
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই দেশে ফিরবেন বলে জানিয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, শুধু বিএনপির নেতৃত্ব নয়, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনের শেষ ধাপের নেতৃত্বও দেবেন তারেক রহমান। বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
ঘটনাবলি ও ঘোষণা
শেরেবাংলা নগরে বিশ্ব ফার্মাসিস্ট ডে উপলক্ষে বিএনপিপন্থী চিকিৎসক সংগঠন ডি ফ্যাবের সদস্যদের নিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন ডা. জাহিদ। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “তারেক রহমান শুধু বিএনপির নেতা নন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে সম্পৃক্ত সবার নেতা। তিনি দেশে ফিরেই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেবেন।”
ডা. জাহিদ আরও বলেন,
“নির্বাচনের জন্য নয়, গণতন্ত্র রক্ষার শেষ লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিতে তিনি আসবেন। বিএনপি জনগণের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে ছিল, আছে এবং থাকবে।”
বিএনপির নির্বাচনী প্রস্তুতি
সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, প্রায় ৮ মাস আগ থেকেই বিএনপি আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রস্তুতি নিচ্ছে। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সংখ্যা আসনের তুলনায় প্রায় ১০ গুণ। এখনও পর্যন্ত কাউকে সবুজ বা লাল সংকেত দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, জনপ্রিয়তা, স্থানীয় গ্রহণযোগ্যতা এবং জরিপের ভিত্তিতেই প্রার্থিতা চূড়ান্ত করা হবে।
আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অভিযোগ
এ সময় তিনি নিউ ইয়র্কে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং অন্যান্য নেতাদের ওপর হামলার বিষয়ে কথা বলেন। ডা. জাহিদ অভিযোগ করে বলেন, “এটি আওয়ামী লীগের প্রতিহিংসার রাজনীতির বহিঃপ্রকাশ। তাদের ইতিহাস জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার।” তিনি দাবি করেন, বর্তমান সরকারের ধারাবাহিকতায় অন্যায় ও দমননীতি অব্যাহত রয়েছে, তবে শেষ বিচারে জনগণ সবসময় এ ধরনের শক্তিকে প্রতিহত করেছে।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
বিএনপি নেতাদের দাবি, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন শুধু সাম্প্রতিক কোনো কর্মসূচি নয়, বরং দীর্ঘদিন ধরে দলটির রাজনৈতিক অঙ্গীকারের অংশ। ১৯৮৬ সাল থেকে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে বিএনপি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে বলে মন্তব্য করেন ডা. জাহিদ। তারেক রহমানের দেশে ফেরাকে তাই শুধু রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তন নয়, বরং ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতার অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
প্রতিক্রিয়া ও বিশ্লেষণ
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, তারেক রহমানের দেশে ফেরা বিএনপির জন্য বড় ধরনের মনোবল যোগাবে। তিনি দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের প্রতীকী মুখ হওয়ায় তার উপস্থিতি তৃণমূল পর্যায়ে কর্মীদের উজ্জীবিত করতে পারে। তবে আইনি ও রাজনৈতিক নানা জটিলতা সামনে আসতে পারে বলেও তারা সতর্ক করছেন।
অন্যদিকে, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতারা দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছেন, তারেক রহমান দুর্নীতির মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে বিদেশে অবস্থান করছেন। তার দেশে ফেরার ঘোষণা বাস্তবায়িত হলে রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন উত্তেজনা তৈরি হতে পারে।
সম্ভাব্য প্রভাব
তারেক রহমানের দেশে ফেরা আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ও গণআন্দোলনের গতিপ্রকৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, তিনি মাঠে ফিরলে বিএনপির রাজনৈতিক কৌশল আরও আক্রমণাত্মক হবে। তৃণমূল কর্মীদের মাঝে আত্মবিশ্বাস তৈরি হবে এবং বিরোধী জোটগুলোর সমন্বয় বাড়তে পারে। তবে সরকার পক্ষও নতুন করে কৌশল নেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেনের ঘোষণার মাধ্যমে আবারও স্পষ্ট হলো, তারেক রহমানের দেশে ফেরাকে ঘিরে দেশের রাজনীতিতে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে যাচ্ছে। এটি বিএনপির আন্দোলনকে নতুন গতি দেবে, নাকি নতুন রাজনৈতিক সংকট তৈরি করবে—তা সময়ই বলে দেবে।
এম আর এম – ১৫২৭,Signalbd.com