বাংলাদেশ

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ইমামদের প্রশিক্ষণ দেবে তুরস্কের দিয়ানাত ফাউন্ডেশন

Advertisement

কর্মসূচি হাতে নিচ্ছে তুরস্কের “দিয়ানাত ফাউন্ডেশন”। বাংলাদেশ সরকারের ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধান ও গাইডলাইন অনুসরণে এই প্রশিক্ষণ পরিচালিত হবে। মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) সকালে সচিবালয়ে ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেনের সঙ্গে দিয়ানাত ফাউন্ডেশনের একটি প্রতিনিধি দলের বৈঠকে এই উদ্যোগের বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছায় দুই পক্ষ।

প্রশিক্ষণের লক্ষ্য ও কাঠামো

দিয়ানাত ফাউন্ডেশনের এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য হলো রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে কর্মরত ইমামদের ধর্মীয় শিক্ষা, নেতৃত্ব ও সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে স্থানীয় সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা। প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অভিজ্ঞ আলেম, মুফতি ও প্রশিক্ষকরা পাঠদান করবেন।

প্রশিক্ষণের বিষয়বস্তু হিসেবে অন্তর্ভুক্ত থাকবে—ইসলামের মৌলিক শিক্ষা, সমাজে শান্তি ও সহাবস্থানের বার্তা, শিশু ও নারীর অধিকার, মাদকবিরোধী সচেতনতা, এবং রোহিঙ্গা সমাজের আত্মনির্ভরতা বৃদ্ধির দিকনির্দেশনা। পাশাপাশি, অংশগ্রহণকারী ইমামদের আয়বর্ধক কর্মসূচিতেও যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে।

সচিবালয়ে বৈঠকে সমঝোতা

মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে দিয়ানাত ফাউন্ডেশনের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার রেসেপ সুকুর বলকান নেতৃত্ব দেন প্রতিনিধি দলকে। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক আ. ছালাম খান, ধর্ম উপদেষ্টার একান্ত সচিব ছাদেক আহমদ, তুরস্ক দূতাবাসের ধর্মীয় সেবা সমন্বয়কারীসহ অন্যান্য কর্মকর্তা।

বৈঠকে দুই পক্ষের মধ্যে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ইমাম প্রশিক্ষণ, স্বাস্থ্যসেবা, স্যানিটেশন উন্নয়ন ও পরিবেশ সংরক্ষণ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। উভয় পক্ষ শিগগিরই একটি সমঝোতা স্মারক (MoU) স্বাক্ষরের বিষয়ে একমত হয়।

তুরস্ক-বাংলাদেশ বন্ধুত্ব আরও মজবুত হচ্ছে

বৈঠকে ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, “বাংলাদেশ ও তুরস্কের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের এবং তা অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ। আমরা তুরস্কের সহায়তাকে আন্তরিকভাবে মূল্যায়ন করি।”

তিনি আরও বলেন, তুরস্কের দিয়ানাত ফাউন্ডেশনের সহযোগিতা রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলা ও মানবিক কার্যক্রমে নতুন মাত্রা যোগ করবে। সরকারের দিক থেকে ফাউন্ডেশনের সকল কার্যক্রমে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেওয়া হবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি।

দিয়ানাত ফাউন্ডেশনের আগ্রহ ও পরিকল্পনা

দিয়ানাত ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি রেসেপ সুকুর বলকান জানান, “বিশ্বের অন্যতম মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হিসেবে বাংলাদেশের উন্নয়নযাত্রায় অংশ নিতে পেরে আমরা গর্বিত। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ইমামদের প্রশিক্ষণ, স্থানীয়দের আত্মনির্ভরতা বৃদ্ধি, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ উন্নয়নে আমরা কাজ করতে চাই।”

তিনি আরও বলেন, দিয়ানাত ফাউন্ডেশন কেবল রোহিঙ্গা ক্যাম্পেই নয়, বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলেও মানবসেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনার পরিকল্পনা করছে। বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে তারা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করতে চায়।

মানবিক সহায়তা ও উন্নয়নে নতুন দিগন্ত

দিয়ানাত ফাউন্ডেশন দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মানবিক সহায়তা, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। সিরিয়া, ইয়েমেন, লেবানন ও আফ্রিকার নানা দেশে তাদের কার্যক্রম সুপ্রসিদ্ধ। এবার বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শিবিরে তাদের অংশগ্রহণ দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন অধ্যায় হিসেবে দেখা হচ্ছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে ধর্মীয় ও সামাজিক নেতৃত্বের অভাব দূর করতে ইমামদের প্রশিক্ষণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। প্রশিক্ষিত ইমামরা সমাজে শান্তি, শৃঙ্খলা ও ইতিবাচক বার্তা ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হবেন।

সরকারের প্রত্যাশা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দিয়ানাত ফাউন্ডেশনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক চুক্তি স্বাক্ষরের পর দ্রুত প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হবে। প্রাথমিকভাবে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পে পর্যায়ক্রমে ২০০ জন ইমামকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন জানায়, এই কর্মসূচি সফল হলে ভবিষ্যতে দেশের অন্যান্য দুর্যোগপ্রবণ ও প্রান্তিক অঞ্চলেও একই ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে।

রোহিঙ্গা সমাজে ধর্মীয় নেতৃত্বের পুনর্গঠন

রোহিঙ্গা সংকট শুধু মানবিক নয়, সামাজিক ও মানসিক সংকটও বটে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ইমামদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে রোহিঙ্গা সমাজে ধর্মীয় নেতৃত্বের মধ্যে যে বিভাজন বা দুর্বলতা ছিল, তা অনেকাংশে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।

ধর্মীয় মূল্যবোধ, শিক্ষার প্রসার ও সামাজিক ঐক্যবদ্ধতার মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গারা নিজেদের সক্ষমতা নতুনভাবে গড়ে তুলতে পারবে—এমনটাই আশা সংশ্লিষ্ট মহলের।

তুরস্কের দিয়ানাত ফাউন্ডেশনের এই উদ্যোগ রোহিঙ্গা সমাজের মানবিক উন্নয়নে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে। প্রশিক্ষিত ইমামরা যেমন সমাজে নেতৃত্ব দিতে পারবেন, তেমনি ক্যাম্পের অভ্যন্তরে শান্তি ও সহাবস্থানের সংস্কৃতি গড়ে তুলতেও ভূমিকা রাখবেন।

ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে এই উদ্যোগ সফল হলে, তা কেবল রোহিঙ্গা শিবির নয়—পুরো বাংলাদেশের মানবিক কার্যক্রমেও একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত হয়ে উঠবে।

এম আর এম – ১৬৬০,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button