বাংলাদেশ

এ মাসেই জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ, সই করা যাবে পরেও: আলী রীয়াজ

Advertisement

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানিয়েছেন, এ মাসের মধ্যেই জাতীয় জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পূর্ণাঙ্গ সুপারিশ সরকারকে দেওয়া হবে। কমিশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই, অর্থাৎ ৩১ অক্টোবরের মধ্যে সরকার সেই সুপারিশ অনুযায়ী সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু করবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের এলডি হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক আলী রীয়াজ এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, “আমরা চাই, জুলাই সনদ শুধু একটি দলিল নয়, বরং একটি রাজনৈতিক ঐকমত্যের প্রতীক হয়ে উঠুক। এ মাসেই আমরা বাস্তবায়নের সুপারিশ জমা দেব, যাতে সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নিতে পারে।”

জুলাই সনদে অংশগ্রহণ না করলেও পরবর্তীতে সই করার সুযোগ থাকবে

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, “যেসব দল শুক্রবারের অনুষ্ঠানে সনদে সই করতে পারবে না, তারা চাইলে পরবর্তীতেও স্বাক্ষর করতে পারবে।” তিনি যোগ করেন, “আমরা চাই সব দলের অংশগ্রহণে এই সনদ একটি জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হোক। কেউ বাদ পড়লে সেটি দেশের গণতান্ত্রিক চেতনার পরিপন্থী হবে।”

আগামীকাল শুক্রবার বিকেল ৪টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিত হবে এই স্বাক্ষর অনুষ্ঠান। সেখানে উপস্থিত থাকবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি প্রায় শেষ, রাজনৈতিক দলগুলোকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে

অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানান, সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের সব প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। ইতোমধ্যে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। পাশাপাশি সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধি, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও শিক্ষাবিদরাও অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।

তিনি বলেন, “আমরা চাই এই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানটি একটি উৎসবমুখর জাতীয় আয়োজন হোক, যেখানে সবাই ভবিষ্যতের গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের অঙ্গীকারে শামিল হবে।”

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান বিচারপতি এমদাদুল হক এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামানসহ অনেকে।

বাম দল ও এনসিপির অবস্থান নিয়ে কমিশনের মন্তব্য

চারটি বাম দল ইতোমধ্যে জানিয়েছে তারা জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে না। অন্যদিকে, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) জানিয়েছে, সনদের বাস্তবায়ন আদেশের খসড়া না দেখে তারা সই করবে না। এ বিষয়ে আলী রীয়াজ বলেন, “এটি তাদের রাজনৈতিক অবস্থান। তবে আমরা বিশ্বাস করি, সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় তারা শেষ পর্যন্ত যুক্ত হবেন। এই প্রক্রিয়া কারো বাদে সম্পূর্ণ হবে না।”

তিনি আরও জানান, কমিশন এনসিপির প্রস্তাব ও মন্তব্যগুলো গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছে। “তাদের অবদান আমরা জানি। জুলাই গণআন্দোলনের অগ্রগামী সৈনিক হিসেবে তারা এই প্রক্রিয়ার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাই আমরা চাই তারা সনদে যোগদান করে এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে অংশ নিক।”

জুলাই সনদের বাস্তবায়নে কমিশনের অঙ্গীকার

অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, “কমিশনের মেয়াদকাল ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যেই আমরা সরকারকে একটি সুস্পষ্ট ও কার্যকর সুপারিশ দেব, যাতে সনদ বাস্তবায়নের আইনি ভিত্তি তৈরি হয়। আমাদের লক্ষ্য হলো, এই সনদের মাধ্যমে একটি নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করা।”

তিনি আরও বলেন, সনদ বাস্তবায়নে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও পরামর্শ চলছে, যাতে বাস্তবায়নের সময় কোনো রকম বিভ্রান্তি বা বিলম্ব না ঘটে।

সনদ বাস্তবায়নে নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রত্যাশা

সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, “জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করা গেলে দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে বড় পরিবর্তন আসবে। এটি শুধু একটি দলিল নয়, বরং মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ও রাষ্ট্র সংস্কারের রূপরেখা।”

তিনি জানান, শুক্রবারের অনুষ্ঠানে একটি সংক্ষিপ্ত তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হবে, যেখানে তুলে ধরা হবে সনদ প্রণয়নের প্রেক্ষাপট, এর উদ্দেশ্য ও সম্ভাব্য প্রভাব। আগামী দুই মাস ধরে জনগণের মধ্যে সনদ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রচারণাও চলবে।

সনদ জাতীয় ঐক্যের নতুন অধ্যায়

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, জুলাই সনদ কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হলে দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা কমবে এবং দলগুলোর মধ্যে ন্যূনতম ঐক্যের ভিত্তি তৈরি হবে।

একজন বিশ্লেষক বলেন, “এই সনদের সফল বাস্তবায়ন শুধু রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা নয়, বরং প্রশাসনিক ও সাংবিধানিক সংস্কারের দিকেও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে।”

ঐকমত্যের পথে নতুন সূচনা

সব দল যদি একই প্ল্যাটফর্মে আসতে পারে, তবে এটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হবে। তবে যারা আপাতত সই করছে না, তাদের পরবর্তীতে যুক্ত হওয়ার সুযোগ রাখায় কমিশনের উদ্যোগকে ইতিবাচক বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

জুলাই সনদের বাস্তবায়ন এখন সরকারের হাতে—এটি দেশের রাজনৈতিক ঐক্য, স্বচ্ছতা ও ভবিষ্যতের গণতন্ত্র পুনর্গঠনের পথে কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখবে, তা সময়ই বলে দেবে।

এম আর এম – ১৮২১,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button