
একই শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও সরকারি ও এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা পাচ্ছেন ভিন্ন বেতন ও বাড়ি ভাড়া; বাড়ি ভাড়ার বৈষম্য প্রকাশ্যে।
ঘটনার বিস্তারিত
দেশের সরকারি এবং এমপিওভুক্ত বেসরকারি স্কুলে কর্মরত শিক্ষকদের মধ্যে বেতন এবং ভাতা বৈষম্য দীর্ঘদিনের সমস্যা। সাম্প্রতিক সময়ে সরকারি মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষকরা এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা তুলনায় প্রায় ৮ গুণ বেশি বাড়ি ভাড়া পাচ্ছেন।
সরকারি স্কুলের শিক্ষকরা ১০ গ্রেড বেতন স্কেলে থাকেন এবং মাসিক মূল বেতনের প্রায় ৪৫–৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ি ভাতা পান। ফলে রাজধানী ঢাকার সরকারি স্কুলের শিক্ষকরা মাসে প্রায় ৮ হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া পান। একই শিক্ষাগত যোগ্যতায় নিয়োগ পাওয়া এমপিওভুক্ত (বেসরকারি) শিক্ষকরা মাসে মাত্র এক হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া পান।
শিক্ষক আন্দোলন ও দাবি
বেসরকারি শিক্ষকরা এ বৈষম্যকে অগ্রহণযোগ্য বলে মনে করছেন। এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজী জানিয়েছেন, “আমরা একই দেশের শিক্ষক, একই জাতীয় শিক্ষা নীতির আওতায় কাজ করি। কিন্তু সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষকদের যে পার্থক্য, তা শিক্ষা খাতের মর্যাদা নষ্ট করছে।”
তারা দাবি করেছেন, সরকার ২০ শতাংশ বাড়ি ভাড়ার প্রজ্ঞাপন জারি করুন। প্রজ্ঞাপন ছাড়া শিক্ষকরা কাজ বন্ধ রাখবেন। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে দীর্ঘদিন ধরে অবস্থান কর্মসূচি চালানো শিক্ষকদের আন্দোলন শহীদ মিনারে স্থানান্তরিত হয়েছে।
পুলিশি ব্যবস্থা ও সংঘর্ষ
অবস্থান কর্মসূচি চলাকালীন পুলিশ শিক্ষকদের সরিয়ে দিতে নানাধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। সাউন্ড গ্রেনেড, জলকামান নিক্ষেপ এবং লাঠিচার্জের ঘটনা ঘটেছে। এতে বেশ কয়েকজন শিক্ষক আহত এবং পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে আলোচনার পর তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে।
সরকারি এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের মধ্যে বেতন ও বাড়িভাড়া পার্থক্য নতুন নয়। তবে সম্প্রতি এই বৈষম্য আরও বেড়েছে। বিশেষ করে শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং দায়িত্ব একই হলেও, নিয়োগের ধরন অনুযায়ী সরকারি শিক্ষকরা বেশি সুবিধা পান।
বেসরকারি শিক্ষকরা বলছেন, সরকারি চাকরিজীবীদের মতো বাড়ি ভাতা, চিকিৎসা ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা একীভূত না হলে শিক্ষক সমাজে বিভাজন আরও গভীর হবে।
প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
সরকারি স্কুলের শিক্ষকরা সুবিধা ভোগ করলেও এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা বঞ্চিত। শিক্ষকদের মধ্যে অসন্তোষ বেড়েছে এবং আন্দোলনের মাত্রা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
শিক্ষক আন্দোলনের কারণে রাজধানীর কেন্দ্রীয় এলাকায় যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি ব্যাপক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদে এই বৈষম্য শিক্ষা খাতের মান ও নৈতিকতাকে প্রভাবিত করতে পারে।
সংখ্যা ও তুলনা
- সরকারি স্কুল শিক্ষক: মাসে প্রায় ৮ হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া
- এমপিওভুক্ত শিক্ষক: মাসে মাত্র ১ হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া
- বাড়ি ভাড়ার পার্থক্য প্রায় ৮ গুণ
বিশ্লেষণ ও ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সরকারি এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের মধ্যে পার্থক্য দূর করার জন্য স্পষ্ট নীতি গ্রহণ জরুরি। শিক্ষক সমাজের ঐক্য রক্ষা এবং শিক্ষা খাতের মান উন্নয়নের জন্য বাড়িভাড়া ও অন্যান্য ভাতা সমন্বয় করা প্রয়োজন।
শিক্ষক আন্দোলন চলতে থাকলে সরকার শিক্ষাব্যবস্থায় দীর্ঘমেয়াদী সংস্কারের দিকে মনোযোগ দিতে বাধ্য হতে পারে। জাতীয় শিক্ষা নীতির আওতায় শিক্ষক সুবিধার সমন্বয় নিশ্চিত করা হলে শিক্ষাব্যবস্থায় ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
সরকারি এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের মধ্যে বাড়িভাড়া বৈষম্য প্রকাশ্যে আসায় শিক্ষা খাতে সামাজিক এবং অর্থনৈতিক বিভাজন দেখা দিয়েছে। আন্দোলনরত শিক্ষকরা স্পষ্ট দাবি জানিয়েছেন। বিশ্লেষকদের মতে, আগামী দিনে এই আন্দোলন সরকারের নীতিগত পরিবর্তনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সংকেত হিসেবে কাজ করবে।
এম আর এম – ১৭৬৬,Signalbd.com