বাংলাদেশ

শিক্ষকদের আন্দোলনে পুলিশের হস্তক্ষেপ, জাতীয় প্রেসক্লাব এলাকায় উত্তেজনা

Advertisement

জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে অবস্থান কর্মসূচি চলাকালীন শিক্ষকদের ওপর পুলিশি হস্তক্ষেপ ঘটেছে। রোববার সকাল থেকে শিক্ষকরা রাস্তা অবরোধ করে অবস্থান নেন। দুপুর পৌনে দুইটার দিকে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, পুলিশ লাঠিচার্জ, সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে শিক্ষকদের সরিয়ে দেয় এবং তাদের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের দিকে নিয়ে যায়।

পরিস্থিতি: উত্তেজনা, আতঙ্ক ও যান চলাচলের বিঘ্ন

ঘটনাস্থল থেকে জানানো হয়, জাতীয় প্রেসক্লাব ও আশপাশের এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছিল। শিক্ষকেরা নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে বাধ্য হন। প্রায় তিন ঘণ্টা স্থগিত থাকার পর স্থানীয় সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

এদিন সকাল ১০টার পর শিক্ষকেরা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে অবস্থান নেন। সারা দেশ থেকে আগত শিক্ষক-কর্মচারীর উপস্থিতির কারণে ওই এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পাশাপাশি জাতীয় প্রেসক্লাব, সচিবালয় ও মেট্রোরেলের প্রবেশ পথে সাধারণ মানুষের চলাচলও চরমভাবে বিঘ্নিত হয়।

আন্দোলনের কারণ

শিক্ষকরা মূলত এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য দীর্ঘদিনের দাবি বাস্তবায়নের দাবিতে অবস্থান করছেন। তাদের দাবি হলো:

  • এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য বেসিকের ২০ শতাংশ বাড়িভাড়া ভাতা নির্ধারণ
  • দেড় হাজার টাকা চিকিৎসা ভাতা প্রদান
  • কর্মচারীদের জন্য ৭৫ শতাংশ উৎসব ভাতা প্রদান

এই দাবির প্রতি জোর দেওয়ার জন্য এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোট লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে।

শিক্ষকদের প্রতিশ্রুতিমূলক প্রতীক্ষা

সূত্র জানায়, গত ১৩ আগস্ট জাতীয় প্রেসক্লাবে জোটের বৃহৎ শিক্ষক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় লক্ষাধিক শিক্ষক-কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন। শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনায় শিক্ষক নেতাদের কাছে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় যে, এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য বেসিকের ২০ শতাংশ বাড়িভাড়া ভাতা, ১৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা এবং উৎসব ভাতা বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা হবে।

কিন্তু দুই মাস পার হলেও প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়ায় শিক্ষকেরা ক্ষুব্ধ হয়েছেন এবং তারা এই আন্দোলন আরও জোরদার করেছেন।

নতুন প্রস্তাবনা: শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ

শিক্ষকদের চলমান আন্দোলনের মুখে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নতুন প্রস্তাবনা তৈরি করে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। সূত্র জানায়, ৫ অক্টোবর শিক্ষা মন্ত্রণালয় নতুন প্রস্তাব পেশ করে, যেখানে উল্লেখ থাকে:

  • বাড়িভাড়া ভাতা ২০ শতাংশ নির্ধারণ
  • কর্মচারীদের উৎসব ভাতা ৭৫ শতাংশ
  • চিকিৎসা ভাতা এক হাজার টাকা

তবে, শিক্ষকেরা মনে করেন, এটি তাদের দাবির পুরোপুরি বাস্তবায়ন নয় এবং তারা প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন।

সম্ভাব্য কর্মবিরতি ও আন্দোলনের পরবর্তী ধাপ

জোটের মহাসচিব দেলাওয়ার হোসেন আজিজী জানিয়েছেন, প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান চলবে। এছাড়া তারা ঘোষণা করেছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লাগাতার কর্মবিরতি সম্ভব, যাতে তাদের দাবি দ্রুত বাস্তবায়িত হয়।

এটি শুধুমাত্র রাজধানীর নয়, দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় শিক্ষকদের মধ্যে আন্দোলনের প্রতিধ্বনি সৃষ্টি করেছে। শিক্ষা জোট আশা করছে, সরকারের পক্ষ থেকে যথাযথ প্রতিক্রিয়া না আসলে তারা আরও বৃহৎ কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।

শিক্ষকদের সমস্যার পটভূমি

এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা মূলত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত, যাদের সরকারি মন্ত্রণালয় থেকে কোনো নিয়মিত বেতন বা ভাতা নিশ্চিত নয়। দীর্ঘদিন ধরে তারা সরকারি এমপিওভুক্ত হওয়ার দাবি জানিয়ে আসছেন। সরকারি প্রতিশ্রুতির অভাব, ভাতা ও অন্যান্য সুবিধার অনিয়মিকতা শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে।

শিক্ষক নেতারা বলেন, “আমাদের পরিবার ও জীবিকা নিরাপদ রাখতে সরকার আমাদের দাবি মানা জরুরি। শিক্ষার মান উন্নয়নও এভাবেই সম্ভব।”

সরকারের প্রতিক্রিয়া

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, নতুন প্রস্তাবনা ও ভাতা নির্ধারণের প্রক্রিয়া চলছে। তবে সঠিক সময়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা সরকারের দায়িত্ব। তারা আশা করছেন, শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান দ্রুত বের করা সম্ভব হবে।

বিশ্লেষণ

এমপিওভুক্ত শিক্ষক আন্দোলন বাংলাদেশে শিক্ষাক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের সমস্যাগুলোর প্রতিফলন। শিক্ষকেরা শুধু বেতন বা ভাতার দাবিতেই নয়, শিক্ষার মান ও শিশুদের ভবিষ্যতের প্রতি দায়বদ্ধতার বিষয়টিও তুলে ধরছেন। সরকারের সঙ্গে সমঝোতা ছাড়া পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সরকার ও শিক্ষক নেতাদের মধ্যে কার্যকর সংলাপ ও নির্দিষ্ট সময়সীমায় প্রজ্ঞাপন জারি করা শিক্ষাক্ষেত্রে স্থিতিশীলতা আনতে পারে।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের ঘটনা শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারের ও শিক্ষকদের মধ্যে সংলাপের গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করেছে। শিক্ষকদের প্রাপ্য অধিকার ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা শিক্ষার মান উন্নয়নে অপরিহার্য।

শিক্ষক নেতারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, তারা শুধুমাত্র তাদের অধিকার আদায়ের জন্য নয়, দেশের শিক্ষার উন্নয়নের জন্যও আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

MAH – 13285 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button