বাংলাদেশ

প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৌদ্ধ নেতৃবৃন্দের শুভেচ্ছা বিনিময়

Advertisement

বাংলাদেশের বৌদ্ধ সম্প্রদায় আজ এক আনন্দঘন উৎসবের মধ্যে দিয়ে প্রবারণা পূর্ণিমা উদযাপন করছে। এ উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় বৌদ্ধ ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ। রোববার (৫ অক্টোবর) রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এই শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠিত হয়।

বৌদ্ধ নেতৃবৃন্দ প্রবারণা পূর্ণিমার মাহাত্ম্য তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টাকে শুভেচ্ছা জানান এবং তার আন্তরিক সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

প্রবারণা পূর্ণিমা কী এবং এর মাহাত্ম্য

প্রবারণা পূর্ণিমা বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় অনুষ্ঠান। তিন মাসব্যাপী বর্ষাবাস শেষে ভিক্ষুরা আশ্রম ছেড়ে বের হন এবং এই দিনকে ধরা হয় আত্মশুদ্ধি, ভ্রাতৃত্ব ও সৎকর্মের প্রতীক হিসেবে।

এই দিনে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা নিজেদের ভুলত্রুটি স্বীকার করে নেন এবং একে অপরকে ক্ষমা করেন। বৌদ্ধ ধর্মীয় গ্রন্থে প্রবারণা পূর্ণিমাকে “সংযম, আত্মসংযত ও সৎচরিত্রের উৎসব” হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।

বাংলাদেশসহ সমগ্র বিশ্বে এই দিনটি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে উদযাপিত হয়।

শুভেচ্ছা বিনিময়ে আলোচনার মূল বিষয়সমূহ

বৌদ্ধ নেতৃবৃন্দ প্রধান উপদেষ্টার কাছে বিভিন্ন দাবি ও প্রস্তাব তুলে ধরেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

  1. উত্তরায় বৌদ্ধ শ্মশানভূমির জন্য জমি বরাদ্দ
    • রাজধানীর উত্তরায় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের শেষকৃত্যের জন্য জমি বরাদ্দ হওয়ায় নেতৃবৃন্দ গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
    • আগে ঢাকায় বসবাসকারী বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মৃতদের শেষকৃত্যের জন্য চট্টগ্রাম পর্যন্ত যেতে হতো।
    • এখন এই সমস্যার সমাধান হওয়ায় তারা এটিকে ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
  2. কঠিন চীবর দান উদযাপনের প্রস্তুতি
    • বৌদ্ধ ভিক্ষুরা বছরে একবার নিজেদের হাতে বোনা চীবর দান করে থাকেন।
    • এই কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি সম্পর্কেও প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করা হয়।
  3. তীর্থযাত্রার সরকারি ব্যবস্থাপনা
    • বৌদ্ধ নেতৃবৃন্দ দেশের ভেতরে ও বিদেশে তীর্থযাত্রার জন্য সরকারি উদ্যোগ ও সহযোগিতা চান।
  4. অতীশ দীপঙ্করের নামে জ্ঞানচর্চা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা
    • বিখ্যাত বৌদ্ধ দার্শনিক অতীশ দীপঙ্করের নামে একটি সরকারিভাবে জ্ঞানকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব রাখেন।
  5. সার্বক্ষণিক সহযোগিতা
    • ধর্ম মন্ত্রণালয় ও পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতার জন্য বৌদ্ধ নেতারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

বৈঠকে উপস্থিত অতিথিবৃন্দ

এই শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে অংশ নেন দেশের শীর্ষ বৌদ্ধ নেতৃবৃন্দ। তাদের মধ্যে ছিলেন—

  • ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহারের অধ্যক্ষ বুদ্ধপ্রিয় মহাথের
  • বাংলাদেশ বুদ্ধিস্ট ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ভিক্ষু সুনন্দপ্রিয়
  • পার্বত্য ভিক্ষু সংঘের ভিক্ষু কল্যাণ জ্যোতি
  • বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান ভবেশ চাকমা
  • বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতির ঢাকা অঞ্চলের সাধারণ সম্পাদক স্বপন বড়ুয়া চৌধুরী
  • বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের সচিব জয় দত্ত বড়ুয়া
  • বৌদ্ধ ট্রাস্টিরা— প্রফেসর ড. সুকোমল বড়ুয়া, মং হলা চিং, সুশীল চন্দ্র বড়ুয়া, অধ্যাপক ববি বড়ুয়া, রুবেল বড়ুয়া ও রাজীব কান্তি বড়ুয়া।

এছাড়া ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ. ফ. ম. খালিদ হোসেন এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমাও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অবদান

বাংলাদেশে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা একটি শান্তিপ্রিয় জনগোষ্ঠী হিসেবে সুপরিচিত। শিক্ষা, চিকিৎসা, সমাজসেবা ও সংস্কৃতিচর্চায় তাদের অবদান অনস্বীকার্য।

বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রামে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সমৃদ্ধ ঐতিহ্য রয়েছে। তাদের উৎসব, সংস্কৃতি এবং আধ্যাত্মিক জীবনধারা দেশের সংস্কৃতিকে বহুমাত্রিক করেছে।

প্রবারণা পূর্ণিমায় সামাজিক বার্তা

প্রবারণা পূর্ণিমা কেবল ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি সামাজিক সাম্য ও মানবিকতারও প্রতীক। এই দিনে মানুষ ক্ষমা, দয়া, সহানুভূতি ও ভালোবাসার বার্তা ধারণ করে।

বাংলাদেশের মতো বহুধর্মীয় সমাজে এই উৎসব শান্তি ও সম্প্রীতির সেতুবন্ধন রচনা করে।

সরকারের ভূমিকায় বৌদ্ধ নেতাদের কৃতজ্ঞতা

প্রধান উপদেষ্টার কাছে বৌদ্ধ নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন—

  • অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সহযোগিতায় ১০ দিনের মধ্যেই ঢাকায় শ্মশানের জমি বরাদ্দ একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত।
  • এটি বৌদ্ধ সম্প্রদায়কে শুধু স্বস্তিই দেয়নি, বরং তাদের প্রতি সরকারের আন্তরিকতার প্রমাণ রেখেছে।

প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৌদ্ধ নেতাদের এই শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠান শুধু একটি আনুষ্ঠানিক বৈঠক নয়, বরং বাংলাদেশের ধর্মীয় সম্প্রীতি ও মানবিক মূল্যবোধের প্রতিফলন।

বাংলাদেশ একটি বহু-ধর্মীয়, বহু-সংস্কৃতির দেশ। এখানে প্রতিটি ধর্মের মানুষ সমান মর্যাদা ও অধিকারের দাবিদার। প্রবারণা পূর্ণিমার এই শুভক্ষণে দেশবাসী শান্তি, সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের নতুন শপথ নেবে—এমনটাই প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

MAH – 13175 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button