বাংলাদেশ

ভোলার মেঘনা নদীতে গুলিবিদ্ধ হয়ে যুবকের মৃত্যু, আহত তিন জেলে

ভোলা সদর উপজেলার ধনিয়া ও কাচিয়া ইউনিয়নের সংলগ্ন মেঘনা নদীতে শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে এক যুবক গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন তিন জেলে। নিহত যুবকের নাম মো. হাসান (২৭), তিনি সদর উপজেলার ইলিশা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. সরোয়ার হোসেনের ছেলে। আহত জেলেরা হলেন মো. আব্বাস মাঝি (৪০), কাঞ্চন মাঝি (৩৫) ও মো. সোহেল (২২); তাদের সবাই একই ইউনিয়নের বাসিন্দা। আহতদের ভোলা সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশালে পাঠানো হয়েছে।

ঘটনার বিবরণ

নিহত ও আহতদের স্বজনদের বরাত দিয়ে জানা যায়, আব্বাস মাঝি মেঘনা নদীর বয়ার চরে জাল পেতে মাছ ধরছিলেন। এ সময় একটি নৌকায় কিছু অপরিচিত লোক এসে জাল পাতার কারণ জানতে চেয়ে তর্কে জড়ায়। কথা-কাটাকাটির এক পর্যায়ে তারা এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই মো. হাসান মারা যান, কাঞ্চন ও সোহেল গুলিবিদ্ধ হন, এবং আব্বাসকে বেধড়ক পেটানো হয়।

পুলিশের বক্তব্য

ভোলা সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সাহাদাৎ মোহাম্মদ হাচনাইন পারভেজ বলেন, “যদি জলদস্যু হামলা করত, তাহলে কোনো না কোনো মালামাল খোয়া যেত। কিন্তু জেলেরা গুলিবিদ্ধ হয়ে হতাহত হলেও কোনো মাল খোয়া যায়নি। তা ছাড়া পুলিশি জেরায় বোঝা যাচ্ছে, জাল পাতা বিরোধের জেরে এ গুলি ছোড়া হয়েছে।” তিনি আরও জানান, এ ঘটনা তদন্তের জন্য পুলিশ ও নৌ পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে অবস্থান করছে।

মেঘনা নদীতে জাল পাতা নিয়ে বিরোধের প্রেক্ষাপট

মেঘনা নদীতে জেলেদের মধ্যে জাল পাতা নিয়ে বিরোধ নতুন নয়। নদীতে মাছ ধরার নিয়ন্ত্রণ ও জালের প্রকারভেদ নিয়ে জেলেদের মধ্যে প্রায়ই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বিশেষ করে অবৈধ কারেন্ট জালের ব্যবহার নিয়ে জেলেদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা যায়। কারেন্ট জাল ব্যবহার নিষিদ্ধ হলেও অনেক জেলে তা ব্যবহার করে, যা মৎস্যসম্পদ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য ক্ষতিকর। এ নিয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও মৎস্য অধিদপ্তর বিভিন্ন সময়ে অভিযান পরিচালনা করে।

নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি

মেঘনা নদীতে জেলেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও সক্রিয় হতে হবে। জলদস্যু ও অবৈধ জাল ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। এ ছাড়া জেলেদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিরোধ নিরসন করা যেতে পারে।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের করণীয়

মৎস্য অধিদপ্তর, নৌ পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনকে সমন্বিতভাবে কাজ করে মেঘনা নদীতে জেলেদের নিরাপত্তা ও মৎস্যসম্পদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। জেলেদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি, অবৈধ জালের ব্যবহার বন্ধ এবং জলদস্যুদের দমনে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করতে হবে। এ ছাড়া জেলেদের বিকল্প আয়ের উৎস সৃষ্টি করে তাদের জীবিকা নির্বাহের সুযোগ বাড়ানো যেতে পারে।

মেঘনা নদীতে জেলেদের মধ্যে জাল পাতা নিয়ে বিরোধ ও সহিংসতার ঘটনা প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট সকলের সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। জেলেদের নিরাপত্তা, মৎস্যসম্পদের সুরক্ষা এবং নদীর জীববৈচিত্র্য রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এতে করে জেলেরা নিরাপদে তাদের পেশা চালিয়ে যেতে পারবেন এবং দেশের মৎস্যসম্পদ টেকসই থাকবে।

আরও পড়ুন

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button