বাংলাদেশ

বরিশালের বাকেরগঞ্জে পল্লী বিদ্যুতের অস্বাভাবিক বিল নিয়ে গ্রাহকদের ক্ষোভ

Advertisement

বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১-এর গ্রাহকরা গত কয়েক মাস ধরে বিদ্যুৎ বিল নিয়ে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করছেন। গ্রাহকরা অভিযোগ করছেন, বিলের হিসাবের সঙ্গে প্রকৃত ব্যবহারের মিল নেই এবং অনেক ক্ষেত্রে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হয়েছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, বরিশাল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১-এর আওতায় বাকেরগঞ্জে পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিস রয়েছে। এই অফিস থেকে গ্রাহকদের বিদ্যুৎ বিল তৈরি করা হয়। তবে অভিযোগ উঠেছে, মিটার রিডার মোজাম্মেল হক গ্রাহকের বাড়িতে না গিয়ে অফিসে বসে বিদ্যুৎ বিল তৈরি করছেন। এতে করে প্রকৃত বিদ্যুতের ব্যবহার এবং বিলের মধ্যে তফাত দেখা যাচ্ছে।

অতিরিক্ত বিলের কারণে গ্রাহকদের ভোগান্তি

গারুড়িয়া ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের গ্রাহকদের মধ্যে বিলিং সম্পর্কিত সমস্যার তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বিশেষভাবে ৪২৭, ২২৪, ২০২, ২২৩ ও ৪০৬ নম্বর বিল গ্রাহকদের ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করেছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২ নম্বর গ্রাহক আব্দুল মান্নানের বিদ্যুৎ বিল এসেছে ৬০ হাজার টাকা, যা তার ব্যবহারের তুলনায় অতি উচ্চ।

গ্রাহকরা অভিযোগ করেছেন, স্থানীয় ইনচার্জ মঞ্জুরুল আলম ফোন কল রিসিভ না করায় অভিযোগ জানানোর কোনো সুযোগ পাচ্ছেন না। এছাড়া, নতুন সংযোগের জন্য আবেদন দিলে তা দীর্ঘ সময় অফিসে আটকে থাকে। অনুমোদন হলেও সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের ইনচার্জের অবহেলার কারণে ফাইল প্রক্রিয়াজাত হয় না।

বৈদ্যুতিক অবকাঠামোর অবস্থা

গত বছর ঘূর্ণিঝড় রেমার সময় অনেক বৈদ্যুতিক খুঁটি হেলে পড়েছিল এবং কিছু মিটার ভেঙে ঝুলে থাকতে দেখা গেছে। এছাড়াও বিভিন্ন স্থানে বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে যাওয়ায় ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। গ্রাহকরা জানিয়েছেন, যেকোনো সময় এই অবস্থা বড় ধরনের দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে।

মিটার রিডিং ও অতিরিক্ত বিলের কারণ

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের এক মিটার রিডার জানান, সারা বছরের পল্লী বিদ্যুতের ঘাটতি পূরণের জন্য জুন-জুলাই মাসে অতিরিক্ত বিল তোলার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এটি মূলত প্রতিষ্ঠানগত ত্রুটি পূরণের একটি পদ্ধতি।

বাকেরগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১-এর ডিজিএম মাজহারুল ইসলাম বলেন, “মাঠ পর্যায়ে রিডিংয়ের সময় কিছু ভুলত্রুটি থাকতে পারে। গ্রাহক যদি অভিযোগ করেন, আমরা তা তদন্ত করে সমস্যার সমাধান করব। আমরা চাই গ্রাহকরা স্বচ্ছ এবং সঠিক বিদ্যুৎ বিল পান।”

গ্রাহকদের উদ্বেগ ও প্রতিক্রিয়া

স্থানীয় গ্রাহকরা দাবি করেছেন, মিটার রিডাররা বাড়িতে না গিয়ে শুধু অফিসে বসে বিল তৈরি করছেন, ফলে প্রকৃত ব্যবহারের হিসাব মিলছে না। অনেকের অভিযোগ, নতুন সংযোগ, মিটার পরিবর্তন এবং অন্যান্য প্রশাসনিক কাজের জন্য টাকা না দিলে কোনো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় না।

গ্রাহকরা আরও বলেছেন, “আমরা সময়মতো বিল পরিশোধ করি, কিন্তু অফিসের অনিয়ম এবং অতিরিক্ত অর্থ আদায় আমাদের জন্য বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি শুধুমাত্র আর্থিক ক্ষতি নয়, বরং মানসিক চাপও তৈরি করছে।”

সমাধানের প্রয়োজনীয়তা

বিভিন্ন গ্রাম ও ইউনিয়নের গ্রাহকরা সরকারের তদারকি এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কার্যকর পদক্ষেপ দাবি করেছেন। তারা চাচ্ছেন, মিটার রিডারদের মাঠে পাঠানো হোক, প্রকৃত ব্যবহারের হিসাব অনুযায়ী বিল তৈরি করা হোক এবং নতুন সংযোগ বা মিটার পরিবর্তনের জন্য দেরি না করা হোক।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পল্লী বিদ্যুতের সঠিক রিডিং এবং নির্ভুল বিলিং না হওয়া গ্রাহকদের আস্থা কমিয়ে দেয়। এটি দীর্ঘমেয়াদে প্রতিষ্ঠান ও গ্রাহকের মধ্যে সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই স্বচ্ছতা এবং দ্রুত সমাধান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

প্রযুক্তিগত সমাধানের সম্ভাবনা

বিশ্বের অনেক দেশে বিদ্যুৎ সংস্থাগুলি স্মার্ট মিটার ব্যবহার করে থাকে। স্মার্ট মিটার ব্যবহার করলে ঘরের প্রকৃত বিদ্যুতের ব্যবহার স্বয়ংক্রিয়ভাবে রেকর্ড হয় এবং সঠিক বিল তৈরি হয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাংলাদেশের পল্লী বিদ্যুতেও ধাপে ধাপে স্মার্ট মিটার প্রবর্তন করা যেতে পারে, যা গ্রাহক এবং প্রতিষ্ঠান উভয়ের জন্য সুবিধাজনক হবে।

এছাড়া, অনলাইন বিল পেমেন্ট ও রিডিং মনিটরিং সিস্টেম চালু করলে গ্রাহকরা তাদের ব্যবহারের হিসাব পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন এবং অতিরিক্ত বিলিং রোধ করা সম্ভব হবে।

প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া

ডিজিএম মাজহারুল ইসলাম আরও জানান, “আমরা গ্রাহকদের অভিযোগকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। মাঠ পর্যায়ে রিডিংয়ের মান উন্নয়ন করা হবে, এবং বিলের মধ্যে যে কোনো ত্রুটি থাকলে তা শীঘ্রই সমাধান করা হবে। আমাদের লক্ষ্য হলো গ্রাহক সন্তুষ্টি এবং স্বচ্ছ বিলিং প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা।”

স্থানীয় প্রশাসনও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। তারা চাচ্ছেন, পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহকরা যেন নিরাপদ এবং সঠিকভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারেন।

গ্রাহকদের পরামর্শ

গ্রাহকরা সুপারিশ করেছেন, নতুন সংযোগ এবং মিটার পরিবর্তনের ক্ষেত্রে অফিসিয়াল প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ স্বচ্ছ হওয়া উচিত। এছাড়াও, সময়মতো মাঠ পর্যায়ে মিটার রিডিং এবং প্রকৃত ব্যবহারের তথ্য সংরক্ষণ করা জরুরি।

গ্রাহকরা আরও বলছেন, স্থানীয় ইউনিয়নের কর্মকর্তারা যেন জনগণের সমস্যার সমাধানে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। এতে গ্রাহক এবং প্রতিষ্ঠান উভয়ের জন্য সুবিধা হবে।

বাকেরগঞ্জের পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহকরা এই মুহূর্তে বিল এবং বৈদ্যুতিক অবকাঠামোর সমস্যার কারণে চরম অসন্তোষে আছে। তবে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ ও স্থানীয় প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধান সম্ভব। সঠিক রিডিং, স্বচ্ছ বিলিং প্রক্রিয়া এবং আধুনিক প্রযুক্তি প্রবর্তনের মাধ্যমে গ্রাহকরা সঠিক বিদ্যুৎ বিল পেতে পারেন এবং নিরাপদভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারবেন।

এই সংকটের সমাধান হলে গ্রাহকরা আর্থিক ও মানসিকভাবে স্বস্তি পাবেন, এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি প্রতি আস্থা পুনঃস্থাপিত হবে।

MAH – 13248 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button