বাংলাদেশ

বাণিজ্য উপদেষ্টার সাথে জার্মান রাষ্ট্রদূতের বৈঠক

Advertisement

ঢাকায় বাংলাদেশের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের সঙ্গে বাংলাদেশের নবনিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত ড. রুডিগার লোটজ মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) বিকেলে বৈঠক করেন। বৈঠকে দুই দেশের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

বৈঠকের মূল আলোচ্য বিষয়সমূহ

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বৈঠকে বলেন, বাংলাদেশ এবং জার্মানির মধ্যে চমৎকার দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্ক বিদ্যমান। এই সম্পর্ককে আরও জোরদার করতে উভয় দেশের বাণিজ্যকে বহুমুখী করার প্রয়োজন। এর মাধ্যমে দুই দেশই দীর্ঘমেয়াদে লাভবান হতে পারবে।

তিনি উল্লেখ করেন, যুক্তরাষ্ট্রের পরে জার্মানি বাংলাদেশি পণ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম রফতানি গন্তব্য। মোট রফতানি আয়ের প্রায় ১০.৯৬ শতাংশ আসে জার্মানির বাজার থেকে। বৈঠকে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, হোম টেক্সটাইল, ওষুধ, প্লাস্টিক পণ্য, পাদুকা, সাইকেল ও চামড়াজাত পণ্য জার্মানির আমদানিকারকদের আরও বেশি পরিমাণে আমদানি করতে আহ্বান জানানো হয়।

ড. রুডিগার লোটজ বলেন, জার্মানি বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক উন্নয়নে আগ্রহী। অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করতে বাণিজ্য বহুমুখীকরণ প্রক্রিয়ায় তার দেশ বাংলাদেশের সঙ্গে চলমান কার্যক্রমকে গতিশীল রাখবে। তিনি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতারও প্রশংসা করেন।

দুই দেশের বর্তমান বাণিজ্য পরিসংখ্যান

২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ জার্মানিতে ৪,৮৫০.৮৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য রফতানি করেছে এবং আমদানি মূল্য পরিশোধ করেছে ৯৪০.৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক ভারসাম্য বজায় রাখা এবং নতুন বিনিয়োগ আকর্ষণ করা আগামী দিনে অর্থনৈতিক সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক

বাংলাদেশ-জার্মানি বাণিজ্যিক সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার পর থেকেই দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক বিকাশ পেয়েছে। বাংলাদেশি রপ্তানিমুখী শিল্পে জার্মানির বিনিয়োগ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দীর্ঘমেয়াদে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পোশাক, হোম টেক্সটাইল, এবং হালকা যন্ত্রাংশ জার্মানির বাজারে বিশেষ জনপ্রিয়। এই চাহিদা আরও বাড়াতে উভয় দেশ নতুন উদ্যোগ ও নীতিমালা তৈরি করছে।

বৈঠকের প্রভাব ও সম্ভাব্য ফলাফল

বিশ্লেষকদের মতে, এই বৈঠক দুই দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ককে নতুন মাত্রা দিতে পারে। বিশেষ করে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্য জার্মানির বাজারে আরও প্রবেশাধিকার পেতে পারে। একইসঙ্গে, জার্মানির নতুন প্রযুক্তি ও বিনিয়োগ বাংলাদেশের শিল্প খাতকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করবে।

বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈঠকে যেসব খাতকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে, সেগুলোতে দ্রুত পদক্ষেপ নিলে অর্থনৈতিক লাভ বাড়তে পারে এবং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।

বিশেষজ্ঞ মতামত

অর্থনীতি ও বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ ড. কামরুল ইসলাম বলেন, “জার্মানির সঙ্গে বাণিজ্য সম্প্রসারণ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। নতুন বাজারে প্রবেশ এবং বৈচিত্রপূর্ণ পণ্যের রফতানি উন্নয়নে এই বৈঠক গুরুত্বপূর্ণ।”

একই সঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন, “উভয় দেশকে নিয়মিত আলোচনা ও প্রযুক্তি বিনিময় বজায় রাখতে হবে, যাতে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য স্থিতিশীল ও লাভজনক থাকে।”

ভবিষ্যতের প্রেক্ষাপট

বিশেষজ্ঞরা আশাবাদী, এই বৈঠকের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে ব্যবসায়িক সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হবে। বাংলাদেশি পণ্য ও বিনিয়োগ আকর্ষণ বৃদ্ধির ফলে অর্থনীতি সম্প্রসারণ পাবে।

তবে, বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য সরকারি নীতি, নতুন বিনিয়োগ সুযোগ এবং আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদা যথাযথভাবে অনুসরণ করা গুরুত্বপূর্ণ।

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন এবং জার্মান রাষ্ট্রদূত ড. রুডিগার লোটজের বৈঠক দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরও গতিশীল ও বহুমুখী করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বৈঠকে আলোচিত পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের রপ্তানি বৃদ্ধির পাশাপাশি নতুন বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।

এই বৈঠক দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সংহতি ও সহযোগিতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।

এম আর এম – ১৬৬৪,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button