বাংলাদেশ

ঋণের বোঝায় স্বপ্নের মেট্রোরেল, যাত্রীসেবায় উঠছে না কিস্তির টাকা

Advertisement

ঢাকার স্বপ্নের মেট্রোরেল যাত্রীদের সুবিধা দেওয়ার পাশাপাশি সরকারের জন্য ঋণের বড় বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে এত যাত্রী থাকার পরও টিকিট আয়ের ফলে ঋণের কিস্তি সময়মতো পরিশোধ করা যাচ্ছে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু যাত্রীভাড়া থেকে আয় করা যথেষ্ট নয়, স্টেশন ও অন্যান্য অবকাঠামোর বাণিজ্যিক ব্যবহার জরুরি।

মেট্রোরেলের বর্তমান আর্থিক অবস্থা

বর্তমানে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু আছে। দিনে গড়ে প্রায় চার লাখ যাত্রী এই লাইন ব্যবহার করছেন। ডিএমটিসিএল সূত্রে জানা গেছে, এই লাইনের টিকিট বিক্রির প্রভিশনাল আয় বছরে প্রায় ৪০০–৪৫০ কোটি টাকা। তবে আগামী বছর থেকে ঋণের বড় অঙ্কের কিস্তি পরিশোধ শুরু হবে। এক বছরে প্রায় ৪৬৫ কোটি টাকা কিস্তি পরিশোধ করতে হবে, যা আগামীতে আরও বাড়বে।

মেট্রোরেলের নির্মাণকালীন ১০ বছর পর্যন্ত জাপানের জাইকার কাছ থেকে নেয়া ঋণের মূল কিস্তি দিতে হয়নি। এই সময়কে বলা হয়েছে গ্রেস পিরিয়ড। ২০২৩ সালের জুন থেকে সীমিত আকারে ঋণের কিস্তি পরিশোধ শুরু হয়েছে এবং এ পর্যন্ত প্রায় ৭৫ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে।

ঋণের চাপ ও ভবিষ্যতের হিসাব

ডিএমটিসিএলের হিসাব অনুযায়ী, ২০৩০–৩১ সালের মধ্যে এমআরটি-৬ নির্মাণের ঋণের কিস্তি বাবদ ৩,৭০০ কোটি টাকার বেশি পরিশোধ করতে হবে। অর্থাৎ গড়ে বছরে প্রায় ৭৪০ কোটি টাকা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধুমাত্র যাত্রীভাড়া থেকে এই ঋণ পরিশোধ করা অসম্ভব। তাই স্টেশন, পার্কিং, দোকানভাড়া এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক উপায় ব্যবহার করে আয় বাড়াতে হবে।

যাত্রীসেবার বর্তমান বাস্তবতা

মেট্রোরেলের যাত্রী সংখ্যা দিনদিন বেড়েই চলছে। অফিস শুরুর সময় এবং ব্যস্ত সময়ে অনেক যাত্রী প্রথম চেষ্টায় ট্রেনে উঠতে পারছেন না। ট্রেনের সংখ্যা সীমিত, চলাচলের সময়ও কম। বর্তমানে ৮–১২ মিনিটের ব্যবধানে ট্রেন চলাচল করছে, তবে প্রস্তাবিত সময় ছিল সাড়ে তিন মিনিট পরপর ট্রেন। রাত ১০টার পর মেট্রোরেল চলাচল করে না।

এমন পরিস্থিতিতে যাত্রীসেবার মানে ঘাটতি থাকলেও টিকিট আয়ের মাধ্যমে ঋণ পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো, চলাচল সময় বৃদ্ধি এবং স্টেশনের অব্যবহৃত জায়গায় বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করা জরুরি।

বিশেষজ্ঞ ও কর্মকর্তাদের মত

পরিবহন প্রকৌশল বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এম শামসুল হক বলেন, “দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, মেট্রো নির্মাণে অতিরিক্ত সময় নষ্ট হওয়ায় খরচ বেড়ে গেছে। এখন যাত্রীর ভাড়ার ওপর নির্ভর করে ঋণ পরিশোধ করা কঠিন। স্টেশন ও অবকাঠামোর বাণিজ্যিক ব্যবহার করলে আয় বাড়ানো সম্ভব।”

ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক আহমেদ বলেন, “আমরা নন-রেভিনিউ উৎস, যেমন বিজ্ঞাপন, স্টেশনভিত্তিক কার্যক্রম ও দোকান ভাড়া ব্যবহার করে আয় বাড়ানোর চেষ্টা করছি। তবে এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র সুদের অর্থ দিতে পারছি। আগামী বছর থেকে কিস্তি পরিশোধে ভালো ধারণা পাওয়া যাবে।”

সরকার ও ভর্তুকি বিষয়ক পরিস্থিতি

মেট্রোরেলের ঋণ বেশিরভাগ জাইকার ঋণ থেকে এসেছে। সরকারকে এই ঋণ পরিশোধে ভর্তুকি দিতে হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নতুন মেট্রোরেল নির্মাণের ক্ষেত্রে খরচ কমানো এবং আয় বাড়ানোর পরিকল্পনা আগে থেকে গ্রহণ করলে ঋণ চাপ কমানো সম্ভব।

ভবিষ্যতের প্রস্তাবনা

বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন, ট্রেনের সংখ্যা ও চলাচল সময় বৃদ্ধি, রক্ষণাবেক্ষণ খাতে অযৌক্তিক খরচ হ্রাস এবং স্টেশনের বাণিজ্যিক ব্যবহার করে আয় বৃদ্ধি করা। এগুলো ছাড়া শুধুমাত্র যাত্রীভাড়া থেকে ঋণ পরিশোধ করা অসম্ভব।

মেট্রোরেল যাত্রীরা প্রতিদিন উপভোগ করছেন সুবিধা, কিন্তু সরকারের ঋণ বোঝা আরও বাড়ছে। আয় ও খরচের ভারসাম্য তৈরি না হলে ভবিষ্যতে ঋণ পরিশোধ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।

এম আর এম – ১৭৩২,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button