বাংলাদেশ

সনদ চূড়ান্তে ছাড় দিচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো: আলী রীয়াজ

Advertisement

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের উদ্যোগে আলোচিত জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পথে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ঘটেছে। কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ রবিবার এক বৈঠক শেষে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, রাজনৈতিক দলগুলো তাদের দলীয় অবস্থান থেকে সরে এসে ঐকমত্যে পৌঁছানোর দিকে এগোচ্ছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, আগামী ১৫ অক্টোবরের মধ্যেই সনদ চূড়ান্ত করে সরকারের কাছে হস্তান্তর করা সম্ভব হবে।

রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান পরিবর্তন

অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানিয়েছেন, প্রথমদিকে অনেক রাজনৈতিক দল সনদের বিভিন্ন ধারায় আপত্তি তুলেছিল। কেউ বিচার বিভাগের সঙ্গে পরামর্শ নেওয়ার দাবি জানায়, আবার কেউ সনদের আইনি বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। তবে সাম্প্রতিক বৈঠকগুলোতে দেখা যাচ্ছে, রাজনৈতিক দলগুলো এখন নিজেদের কড়াকড়ি অবস্থান থেকে সরে এসে সমঝোতার পথে হাঁটছে। তার মতে, এই পরিবর্তনই সনদ চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়াকে সহজ করেছে।

সনদ চূড়ান্তের সময়সীমা

আলী রীয়াজ বলেছেন, “আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে জানিয়েছি, ১৫ অক্টোবরের পর আর সময় বাড়ানোর প্রয়োজন হবে না। এর মধ্যেই আমরা সনদ চূড়ান্ত করে সরকারের হাতে দিতে পারব।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, নির্বাচনী প্রস্তুতির ব্যস্ততার মধ্যেও রাজনৈতিক দলগুলো বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে দেখছে। ফলে কমিশনের পক্ষ থেকেও দ্রুততার সঙ্গে কাজ শেষ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ও আইনি বৈধতা

সনদ বাস্তবায়নকে আইনি ও সাংবিধানিকভাবে বৈধ করার জন্য কমিশন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছে। আগের বৈঠকগুলোতে ১৭ সেপ্টেম্বরের আলোচনার ভিত্তিতে বিশেষজ্ঞদের কাছে সনদ উপস্থাপন করা হয়েছিল। তারা কিছু সংশোধনী ও পরামর্শ দেন। প্রয়োজনে আবারও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বসা হতে পারে বলে জানিয়েছেন আলী রীয়াজ। তার ভাষায়, “আমাদের লক্ষ্য হলো, এই সনদ যেন সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয় এবং রাষ্ট্র সংস্কারের প্রক্রিয়ায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।”

ঐকমত্যের মূল দিকগুলো

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কয়েকটি বিষয়ে ইতিমধ্যেই একমত তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, সনদকে জনগণের সম্মতির ভিত্তিতে গণভোটের মাধ্যমে বৈধতা দেওয়া। আলী রীয়াজ জানান, “গণভোটের বিষয়ে সব রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে, যা বড় ধরনের সাফল্য।” এছাড়া আইনসভাকে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার বিষয়েও ঐকমত্য তৈরি হয়েছে।

জুলাই সনদ কেন গুরুত্বপূর্ণ

জুলাই সনদ মূলত একটি রাজনৈতিক সংস্কারপত্র, যেখানে নির্বাচনী ব্যবস্থা, সংসদীয় সংস্কার, বিচার বিভাগীয় স্বাধীনতা, এবং নাগরিক অধিকার সুরক্ষার মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত আছে। দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ও রাজনৈতিক অচলাবস্থা কাটিয়ে উঠতে এ সনদকে সমাধানের একটি পথ হিসেবে দেখা হচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলো যদি এটিকে সমর্থন করে, তবে দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামো নতুন ভিত্তি পেতে পারে বলে বিশ্লেষকদের মত।

জনগণের প্রত্যাশা ও রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা

আলী রীয়াজ বৈঠকে বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ তাদের প্রাণ দিয়ে আমাদের ওপর দায়িত্ব অর্পণ করেছে। এই সনদ কেবল একটি রাজনৈতিক দলিল নয়, এটি জনগণের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশার প্রতিফলন।” তিনি রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে নাগরিকদের অধিকার সুরক্ষায় ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে।

তার মতে, সনদে স্বাক্ষর করাই চূড়ান্ত লক্ষ্য নয়, বরং এটি হবে একটি বৃহত্তর সংস্কার প্রক্রিয়ার সূচনা। রাজনৈতিক দলগুলোকে সেই দায়বদ্ধতা মেনে চলতে হবে।

সম্ভাব্য প্রভাব ও ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা

যদি ১৫ অক্টোবরের মধ্যে সনদ চূড়ান্ত হয়, তবে এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বড় পরিবর্তন আনতে পারে। নির্বাচনী প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক হবে বলে আশা করা হচ্ছে। পাশাপাশি জনগণের অংশগ্রহণও বাড়বে। তবে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—সব দল শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ঐকমত্য বজায় রাখতে পারবে কি না।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সনদটি সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংস্কারের নতুন অধ্যায় শুরু হবে। কিন্তু ব্যর্থ হলে বর্তমান সংকট আরও গভীর হতে পারে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সর্বশেষ বৈঠক প্রমাণ করেছে যে রাজনৈতিক দলগুলো ধীরে ধীরে নিজেদের কঠোর অবস্থান থেকে সরে এসে সমঝোতার পথে এগোচ্ছে। অধ্যাপক আলী রীয়াজের আশাবাদ, ১৫ অক্টোবরের মধ্যেই সনদ চূড়ান্ত হবে। এখন প্রশ্ন হলো, রাজনৈতিক দলগুলো কি শেষ পর্যন্ত সেই প্রতিশ্রুত ঐকমত্য বজায় রাখতে সক্ষম হবে? উত্তর খুঁজে পেতে অপেক্ষা করতে হবে আগামী কয়েকদিন।

এম আর এম – ১৬২৪,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button