বাংলাদেশ

নতুন পে স্কেলে বেতন কত বাড়তে পারে?

Advertisement

 ২০২৬ সালের শুরুতেই নতুন পে স্কেল কার্যকর করার প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। জাতীয় বেতন কমিশন ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে এবং আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই সুপারিশ চূড়ান্ত করার কথা রয়েছে। অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের ভাষ্যমতে, এ সিদ্ধান্তের জন্য চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটেই প্রয়োজনীয় বরাদ্দ রাখা হবে। তবে মূল প্রশ্ন হলো—কত বাড়তে পারে সরকারি কর্মচারীদের বেতন?

ঘোষণার বিস্তারিত

সরকার ২০২৫ সালের জুলাইয়ে ২৩ সদস্য বিশিষ্ট জাতীয় বেতন কমিশন গঠন করে। কমিশনের দায়িত্ব হলো সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা পুনর্বিবেচনা করে নতুন কাঠামো প্রস্তাব করা। এরই মধ্যে কমিশনের সদস্যরা ইঙ্গিত দিয়েছেন, বর্তমান মূল বেতন নতুন স্কেলে দ্বিগুণ হতে পারে।

যদি এমনটি হয়, তাহলে ১ম গ্রেডে সর্বোচ্চ বেতন দাঁড়াবে প্রায় ১ লাখ ৫৬ হাজার টাকা এবং ২০তম গ্রেডে সর্বনিম্ন বেতন হবে ১৬ হাজার ৫০০ টাকা।

বাংলাদেশে সর্বশেষ নতুন পে স্কেল ঘোষণা করা হয়েছিল ২০১৫ সালে। তখন ১ম গ্রেডে মূল বেতন ৪০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭৮ হাজার টাকা করা হয়। আর ২০তম গ্রেডের বেতন ৪ হাজার থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ৮ হাজার ২৫০ টাকা। অর্থাৎ সর্বনিম্ন গ্রেডে ২০১ শতাংশ এবং সর্বোচ্চ গ্রেডে প্রায় ১৯৫ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছিল।

এর পরবর্তী এক দশকে দেশের অর্থনীতি, মূল্যস্ফীতি এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বহুগুণে বেড়ে গেছে। শিক্ষক, কর্মকর্তা, চিকিৎসকসহ বিভিন্ন শ্রেণির সরকারি কর্মচারীরা বারবার দাবি জানিয়ে আসছিলেন নতুন পে স্কেলের। সেই দাবির প্রেক্ষিতেই এ উদ্যোগ।

সম্ভাব্য পরিবর্তন ও আলোচ্য বিষয়

কমিশনের আলোচনায় রয়েছে বেতন কাঠামোয় গ্রেডের সংখ্যা কমানো এবং সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ বেতনের অনুপাতকে আরও সামঞ্জস্যপূর্ণ করা। বর্তমানে এই অনুপাত প্রায় ১০:১। অর্থাৎ, সর্বোচ্চ গ্রেডের বেতন যদি ১০ টাকা হয়, তবে সর্বনিম্ন গ্রেডে তা ১ টাকা।

প্রতিবেশী ভারতসহ অন্যান্য দেশে এ অনুপাত ৮:১ থেকে ১০:১ এর মধ্যে থাকে। বাংলাদেশেও নতুন কাঠামোয় একই ধারা অনুসরণ করার চিন্তা করছে কমিশন।

কর্মচারীদের প্রত্যাশা ও প্রতিক্রিয়া

নতুন পে স্কেল নিয়ে সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে ব্যাপক আশাবাদ তৈরি হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, বর্তমান বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় বেতন দ্বিগুণ করলেও জীবনযাত্রার ব্যয়ের সঙ্গে পুরোপুরি সামঞ্জস্য হবে না। তবে দীর্ঘদিন পর এমন উদ্যোগ নেওয়ায় তারা এটিকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন।

একজন সরকারি কর্মকর্তা বলেন, “আমরা নতুন স্কেল নিয়ে আশাবাদী। যদি মূল বেতন দ্বিগুণ হয়, তাহলে অন্তত কিছুটা স্বস্তি মিলবে। তবে চিকিৎসা খরচ, বাসাভাড়া ও শিক্ষার ব্যয়ের তুলনায় আরও বাড়তি সুযোগ দেওয়া দরকার।”

সরকারের অবস্থান

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, নতুন পে স্কেল অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদেই গেজেট আকারে বাস্তবায়িত হবে। এজন্য পরবর্তী রাজনৈতিক সরকারের জন্য অপেক্ষা করা হবে না।

সরকারি সূত্র জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে এ সংক্রান্ত বরাদ্দ রাখা হবে। তবে একসঙ্গে বড় অঙ্কে ব্যয় বৃদ্ধি সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে। ফলে পর্যায়ক্রমে সুবিধা দেওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।

সংখ্যাগত প্রভাব ও অর্থনৈতিক চাপ

বর্তমানে দেশে প্রায় ১৪ লাখ সরকারি কর্মচারী আছেন। যদি সবার বেতন দ্বিগুণ করা হয়, তাহলে সরকারের বার্ষিক ব্যয় কয়েক লাখ কোটি টাকা বৃদ্ধি পাবে। অর্থনীতিবিদদের মতে, এটি বাজেটে চাপ সৃষ্টি করলেও সঠিক আর্থিক পরিকল্পনা থাকলে সামলানো সম্ভব।

তারা মনে করেন, কর্মচারীদের আর্থিক সক্ষমতা বাড়লে বাজারে ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে, যা অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

বিশেষজ্ঞ মতামত

শিক্ষাবিদ ও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, নতুন পে স্কেল শুধু কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি নয়, বরং একটি সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার অংশ। তারা মনে করেন, বেতন কাঠামোতে সামঞ্জস্য আনা হলে কর্মচারীদের কাজের প্রতি মনোযোগ বাড়বে এবং দুর্নীতি কমতে পারে।

অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, “সরকার যদি টেকসই ও ন্যায়সংগত পে স্কেল বাস্তবায়ন করে, তাহলে এর সুফল দীর্ঘমেয়াদে পুরো অর্থনীতিতে পড়বে।”

জনগণের মতামত নেওয়ার উদ্যোগ

জাতীয় বেতন কমিশন ইতিমধ্যেই অনলাইনে মতামত গ্রহণ শুরু করেছে। চারটি প্রশ্নমালা তৈরি করা হয়েছে— সরকারি চাকরিজীবী, সাধারণ নাগরিক, সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন সমিতি বা অ্যাসোসিয়েশনের জন্য। আগামী ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত এই প্রশ্নমালা পূরণের সুযোগ থাকবে।

এই উদ্যোগের মাধ্যমে সাধারণ মানুষও নতুন বেতন কাঠামো গঠনে সরাসরি মতামত দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে, যা একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

নতুন পে স্কেল কার্যকর হলে সরকারি কর্মচারীদের বেতন উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে, যা তাদের জীবনযাত্রায় স্বস্তি আনবে। তবে অর্থনীতিতে এর চাপ কেমন হবে এবং সরকার কীভাবে তা সামলাবে, সেটিই এখন দেখার বিষয়। দীর্ঘমেয়াদে এই উদ্যোগ টেকসই হলে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিও উপকৃত হবে।

এম আর এম – ১৬২৬,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button