বাংলাদেশ

দুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতে ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিলো সরকার

Advertisement

দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রতিবছরের মতো এবারও বাংলাদেশ থেকে ভারতে ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে সরকার। সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জানায়, এ বছর মোট ১ হাজার ২০০ টন ইলিশ রপ্তানি করা যাবে। সিদ্ধান্তকে ঘিরে ইতোমধ্যেই ব্যবসায়ী মহল, রপ্তানিকারক এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

ইলিশ রপ্তানির সরকারি সিদ্ধান্ত

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আদেশে বলা হয়েছে, রপ্তানিকারকদের ১১ সেপ্টেম্বর অফিস চলাকালে আবেদন জমা দিতে হবে। এর সঙ্গে হালনাগাদ ট্রেড লাইসেন্স, ইআরসি, আয়কর সার্টিফিকেট, ভ্যাট সার্টিফিকেট, বিক্রয় চুক্তিপত্র ও মৎস্য অধিদপ্তরের লাইসেন্স সংযুক্ত করতে হবে।
প্রতিটি কেজি ইলিশের ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য ধরা হয়েছে সাড়ে ১২ মার্কিন ডলার। তবে যারা আগে থেকেই আবেদন করেছেন, তাদেরও নতুন নিয়মে পুনরায় আবেদন করতে হবে।

ইলিশ রপ্তানির ইতিহাস

বাংলাদেশে ইলিশের উৎপাদন বিশ্বে সর্বাধিক। প্রতিবছর দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে ভারতীয় বাজারে এ মাছের ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়। এর আগেও ২০২২ ও ২০২৩ সালে যথাক্রমে ২ হাজার ও ১ হাজার ৬০০ টন ইলিশ ভারতে রপ্তানি করা হয়েছিল।
তবে দেশের অভ্যন্তরে চাহিদা ও দাম বেড়ে যাওয়ায় কয়েক বছর রপ্তানি বন্ধও ছিল। ফলে এবারের রপ্তানির সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক ও বিতর্কিত—দুইভাবেই দেখা হচ্ছে।

সিদ্ধান্তের প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া

রপ্তানিকারকরা মনে করছেন, এ সিদ্ধান্তে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগ তৈরি হবে। বিশেষ করে যেসব কোম্পানি দীর্ঘদিন ধরে ইলিশ ব্যবসায় যুক্ত, তাদের জন্য এটি একটি লাভজনক উদ্যোগ।
অন্যদিকে সাধারণ ভোক্তারা বলছেন, ইতিমধ্যেই বাজারে ইলিশের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। রপ্তানির ফলে দাম আরও বাড়তে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের এক ক্রেতা বলেন, “এখনো এক কেজি মাঝারি সাইজের ইলিশ কিনতে ১২০০–১৪০০ টাকা গুনতে হচ্ছে। রপ্তানি শুরু হলে হয়তো আরও বাড়বে।”

অর্থনৈতিক দিক ও পরিসংখ্যান

বাংলাদেশ থেকে ইলিশ রপ্তানি প্রতিবছর বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের একটি বড় উৎস হয়ে দাঁড়ায়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ইলিশ রপ্তানি থেকে প্রায় ২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় হয়েছিল।
এ বছর ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে সাড়ে ১২ ডলার, যা গত বছরের তুলনায় সামান্য বেশি। ফলে ১ হাজার ২০০ টন রপ্তানির মাধ্যমে ১৫ মিলিয়ন ডলারের বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

মৎস্য গবেষকরা বলছেন, রপ্তানির সিদ্ধান্ত অর্থনৈতিকভাবে ভালো হলেও অভ্যন্তরীণ বাজার নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। না হলে ভোক্তাদের ক্ষোভ বাড়তে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মেহেদী হাসান বলেন, “ইলিশ শুধু অর্থনীতির নয়, সংস্কৃতিরও অংশ। রপ্তানি অবশ্যই দরকার, কিন্তু একইসঙ্গে স্থানীয় ভোক্তাদের জন্য সরবরাহ ও দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।”

“রপ্তানির অনুমতি পেয়ে আমরা খুশি, তবে একইসঙ্গে স্থানীয় বাজার যেন অস্থিতিশীল না হয়, সে বিষয়ে সরকারের নজরদারি জরুরি।” — এক রপ্তানিকারক

দুর্গাপূজার আগে ভারতে ইলিশ রপ্তানির অনুমতি বাণিজ্যিকভাবে ইতিবাচক হলেও, এর প্রভাব বাংলাদেশের ভোক্তা বাজারে কেমন হবে তা নিয়ে সংশয় রয়ে গেছে। আগামী কয়েক সপ্তাহেই বোঝা যাবে, সরকারের এই সিদ্ধান্ত কেবল রপ্তানিকারকদের জন্য সুফল বয়ে আনবে, নাকি সাধারণ ভোক্তাদের জন্য ভোগান্তি বাড়াবে।

এম আর এম – ১২৪২,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button