমার সিঙ্গাপুর যাওয়ার ফ্লাইট রাত ১০টা ২৫ মিনিটে ছিল। কিন্তু আগুন লাগার পর কোথাও সঠিক তথ্য পাওয়া যাচ্ছিল না। বোর্ডেও কিছু দেখাচ্ছিল না। এতে আমরা অনেক সময় নষ্ট করেছি।”
তবে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বলেছে, আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর থেকে যাত্রীদের সকল তথ্য সরাসরি ঘোষণা ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে আপডেট করা হচ্ছে।
পূর্ববর্তী অগ্নিকাণ্ড ও নিরাপত্তা জোরদার
সম্প্রতি দেশে একাধিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটায় বিমানবন্দরসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থাপনা ও জরুরি সাড়া প্রদানে সক্ষমতা বৃদ্ধির পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিমানবন্দর একটি উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ স্থান হওয়ায় সেখানে অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আরও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা প্রয়োজন। বিশেষ করে কার্গো ভিলেজ এলাকায় দাহ্য পদার্থ সংরক্ষণে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের মন্তব্য ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
বিমান চলাচল বিশেষজ্ঞদের মতে, শাহজালাল বিমানবন্দরের ফ্লাইট চলাচল দ্রুত স্বাভাবিক করা একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। তবে তাঁরা সতর্ক করেছেন, অগ্নিকাণ্ডের মূল কারণ নির্ণয় ও সমাধান না করা হলে ভবিষ্যতে এমন বিপর্যয় আবারও ঘটতে পারে।
একজন বেসামরিক বিমান চলাচল বিশেষজ্ঞ বলেন, “এ ধরনের ঘটনার পর নিরাপত্তা ব্যবস্থা কতটা কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হয়, সেটাই এখন গুরুত্বপূর্ণ। তদন্তের ফলাফল জনসম্মুখে প্রকাশ করা হলে জনগণের আস্থা বাড়বে।”
দীর্ঘ ছয় ঘণ্টার অচলাবস্থা কাটিয়ে শাহজালাল বিমানবন্দর এখন আবার স্বাভাবিক ছন্দে ফিরেছে। তবে অগ্নিকাণ্ডের এই ঘটনা প্রশাসন ও কর্তৃপক্ষের জন্য একটি বড় সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
আগুনের উৎস নির্ণয় ও ভবিষ্যতে এমন ঘটনা ঠেকাতে কতটা কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়, সেটাই এখন দেশের জনগণের নজর থাকবে।
এম আর এম – ১৮৩৩,Signalbd.com