বাংলাদেশ

ফের বাড়লো ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ

Advertisement

 জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ আবারও বাড়িয়েছে সরকার। বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, কমিশনের মেয়াদ আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত অবিলম্বে কার্যকর হবে। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কমিশনের চলমান কাজ সম্পন্ন করতে এই সময় বৃদ্ধি জরুরি হয়ে পড়েছিল।

ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ বাড়ানোর সরকারি ঘোষণা

সরকারের পক্ষ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ২০২৫ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ানো হলো। এটি কার্যকর হবে তাৎক্ষণিকভাবে।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, কমিশনকে বর্ধিত মেয়াদের মধ্যেই তাদের দায়িত্ব ও কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে। এর আগে কমিশনের মেয়াদ গত ১৫ সেপ্টেম্বর এক মাস বাড়ানো হয়েছিল। এবার আরও ১৫ দিন যোগ করা হলো।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “কমিশনের বেশ কিছু প্রস্তাব এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য নিশ্চিত করতে সময় প্রয়োজন। তাই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”

কমিশনের কার্যক্রম ও উদ্দেশ্য

ঐকমত্য কমিশনের মূল উদ্দেশ্য হলো দেশের চলমান রাজনৈতিক সংস্কার প্রক্রিয়ায় ঐক্যমতের ভিত্তিতে একটি স্থিতিশীল রূপরেখা তৈরি করা।
কমিশন গঠনের সময় এটিকে ছয় মাসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কার্যক্রমের বিস্তৃতি ও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপের কারণে কাজ সম্পন্ন করতে সময় বেশি লেগেছে।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে সাত সদস্যের এই কমিশন রাজনৈতিক সংস্কার, নির্বাচন ব্যবস্থা, প্রশাসনিক কাঠামো, এবং দুর্নীতি দমন সম্পর্কিত বিষয়ে বিভিন্ন দফায় আলোচনা চালিয়ে আসছে।

জুলাই সনদ স্বাক্ষরের প্রস্তুতি

কমিশনের সহ-সভাপতি ড. আলী রীয়াজ জানিয়েছেন, “আমরা জুলাই সনদ স্বাক্ষরের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। শুক্রবারই সব রাজনৈতিক দল এ সনদে স্বাক্ষর করবে বলে আশা করছি।”
তিনি আরও বলেন, “এই সনদ আমাদের জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার একটি ঐতিহাসিক দলিল হবে। এর মধ্য দিয়ে ভবিষ্যতের রাজনীতিতে আস্থার নতুন অধ্যায় শুরু হবে।”

জুলাই সনদে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি, নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার, এবং দুর্নীতি দমনে সমন্বিত নীতি গ্রহণের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে বলে জানা গেছে।

আগেও বাড়ানো হয়েছিল মেয়াদ

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ এটি নিয়ে তৃতীয়বারের মতো বাড়ানো হলো। প্রথম মেয়াদ ছিল ৬ মাস, যা শেষ হয় গত ১৫ আগস্ট। এরপর দুই দফায় সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়।
কিন্তু কমিশনের কাজের অগ্রগতি ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের ধীরগতি বিবেচনায় সরকার পুনরায় সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়।

এ বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, “এই কমিশন যদি সত্যিকারের ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারে, তবে এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”

কমিশনের কার্যক্রমে অগ্রগতি

কমিশন এরই মধ্যে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক সম্পন্ন করেছে। আলোচনায় অংশ নিয়েছেন ক্ষমতাসীন দল, বিরোধী জোট এবং বিভিন্ন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।
কমিশনের সদস্যরা জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত মতামতের ভিত্তিতে একটি খসড়া সনদ তৈরি করা হয়েছে, যা ‘জুলাই সনদ’ নামে পরিচিত।

সনদটি আগামী সপ্তাহে প্রকাশ করা হবে এবং এর মধ্য দিয়ে কমিশন তাদের কার্যক্রমের গুরুত্বপূর্ণ অংশ সম্পন্ন করবে বলে জানা গেছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, কমিশনের মেয়াদ বৃদ্ধি একটি বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ। কারণ, যে ধরনের জটিল রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক বিষয় কমিশনের হাতে রয়েছে, তা অল্প সময়ে সম্পন্ন করা সম্ভব নয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. কামাল হোসেন বলেন, “এই কমিশন যদি স্বচ্ছভাবে কাজ করে এবং সব দলের মতামতকে অন্তর্ভুক্ত করে, তবে এটি ভবিষ্যতে দীর্ঘমেয়াদে রাজনৈতিক সংস্কারের পথ খুলে দিতে পারে।”

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ তৃতীয়বারের মতো বৃদ্ধি সরকারের একটি কৌশলগত সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে। জুলাই সনদ স্বাক্ষর সম্পন্ন হলে কমিশনের কার্যক্রম নতুন গতি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তবে বিশ্লেষকদের মতে, এই কমিশনের সফলতা নির্ভর করছে এর প্রস্তাবগুলো কতটা বাস্তবায়নযোগ্য হয় এবং রাজনৈতিক দলগুলো কতটা আন্তরিকভাবে ঐকমত্যে পৌঁছাতে সক্ষম হয় তার ওপর।

এম আর এম – ১৮০৮,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button