বাংলাদেশ

রোবট দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করছে ফায়ার ফাইটাররা

Advertisement

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা রোবট ব্যবহার করে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন। আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর এই ফায়ারফাইটিং রোবটগুলো দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে যাতে করে কর্মীদের জীবনঝুঁকি কমে আসে। শনিবার (১৮ অক্টোবর) দুপুর আড়াইটার দিকে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। এরপর থেকেই বিমানবন্দর এলাকায় একের পর এক ফায়ার ইউনিট মোতায়েন করা হয়।

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বিকেল সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। ঘটনাস্থলে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিট, পাশাপাশি বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী, সেনাবাহিনী ও বিজিবির সদস্যরাও সহায়তা দিচ্ছেন।

কার্গো ভিলেজে হঠাৎ ভয়াবহ আগুন

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার দুপুরে বিমানবন্দরের ৮ নম্বর গেটের পাশের কার্গো ভিলেজ থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখা যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে। দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং আগুন নেভানোর চেষ্টা শুরু করে। কার্গো ভিলেজে থাকা বিপুল পরিমাণ পোশাক, প্লাস্টিক ও কেমিক্যাল জাতীয় উপকরণ দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়তে সাহায্য করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অগ্নিকাণ্ডের কারণে বিমানবন্দরের অভ্যন্তরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। নিরাপত্তাজনিত কারণে সাময়িকভাবে বিমান চলাচল স্থগিত করা হয়। কয়েকটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইটকে বিকল্প বিমানবন্দরে অবতরণ করতে বাধ্য করা হয়।

রোবট ব্যবহার করে আগুন নেভানোর চেষ্টা

আগুনের তীব্রতা ও ধোঁয়ার ঘনত্ব বেশি থাকায় ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা রোবট ব্যবহার করে আগুন নেভানোর উদ্যোগ নেন। রিমোট কন্ট্রোল চালিত এই রোবটগুলো ২০০ মিটার দূর থেকে পানি ও ফোম স্প্রে করতে সক্ষম। ফায়ার সার্ভিসের বিশেষায়িত এই রোবট আগুনের কাছে না গিয়েই উচ্চ তাপমাত্রা সহ্য করে কাজ করতে পারে।

ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেল জানিয়েছে, এই ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে যাতে মানবজীবনের ঝুঁকি কমে এবং আগুনের কেন্দ্রবিন্দুতে সরাসরি পানি ছিটানো সম্ভব হয়। এর মাধ্যমে দাহ্য পদার্থের বিস্তার রোধেও সহায়তা পাওয়া যাচ্ছে।

ফ্লাইট চলাচল সাময়িকভাবে স্থগিত

অগ্নিকাণ্ডের কারণে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাময়িকভাবে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এ সময় ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়ার প্রস্তুতিতে থাকা কয়েকটি ফ্লাইট ট্যাক্সিওয়েতে অপেক্ষা করে। অন্যদিকে, ঢাকাগামী অন্তত ৮টি ফ্লাইট চট্টগ্রাম ও সিলেটে অবতরণ করে। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, যাত্রীদের নিরাপত্তাই এখন সবচেয়ে বড় অগ্রাধিকার।

বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক মো. মাসুদুল হাসান মাসুদ জানান, “কার্গো ভিলেজের একটি অংশে আগুন লাগার পরপরই আমাদের ফায়ার ইউনিট কাজ শুরু করে। বর্তমানে ফায়ার সার্ভিস ও প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা সম্মিলিতভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছেন।”

উদ্ধার ও সহায়তায় সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী

আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর বিশেষায়িত ইউনিটও মাঠে নেমেছে। এছাড়া সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির দুটি প্লাটুনও উদ্ধার কার্যক্রমে অংশ নিয়েছে। বিভিন্ন সংস্থা যৌথভাবে কাজ করায় আগুনের বিস্তার কিছুটা কমানো সম্ভব হয়েছে বলে জানা গেছে।

ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, র‍্যাব, পুলিশ ও আনসার সদস্যরাও অবস্থান নিয়েছে। বিমানবন্দর এলাকায় সাধারণ মানুষের প্রবেশ সীমিত করে দেওয়া হয়েছে যাতে উদ্ধার কার্যক্রম নির্বিঘ্নে চালানো যায়।

এখন পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতি ও আহতদের তথ্য

এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, আগুনে অন্তত পাঁচজন ফায়ার সার্ভিস সদস্য ও শ্রমিক আহত হয়েছেন। তাদের দ্রুত রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো নিশ্চিত নয়, তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে কয়েক কোটি টাকার পণ্য পুড়ে গেছে। বিশেষ করে আমদানি করা কাপড়, ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ এবং কেমিক্যাল জাতীয় দ্রব্য আগুনে সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে।

প্রযুক্তিনির্ভর ফায়ার ফাইটিং: বাংলাদেশের জন্য নতুন দিগন্ত

আগুন নেভাতে রোবট ব্যবহারের ঘটনাটি বাংলাদেশের ফায়ার সার্ভিস ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রযুক্তিনির্ভর এই উদ্যোগ ভবিষ্যতে বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডে মানবজীবন রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

অগ্নিনির্বাপক রোবট সাধারণত তাপ সহনশীল ও স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাধা অতিক্রম করতে সক্ষম। এ ধরনের যন্ত্র দ্রুত তাপমাত্রা বিশ্লেষণ করতে পারে এবং পানি বা ফোম সঠিক স্থানে স্প্রে করে আগুন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

তদন্ত শুরু, কারণ জানা যায়নি

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানে কাজ শুরু করেছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। তবে বিস্তারিত জানাতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, যারা ৭২ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে।

কার্গো ভিলেজের এই অগ্নিকাণ্ড আবারও নিরাপত্তা ও অগ্নিনির্বাপণ প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তবে রোবট ব্যবহার করে আগুন নেভানোর প্রচেষ্টা বাংলাদেশের ফায়ার সার্ভিসে আধুনিক প্রযুক্তির নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
তদন্ত শেষে জানা যাবে কীভাবে এমন দুর্ঘটনা ঘটল এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এম আর এম – ১৮২৫,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button