
রাজধানীর ব্যস্ত নগরজীবনে স্বস্তির খবর এনেছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। আগামী রোববার (১৯ অক্টোবর) থেকে বাড়ছে মেট্রোরেল চলাচলের সময় ও ট্রিপ সংখ্যা। এর ফলে অফিসগামী ও কর্মজীবী মানুষের জন্য যাতায়াত আরও সহজ, দ্রুত ও স্বাচ্ছন্দ্যময় হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মেট্রোরেলের নতুন সময়সূচি কার্যকর রোববার থেকে
ডিএমটিসিএল জানিয়েছে, আগামী রোববার থেকেই মেট্রোরেলের সময়সূচিতে পরিবর্তন আসছে। নতুন সময়সূচি অনুযায়ী, উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে প্রথম ট্রেন ছাড়বে সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে, যা আগে ছিল সকাল ৭টা ১০ মিনিটে। অন্যদিকে, শেষ ট্রেন ছাড়বে রাত ৯টা ৩০ মিনিটে, আগে যা ছিল রাত ৯টা।
অন্যদিকে, মতিঝিল স্টেশন থেকে প্রথম ট্রেন ছাড়বে সকাল ৭টায় (পূর্বে ছিল সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে) এবং শেষ ট্রেন ছাড়বে রাত ১০টা ১০ মিনিটে। এর ফলে কর্মজীবী যাত্রীদের অফিসে যাওয়া-আসার সময় আরও সুবিধাজনক হবে।
ডিএমটিসিএলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মেট্রোরেল চলাচলের সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্তটি গত মাসেই গৃহীত হয় এবং ২৫ সেপ্টেম্বর পরীক্ষামূলকভাবে বাড়তি সময় চালানো হয়। সেই পরীক্ষার ফলাফল ইতিবাচক হওয়ায় এবার তা স্থায়ীভাবে কার্যকর করা হচ্ছে।
নভেম্বরের মাঝামাঝিতে বাড়ছে ট্রিপ সংখ্যা
সময় বৃদ্ধির পাশাপাশি ডিএমটিসিএল জানিয়েছে, আগামী নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ট্রিপ সংখ্যাও বাড়ানো হবে। বর্তমানে দুটি ট্রেনের মধ্যে সময়ের ব্যবধান প্রায় ১০ মিনিট হলেও, নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী এটি কমিয়ে ৮ মিনিটে নামিয়ে আনা হবে।
এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে যাত্রীসেবা আরও গতিশীল ও সময়সাশ্রয়ী হবে। বিশেষ করে অফিস টাইমে যাত্রীদের দীর্ঘ অপেক্ষার ঝামেলা কমবে।
ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক আহমেদ বলেন, “পর্যায়ক্রমে মেট্রোরেলের সেবা বাড়ানোর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। আমরা ধাপে ধাপে সময় ও ট্রিপ বৃদ্ধি করছি, যাতে যাত্রীরা সর্বোচ্চ সুবিধা পান।”
রাজধানীর গণপরিবহনে স্বস্তি আনবে নতুন সূচি
রাজধানীতে প্রতিদিনের যানজট সাধারণ মানুষের জন্য বড় ভোগান্তির কারণ। মেট্রোরেল চালুর পর থেকে অনেক যাত্রী এখন এই আধুনিক পরিবহন ব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল।
বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে প্রায় সাড়ে চার লাখ যাত্রী মেট্রোরেল ব্যবহার করেন। ডিএমটিসিএলের অনুমান, সময় ও ট্রিপ সংখ্যা বাড়ানোর ফলে এই সংখ্যা পাঁচ লাখেরও বেশি ছাড়াতে পারে।
শহরের বাসিন্দাদের মতে, সকালে দ্রুত যাত্রা শুরু ও রাতে শেষ ট্রেনের সময় বাড়ানো হলে কর্মজীবী মানুষ বিশেষভাবে উপকৃত হবেন। অফিস শেষে বা রাতের শিফটে কর্মরত ব্যক্তিরাও সহজে ঘরে ফিরতে পারবেন।
উত্তরা থেকে মতিঝিল: ধাপে ধাপে সেবা সম্প্রসারণ
২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেলের প্রথম ধাপ উদ্বোধন করা হয়। পরে তা ধাপে ধাপে মতিঝিল পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়। বর্তমানে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের পূর্ণাঙ্গ সেবা চালু রয়েছে।
ডিএমটিসিএল জানিয়েছে, রাজধানীর অন্যান্য অংশেও ভবিষ্যতে মেট্রোরেল নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে। সরকারের দীর্ঘমেয়াদি ‘মেট্রোরেল মাস্টার প্ল্যান’-এ বলা হয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে ঢাকা শহরে মোট ছয়টি মেট্রোরেল রুট চালুর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
যাত্রীদের প্রতিক্রিয়া ও প্রত্যাশা
নতুন সময়সূচি ঘোষণার পর রাজধানীর যাত্রীদের মধ্যে স্বস্তির আবহ দেখা গেছে। অফিসগামী কর্মজীবী মানুষরা বলছেন, সকালে আগেভাগে ট্রেন চলা শুরু হওয়ায় ট্রাফিক জ্যামের ভয় ছাড়াই সময়মতো অফিসে পৌঁছানো সহজ হবে।
একজন নিয়মিত যাত্রী বলেন, “মেট্রোরেলের সুবিধা এখন আগের চেয়ে অনেক ভালো। সকালে যদি আরও আগে ট্রেন পাওয়া যায়, তাহলে বাসের ওপর নির্ভর করতে হয় না।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ট্রিপ সংখ্যা ও সময় বাড়ানোর ফলে শুধু যাত্রীসুবিধা নয়, বরং রাজধানীর সামগ্রিক যানজট পরিস্থিতিও কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসবে।
ডিএমটিসিএলের লক্ষ্য: নিরাপদ ও সময়নিষ্ঠ সেবা
ডিএমটিসিএল-এর মূল লক্ষ্য হলো নাগরিকদের নিরাপদ, আধুনিক ও সময়নিষ্ঠ গণপরিবহন সেবা নিশ্চিত করা। এজন্য তারা নিয়মিতভাবে অবকাঠামো ও পরিচালন ব্যবস্থার উন্নয়ন করছে।
প্রতিষ্ঠানটির একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, যাত্রীদের অভিজ্ঞতা আরও উন্নত করতে প্রযুক্তি ব্যবহারের দিকেও জোর দেওয়া হচ্ছে। টিকিটিং সিস্টেম, নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ ও রুট ম্যানেজমেন্টে আধুনিক প্রযুক্তি সংযোজনের কাজ চলমান রয়েছে।
মেট্রোরেলের সময় ও ট্রিপ সংখ্যা বৃদ্ধির এই সিদ্ধান্ত রাজধানীবাসীর জন্য এক ইতিবাচক পদক্ষেপ। এর মাধ্যমে শুধু কর্মজীবী জনগণ নয়, শিক্ষার্থী ও সাধারণ যাত্রীরাও উপকৃত হবেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মেট্রোরেল যত বেশি ঘন ঘন ও দীর্ঘ সময় চলবে, ততই এটি রাজধানীর যানজট কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এখন দেখার বিষয়, এই নতুন সূচি বাস্তবায়নের পর যাত্রীসেবার মান কতটা উন্নত হয়।
এম আর এম – ১৭৯১,Signalbd.com