বাংলাদেশ

শহিদুল আলমের ইসরাইলি কারাগারে নির্যাতনের কাহিনি

Advertisement

বাংলাদেশের আলোকচিত্রী, মানবাধিকারকর্মী এবং দৃকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহিদুল আলম সম্প্রতি ইসরাইলি কারাগারে তার সময়কাল এবং সেখানে নির্যাতনের অভিজ্ঞতা সাংবাদিকদের সামনে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, “আমাদের উপর কঠোর নির্যাতন করা হয়েছে, শারীরিক এবং মানসিক চাপের সময়ও কেটেছে। তবে গাজার মানুষের অবস্থার সঙ্গে তুলনা করলে আমাদের কষ্ট নগন্য। গাজার মানুষ মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চলছেই। আমাদের কাজ তখনই শেষ হবে না।”

শহিদুল আলমের এই বক্তব্য শুধুমাত্র তার নিজস্ব নির্যাতনের কাহিনি নয়, এটি ফিলিস্তিনিদের প্রতি আন্তর্জাতিক সহমর্মিতা এবং সমর্থনের আহ্বান হিসেবেও দেখা যায়। তিনি আরও বলেন, “আমাদের মতো আরও হাজার নৌবহর গাজার জন্য যাত্রা করতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত ফিলিস্তিন স্বাধীন হয়নি, আমাদের সংগ্রাম এখনো বাকি আছে।”

ফ্রিডম ফ্লোটিলা অভিযান এবং ইসরাইলি আটক

গত বুধবার ফিলিস্তিনের মুক্তির লক্ষ্যে গাজাগামী নৌবহর ‘ফ্রিডম ফ্লোটিলা’ অভিযান ইসরাইলি সেনারা দখল করে। এই বহরের ‘কনশানস’ নামক জাহাজে ছিলেন শহিদুল আলম সহ বিভিন্ন দেশের মানবাধিকারকর্মী, সাংবাদিক এবং স্বেচ্ছাসেবকরা। ইসরাইলি সেনারা এই জাহাজে চড়াই করে সবাইকে আটক করে নিয়ে যায়।

শহিদুল আলম জানান, বাংলাদেশি পাসপোর্ট দেখে ইসরাইলি সেনারা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এবং সেটি মাটিতে ফেলে দেয়, যা তার কাছে খুবই অপমানজনক ছিল। তিনি বলেন, “একটি দেশের পাসপোর্টকে এভাবে অপমান করা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এ ধরনের আচরণের ন্যায়বিচার আমরা অবশ্যই আদায় করতে চাই।”

এছাড়াও, তিনি জানান, কারাগারে থাকা সময় শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন ছাড়াও বন্দীদের মানবিক মর্যাদা অমান্য করা হয়েছে। শহিদুল আলমের মতে, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর তৎপরতা এবং দোয়া ও সমর্থনের কারণে তিনি এবং অন্যান্য বন্দীদের মুক্তি সম্ভব হয়েছে।

মুক্তির পর অভিজ্ঞতার বর্ণনা

শনিবার ভোরে তুরস্কের রাজধানী ইস্তাম্বুল থেকে ঢাকায় ফিরে আসেন শহিদুল আলম। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ আমাকে ফিরে আসার সুযোগ করে দিয়েছে। এই দোয়া ও ভালোবাসা আমাদের জন্য অনেক বড় শক্তি। আমি বাংলাদেশ সরকার, তুরস্ক সরকার এবং যারা আমাদের মুক্তির জন্য কাজ করেছেন, সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।”

শহিদুল আলমের অভিজ্ঞতা শুধু ব্যক্তিগত নয়, এটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার, ফিলিস্তিনের মুক্তি আন্দোলন এবং শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধের গুরুত্বকেই তুলে ধরে। তিনি বলেন, “গাজার মানুষের মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চলবে। আমরা আরও অভিযান, আরও প্রচেষ্টা চালাতে প্রস্তুত। মানবতার জন্য এই সংগ্রাম থেমে থাকলে চলবে না।”

ফিলিস্তিনে মানবাধিকার পরিস্থিতি

ফিলিস্তিনে গাজার পরিস্থিতি দীর্ঘদিন ধরেই সংকটপূর্ণ। বাসস্থান ধ্বংস, খাদ্য সংকট, স্বাস্থ্য সেবা সীমিত, এবং নিয়মিত হামলার কারণে সাধারণ মানুষের জীবন বিপন্ন। শহিদুল আলমের মতো আন্তর্জাতিক মানবাধিকারকর্মীরা এই সংকটকে সামনে আনার জন্য ফ্লোটিলা অভিযান পরিচালনা করেন।

গাজার মানুষ বছরের পর বছর অবরুদ্ধ এবং যুদ্ধের ছায়ায় জীবন যাপন করছে। তাদের জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা, মানবাধিকার সংস্থা এবং স্বেচ্ছাসেবকরা ফ্লোটিলা অভিযান চালাচ্ছেন। শহিদুল আলমের অভিজ্ঞতা সেই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, “আমরা দেখেছি গাজার মানুষের দুঃখ-কষ্ট, যা আমাদের নিজের কষ্টের চেয়ে অনেক বেশি। তাদের কষ্টকে বোঝা এবং বিশ্বকে জানানো আমাদের দায়িত্ব।”

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও সহযোগিতা

শহিদুল আলমের মুক্তির পর আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলো প্রতিক্রিয়া জানায়। তুরস্ক সরকার এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা মুক্তি প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বাংলাদেশ সরকারও তাদের কূটনৈতিক সাহায্য দিয়ে শহিদুল আলমের নিরাপদ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করেছে।

শহিদুল আলমের মতে, আন্তর্জাতিক সমর্থন এবং দোয়া সকলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, “একজন মানুষের জীবন শুধু তার নিজস্ব নয়। এটি মানবতার সংগ্রাম, এবং আমাদের কণ্ঠস্বর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে পৌঁছানো দরকার।”

বাংলাদেশের তরুণদের কাছে বার্তা

শহিদুল আলম শুধু নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেননি, তিনি বাংলাদেশী তরুণ প্রজন্মকে শক্তি এবং অনুপ্রেরণাও দিয়েছেন। তিনি বলেন, “তরুণরা মানবাধিকার ও ন্যায়বিচারের জন্য এগিয়ে আসুক। আন্তর্জাতিক সমস্যাগুলোকে বোঝার চেষ্টা করুক এবং সাহসী পদক্ষেপ নিক। ফিলিস্তিনের মতো দেশের জন্য আমরা ছোট ছোট প্রচেষ্টা করতে পারি।”

তিনি আরও বলেন, “মুক্তি এবং ন্যায়বিচারের জন্য কোনো পদক্ষেপ ছোট নয়। যত বেশি মানুষ এগিয়ে আসবে, তত দ্রুত সমাধান সম্ভব হবে। আমাদের কাজ হলো সচেতনতা সৃষ্টি করা এবং মানবতার পক্ষে দাঁড়ানো।”

শহিদুল আলমের অভিজ্ঞতা এবং শিক্ষা

শহিদুল আলমের কারাগারে সময়কাল, নির্যাতন এবং মুক্তির গল্প একদিকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বাস্তব চিত্র তুলে ধরে, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক সহমর্মিতা এবং মানুষের আন্তরিক দোয়ার শক্তি প্রমাণ করে।

তিনি বলেন, “মানবাধিকার লঙ্ঘন শুধু একটি দেশের বিষয় নয়। এটি আমাদের সবার বিষয়। আমাদের দায়িত্ব হলো অন্যায়কে চ্যালেঞ্জ করা, নির্যাতনের শিকারদের পাশে থাকা এবং শান্তিপূর্ণ উপায়ে ন্যায়বিচার আদায় করা।”

শহিদুল আলমের মতো মানবাধিকারকর্মীদের সাহসিকতা এবং অঙ্গীকার আমাদের শেখায় যে, মানুষ স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার এবং মানবতার জন্য লড়াই করতে পারে। এটি শুধু ফিলিস্তিনের জন্য নয়, সারা বিশ্বের মানুষের জন্য শিক্ষণীয়।

শহিদুল আলমের কারাগারে নির্যাতনের অভিজ্ঞতা, ফ্রিডম ফ্লোটিলা অভিযান, গাজার মানবিক সংকট, আন্তর্জাতিক সমর্থন এবং মুক্তির গল্প একত্রিত হয়ে একটি প্রাসঙ্গিক ও প্রফেশনাল সংবাদ তৈরি করেছে। এটি বাংলাদেশের পাঠকদের মধ্যে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সচেতনতা বাড়াতে সাহায্য করবে এবং ফিলিস্তিনের মুক্তির জন্য সমর্থন জাগাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

MAH – 13271 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button