
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত শিক্ষক বাতিল ও ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগের নতুন বিধিমালা প্রণয়নের আহ্বান
দেশের ধর্মীয় ভাবাবেগ এবং ইসলামী মূল্যবোধ রক্ষার জন্য হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ সর্বোচ্চ কঠোর আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়েছেন। পবিত্র কুরআন অবমাননার বিচারের পাশাপাশি কাঠামোগত ইসলামবিদ্বেষ ও ধর্ম অবমাননা রোধে কার্যকর আইন প্রণয়নের ওপর জোর দিয়েছেন সংগঠনটির শীর্ষ নেতারা।
আজ সোমবার, ১৩ অক্টোবর, রাজধানীর সেগুনবাগিচায় অবস্থিত রিপোর্টার্স ইউনিটিতে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এই দাবিগুলো উত্থাপন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত শিক্ষক নিয়োগ বাতিল এবং ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগের জন্য নতুন বিধিমালা প্রণয়নের আহ্বানও জানান হেফাজতের নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন হেফাজতে ইসলামের আমীর আল্লামা মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী, মহাসচিব শায়খ সাজিদুর রহমান, যুগ্মমহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকসহ অন্যান্য শীর্ষ নেতৃবৃন্দ।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত শিক্ষক নিয়োগ বাতিলের দাবি
সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতের পক্ষ থেকে বলা হয়, ইসলামে বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার নিষিদ্ধ। সেই বিধান উপেক্ষা করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত শিক্ষক নিয়োগের জন্য নতুন বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। হেফাজতের নেতারা তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, “ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতি অনাদর প্রদর্শন করা হচ্ছে। আমরা অনতিবিলম্বে ওই বিধিমালা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। এছাড়া সমস্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগের নতুন ও কার্যকরী বিধিমালা প্রণয়নের আহ্বান জানাচ্ছি।”
তিনি আরও বলেন, “শিশুদের শিক্ষায় ইসলামী সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ রক্ষা অত্যন্ত জরুরি। প্রাথমিক স্তরে বাদ্যযন্ত্র শেখানোর মাধ্যমে শিশুর মনোবল ও চরিত্র বিকৃত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত শিক্ষক নিয়োগ বাতিল করা এবং ধর্মীয় শিক্ষাকে সর্বজনীন করার জন্য আইন প্রণয়ন করা প্রয়োজন।”
কুরআন অবমাননায় সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি
হেফাজতের নেতারা আরও বলেন, পবিত্র কুরআন অবমাননার ঘটনায় কঠোর আইন না থাকায় সম্প্রদায়ের অনুভূতিতে আঘাত পৌঁছে। তারা দাবি করেন, এমন কোনো ঘটনা যেন আর ঘটে না, সেই জন্য সর্বোচ্চ শাস্তির বিধানসহ কার্যকর আইন প্রণয়ন করা উচিত।
“পবিত্র কুরআন আমাদের জীবনের ভিত্তি। কারও ন্যায়-বিচারবোধ অনুযায়ী এর অবমাননা সহ্য করা হবে না। আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, দ্রুত আইন প্রণয়ন করে অবমাননাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিন,” সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন হেফাজতের যুগ্মমহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক।
ধর্ম অবমাননা রোধে কাঠামোগত ব্যবস্থা জরুরি
হেফাজতের শীর্ষ নেতারা বলেন, শুধু আইন প্রণয়ন যথেষ্ট নয়; কাঠামোগতভাবে ইসলামবিদ্বেষ ও ধর্ম অবমাননা রোধের জন্য কার্যকর নীতি, নজরদারি ব্যবস্থা এবং শিক্ষাব্যবস্থায় সংস্কার জরুরি।
“ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং মিডিয়াতে ইসলামবিরোধী প্রচারণা প্রতিরোধের জন্য সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। একসাথে আইন, নীতি এবং সামাজিক সচেতনতার মাধ্যমে আমাদের ধর্মীয় ভাবাবেগ রক্ষা সম্ভব হবে,” বলেন হেফাজতের আমীর আল্লামা মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী।
প্রাথমিক শিক্ষা ও ধর্মীয় শিক্ষার ভারসাম্য
সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতের নেতারা আরও তুলে ধরেন, বর্তমান প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা শিশুদের নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষা প্রদানে যথেষ্ট মনোযোগ দেয় না। তারা মনে করেন, প্রাথমিক স্তরে শিশুদের চরিত্র ও নৈতিক মূল্যবোধ গঠনে ইসলাম শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম।
“প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত শিক্ষার পরিবর্তে ধর্মীয় শিক্ষার ওপর জোর দেওয়া হলে শিশুরা ইসলামী সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের সঙ্গে পরিচিত হবে। এটা তাদের মানসিক বিকাশেও সহায়ক হবে,” বলেন শায়খ সাজিদুর রহমান।
আন্তর্জাতিক পরিপ্রেক্ষিত
বিশ্বের অনেক দেশে ধর্মীয় গ্রন্থের অবমাননার জন্য কঠোর আইন রয়েছে। হেফাজতের নেতারা মনে করেন, বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও এই ধরনের আইন প্রণয়ন জরুরি। এমন আইন শুধু ধর্মীয় অনুভূতি রক্ষা করবে না, দেশের সামাজিক শান্তি ও সংহতিও নিশ্চিত করবে।
“যেসব দেশে ধর্মীয় গ্রন্থের অবমাননার জন্য দণ্ডমূলক ব্যবস্থা রয়েছে, সেখানে সামাজিক সহিংসতা ও সংঘাত কম। বাংলাদেশেও একই ধরনের কার্যকর আইন প্রণয়ন হলে ধর্মীয় সহমর্মিতা ও শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে,” উল্লেখ করেন হেফাজতের এক যুগ্ম নেতৃবৃন্দ।
সরকারের প্রতি আহ্বান
সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতের নেতারা সরকারকে সরাসরি আহ্বান জানান, প্রাথমিক শিক্ষার নীতি পুনর্বিবেচনা করে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ নিশ্চিত করা, ধর্ম অবমাননার জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি বিধান করা এবং ইসলামবিদ্বেষী কার্যক্রম প্রতিরোধে কার্যকর কাঠামো তৈরি করা।
“আমরা চাই, শিশুদের শিক্ষায় ইসলামের প্রভাব বজায় থাকুক, ধর্মীয় অনুভূতিকে আঘাত না পৌঁছুক এবং সমাজে ধর্মীয় সহমর্মিতা ও নিরাপত্তা বজায় থাকুক। সরকারের কাছে আমাদের এই দাবি অত্যন্ত জরুরি,” বলেন হেফাজতের আমীর।
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত শিক্ষক নিয়োগ বাতিল ও ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগের নতুন বিধিমালা প্রণয়ন, কুরআন অবমাননার বিচার এবং ধর্ম অবমাননা রোধে সর্বোচ্চ আইন প্রণয়নের দাবি জানানো হয়েছে। সংগঠনটি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, শিশুদের শিক্ষায় ইসলামের মূল্যবোধ বজায় রাখা এবং ধর্মীয় সহমর্মিতা রক্ষা করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে।
MAH – 13308 I Signalbd.com