
দেশে করোনাভাইরাসে সংক্রমণ পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও হঠাৎ করে মাঝে মাঝেই নতুন সংক্রমণের খবর পাওয়া যাচ্ছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরও ৩ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। তবে এ সময়ের মধ্যে কারও মৃত্যু হয়নি বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
নতুন সংক্রমণের তথ্য ও পরীক্ষার হার
বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের পাঠানো নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ১২৩টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে নতুন করে ৩ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ২ দশমিক ৪০ শতাংশ।
এটি চলমান পরিস্থিতিতে তুলনামূলকভাবে কম হলেও, দীর্ঘমেয়াদে সতর্ক থাকার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরছেন বিশেষজ্ঞরা।
চলতি বছরের চিত্র: মৃত্যু ও মোট শনাক্ত সংখ্যা
২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭১৩ জনে। এই সময়ের মধ্যে করোনায় মারা গেছেন ২৮ জন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এ সংখ্যাটি তুলনামূলকভাবে কম হলেও, করোনাভাইরাসের প্রকৃতি বিবেচনায় এই সংক্রমণকে একেবারে অবহেলা করা ঠিক নয়। কারণ, ভাইরাসটি এখনও সম্পূর্ণভাবে নির্মূল হয়নি এবং এটি নতুন রূপে আবার ফিরে আসার আশঙ্কা থেকেই যায়।
করোনা সংক্রমণের অতীত অভিজ্ঞতা
বাংলাদেশ ২০২০ সালে প্রথমবারের মতো কোভিড-১৯ সংক্রমণের মুখোমুখি হয়। তখন দেশব্যাপী কঠোর লকডাউন, স্বাস্থ্যবিধি, স্কুল-কলেজ বন্ধসহ নানা ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। সেই সময়ের তুলনায় বর্তমানে সংক্রমণের হার ও মৃত্যু অনেকটাই কমেছে।
তবে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতীতের শিক্ষা থেকে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কখন আবার হঠাৎ বাড়বে তা কেউ নিশ্চিতভাবে বলতে পারে না। সেই কারণেই স্বাস্থ্যের দিক থেকে সচেতনতা এবং স্বাস্থ্যবিধি মানা অত্যন্ত জরুরি।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের সতর্কতা ও পরামর্শ
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত টিকাদান কার্যক্রমের সুফলেই সংক্রমণ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আছে। তবে যারা এখনও টিকার ডোজ সম্পূর্ণ করেননি, তাদের দ্রুত টিকা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
একই সঙ্গে বলা হয়েছে, জ্বর, সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্টসহ যেকোনো উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত করোনা পরীক্ষা করাতে হবে এবং প্রয়োজনে আইসোলেশনে থাকতে হবে।
জনগণের প্রতিক্রিয়া ও করণীয়
বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ করোনার নতুন সংক্রমণ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। কেউ কেউ এটিকে সামান্য ব্যাপার বলে এড়িয়ে যাচ্ছেন, আবার অনেকে আগের মতোই সচেতন থেকে মাস্ক পরছেন এবং হাত ধোয়ার অভ্যাস বজায় রাখছেন।
বিশেষ করে স্কুল, কলেজ ও জনসমাগমপূর্ণ স্থানে সচেতনতা জরুরি বলে মনে করছেন অভিভাবকরা। অনেকেই মনে করছেন, সরকারিভাবে কিছু নির্দেশনা পুনরায় চালু করা উচিত যাতে সংক্রমণ আর না বাড়ে।
পরিসংখ্যানের আলোকে করোনার বর্তমান চিত্র
সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সারাদেশে করোনা শনাক্তের হার আগের বছরের তুলনায় অনেক কম হলেও কিছুদিন পরপর কিছু নতুন সংক্রমণের খবর আসছে। গত এক মাসে মোট শনাক্তের সংখ্যা ছিল ২৬, যা আগের মাসের তুলনায় খানিকটা বেশি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরীক্ষার সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় প্রকৃত সংক্রমণ পরিস্থিতি সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা পাওয়া কঠিন। পরীক্ষার হার বাড়ানো ও সচেতনতা জোরদার করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, যেহেতু করোনা ভাইরাস একটি বৈশ্বিক মহামারি হিসেবে দীর্ঘদিন প্রভাব বিস্তার করেছে, তাই এটি আবার সংক্রমণ ছড়াতে পারে, এমন আশঙ্কা অমূলক নয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের একজন সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ বলেন, “করোনা এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকলেও এর কোনো নির্দিষ্ট মৌসুম নেই। হঠাৎ করেই সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে, বিশেষ করে যদি আমরা অসতর্ক থাকি।”
তারা আরও বলেন, “নতুন ভ্যারিয়েন্ট আসা মাত্রই সংক্রমণ দ্রুত ছড়ায়। তাই সতর্কতা, মাস্ক ব্যবহার, টিকা এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে।”
সারসংক্ষেপ
দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার তুলনামূলকভাবে কমলেও, মাঝে মাঝে শনাক্তের খবর সচেতনতার প্রয়োজনীয়তা মনে করিয়ে দেয়। ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৩ জন শনাক্ত হওয়ার ঘটনা প্রমাণ করে, ভাইরাসটি এখনও বিলুপ্ত হয়নি। তাই স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ, পরীক্ষা ও টিকাদান কার্যক্রমে অংশগ্রহণের কোনো বিকল্প নেই।
সত্যিই কি আমরা করোনার ভয়াবহতাকে পিছনে ফেলতে পেরেছি, নাকি এই শান্ত জলরাশির নিচেই লুকিয়ে আছে নতুন ঝড়ের আভাস? সময়ই হয়তো সেই উত্তর দেবে।
এম আর এম – ০৫০১ , Signalbd.com