
ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে ফিলিস্তিনের উদ্দেশে যাত্রা করা নৌবহর থেকে বাংলাদেশি আলোকচিত্রী শহিদুল আলমসহ ৯৩ জন সাংবাদিক, চিকিৎসক ও মানবাধিকারকর্মী আটক হওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার আজ বুধবার এক বিবৃতিতে এই উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
আটক ঘটনায় বিস্তারিত
বিবৃতিতে জামায়াতের নেতা জানিয়েছেন, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজার উদ্দেশ্যে যাত্রা করা ত্রাণবাহী নৌবহর ‘গাজা ফ্রিডম ফ্লোটিলা’-র জাহাজ কনসেন্সসহ একাধিক নৌযান আন্তর্জাতিক জলসীমায় ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে আটক করা হয়। আটককৃতদের মধ্যে বাংলাদেশের প্রখ্যাত আলোকচিত্রী শহিদুল আলমও রয়েছেন।
জাহাজগুলো গাজাবাসীর জন্য খাদ্য, পানি এবং ওষুধসহ জরুরি মানবিক সহায়তা বহন করছিল। ইসরায়েলের এই পদক্ষেপকে আন্তর্জাতিক আইন ও মানবিক নীতির পরিপন্থী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
জামায়াতের প্রতিক্রিয়া
অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, “ইসরায়েলের এই অমানবিক এবং আন্তর্জাতিক আইনবিরোধী কর্মকাণ্ডে আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি এবং নিন্দা জানাচ্ছি। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন ও জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী মানবিক সহায়তা গন্তব্যে পৌঁছাতে বাধা দেওয়া যায় না। দখলদার ইসরায়েল নৌযান ও মানবাধিকার কর্মীদের আটক করে মানবতার বিরুদ্ধে জঘন্য অপরাধ করেছে।”
তিনি আরও বলেন, এই ঘটনার আন্তর্জাতিক নিন্দা ইতিমধ্যেই বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। গাজার নিরীহ জনগণের প্রতি এই আক্রমণ মানবতার ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে রেকর্ড হবে।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও নৌবাহিনীর ভূমিকা
জামায়াতের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অনুযায়ী যেকোনো ত্রাণবাহী জাহাজকে নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছানোর অধিকার রয়েছে। মানবাধিকার কর্মীদের আটক করা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ধরনের ঘটনা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের সমালোচনার সুযোগ তৈরি করেছে। পাশাপাশি, মানবিক সহায়তা বহনকারী জাহাজগুলোকে নিরাপদে পৌঁছানো নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক চাপ জরুরি।
শহিদুল আলমের প্রোফাইল
শহিদুল আলম বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত আলোকচিত্রী ও লেখক। দীর্ঘদিন ধরে তিনি মানবাধিকার, সামাজিক অসাম্য এবং আন্তর্জাতিক সংঘর্ষ বিষয়ক আলোকচিত্র সংগ্রহ করছেন। তার কাজ আন্তর্জাতিক মানের, যা বাংলাদেশি ও আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় সমাদৃত।
এই আটক ঘটনা তার পেশাগত কর্মকাণ্ড এবং মানবাধিকার সচেতনতা প্রসারের প্রতি সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে। জামায়াতের মতে, শহিদুলসহ অন্যান্য আটক ব্যক্তিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়া আবশ্যক।
ফিলিস্তিনের মানবিক সংকট
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজার জনগণ দীর্ঘদিন ধরে খাদ্য, পানি ও ওষুধের সংকটে ভুগছে। ত্রাণবাহী নৌবহরের লক্ষ্য ছিল এই মানবিক সংকট লাঘব করা।
জামায়াতের নেতা মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ক্ষুধার্ত ও বিপন্ন গাজাবাসীর প্রাণ রক্ষার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে সক্রিয়তা ও চাপ তৈরি করা জরুরি। ত্রাণবাহী জাহাজগুলো যাতে নিরাপদে পৌঁছায় তা নিশ্চিত করা মানবতার দায়িত্ব।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
বিশ্বজুড়ে এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা, সাংবাদিক সংগঠন এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। অভিযোগ করা হচ্ছে, নৌবাহিনী এবং মানবাধিকার কর্মীদের আটক করা আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘন।
জামায়াতের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সরকারসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত বিষয়টিতে জোরালো ভূমিকা নেওয়া এবং আটক ব্যক্তিদের নিরাপদ মুক্তি নিশ্চিত করা।
বাংলাদেশের দৃষ্টিভঙ্গি ও আহ্বান
জামায়াত মনে করছে, বাংলাদেশের সরকার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত নিঃশর্তভাবে শহিদুল আলমসহ সব মানবাধিকার কর্মীকে মুক্তি দেওয়ার জন্য কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া। এছাড়া ফিলিস্তিনের মানুষের প্রতি মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়াতে সহযোগিতা বাড়ানো প্রয়োজন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন ঘটনা আন্তর্জাতিক নীতিমালা ও মানবিক সচেতনতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ। ভবিষ্যতে সমতাপূর্ণ আন্তর্জাতিক চাপ এবং সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে।
আলোকচিত্রী শহিদুল আলমকে আটক করার ঘটনা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের নজির হয়ে রইল। জামায়াতের উদ্বেগ ও নিন্দা এ বিষয়টি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তুলে ধরেছে। ভবিষ্যতে শহিদুলসহ সকল মানবাধিকার কর্মীকে নিরাপদে মুক্তি দেওয়া এবং গাজার জনগণের জন্য ত্রাণ পৌঁছানো নিশ্চিত করা মানবতার প্রতি দায়িত্ব।
এম আর এম – ১৬৮২,Signalbd.com