বাংলাদেশ

সেপ্টেম্বরে সড়কে ঝরেছে ৪১৭ প্রাণ

Advertisement

সেপ্টেম্বর মাসজুড়ে সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৪১৭ জন। একই সময়ে আহত হয়েছেন ৬৮২ জন। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের মাসিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে নারী ৬৩ জন ও শিশু ৪৭ জন।

দুর্ঘটনার সারসংক্ষেপ

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত সেপ্টেম্বর মাসে মোট ৪৪৬টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে মোটরসাইকেল সংশ্লিষ্ট। ১৫১টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১৪৩ জন মোটরসাইকেল আরোহী, যা মোট নিহতের প্রায় ৩৪ শতাংশ।

এ ছাড়া দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে ১১২ জন ছিলেন পথচারী এবং ৫৬ জন ছিলেন বিভিন্ন যানবাহনের চালক বা সহকারী। এছাড়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন ৪৯ জন।

দুর্ঘটনার ধরন ও কারণ

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, দুর্ঘটনার সবচেয়ে বড় কারণ ছিল নিয়ন্ত্রণ হারানো। এককভাবে এ ধরনের দুর্ঘটনার সংখ্যা ১৭১টি।
এর বাইরে পথচারীকে চাপা দেওয়া বা ধাক্কার ঘটনা ঘটেছে ১১৯ বার, মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়েছে ৯২টি এবং পেছন থেকে ধাক্কা দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে ৫৮টি।

সংস্থাটি জানিয়েছে, অতিরিক্ত গতি, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, মহাসড়কে স্বল্পগতির যান চলাচল, এবং চালকদের অদক্ষতা ও অসচেতনতা এসব দুর্ঘটনার মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

কোন এলাকায় সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা

সেপ্টেম্বরে ঢাকা বিভাগেই সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এখানে ১২৮টি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ১২৪ জন।
বরিশাল বিভাগে সবচেয়ে কম দুর্ঘটনা ঘটেছে—১৬টি ঘটনায় মারা গেছেন ১৪ জন।

একক জেলা হিসেবে চট্টগ্রামে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটে। ওই জেলায় ৫২টি ঘটনায় ৪৫ জন নিহত হয়েছেন। রাজধানী ঢাকায় ৪২টি দুর্ঘটনায় ১৮ জন মারা যান এবং আহত হয়েছেন অন্তত ৩৩ জন।

সড়কের ধরনভেদে দুর্ঘটনা

প্রতিবেদনে দেখা যায়, জাতীয় মহাসড়কেই সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে। সেপ্টেম্বরে জাতীয় মহাসড়কে ১৬১টি, আঞ্চলিক সড়কে ১৩৯টি, গ্রামীণ সড়কে ৫৭টি এবং শহরের সড়কে ৮৯টি দুর্ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের সড়ক দুর্ঘটনা দীর্ঘদিনের সমস্যা হলেও সাম্প্রতিক সময়ে মোটরসাইকেলের ব্যবহার বাড়ায় ঝুঁকি আরও বেড়েছে।
তাদের মতে, ট্রাফিক আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন না হলে এবং চালকদের দক্ষতা ও মানসিকতা উন্নয়নে ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, প্রযুক্তির মাধ্যমে গতি নিয়ন্ত্রণে নজরদারি ব্যবস্থা বাড়ানো, চালকদের প্রশিক্ষণ, যানবাহনের ত্রুটি নিরসন এবং সড়ক ব্যবস্থাপনায় সংস্কার জরুরি।

সাধারণ মানুষের ওপর প্রভাব

প্রতিদিনের মতো সেপ্টেম্বরেও সড়ক দুর্ঘটনা শুধু প্রাণহানি নয়, আহতদের অনেককে আজীবন পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়েছে। এতে পরিবারগুলো মারাত্মক সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে।
অপরদিকে জনস্বাস্থ্য খাতেও এর বড় ধরনের চাপ পড়ছে।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ বলছে, অধিকাংশ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী বেপরোয়া গতি এবং অসচেতনতা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কঠোর আইন প্রয়োগ, ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো জরুরি।

বাংলাদেশে সড়কে প্রতিদিন গড়ে যে প্রাণহানি ঘটছে, তা পুরো সমাজের জন্য এক বড় হুমকি। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।

এম আর এম – ১৬০৫,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button