
নরসিংদী সদর উপজেলার আরশীনগর মোড়ে চাঁদাবাজির সময় পুলিশ দুইজনকে হাতেনাতে আটক করলে তাদের ছিনিয়ে নিতে হামলা চালানো হয়েছে। হামলায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. আনোয়ার হোসেনও আহত হয়েছেন। আহত অবস্থায় তাকে নরসিংদী সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
স্টাফ করেসপনডেন্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন জানান, বীরপুর এলাকা থেকে ফেরার সময় তারা আরশীনগর মোড়ে কয়েকজন ব্যক্তি অটোরিকশা ও সিএনজি চালকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করছে দেখতে পান। পুলিশ তখন দুইজনকে হাতেনাতে আটক করে।
তবে এর কয়েক মিনিটের মধ্যেই হামলাকারীরা আনোয়ার হোসেন এবং তার সঙ্গে থাকা পুলিশ সদস্যদের লক্ষ্য করে হামলা চালায়। হামলায় আহত হন পুলিশের আরও কয়েকজন সদস্য। স্থানীয়রা পুলিশকে উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন।
হামলার বিবরণ
নরসিংদী জেলা পুলিশ এবং হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, শনিবার সকালে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে আটজন পুলিশ সদস্য বীরপুর এলাকায় একটি লাশ উদ্ধারের ঘটনায় পরিদর্শনে যান। ফেরার পথে আরশীনগর মোড়ে তারা চাঁদাবাজদের কর্মকাণ্ড দেখতে পান।
অটো এবং সিএনজি চালকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করছিলেন কয়েকজন। পুলিশ দুইজনকে হাতেনাতে আটক করলে পেছন থেকে ৪০-৫০ জনের একটি গোষ্ঠী হামলা চালায়। হামলাকারীরা আনোয়ার হোসেনের ঘাড়, পা এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে এবং আটককৃত দুজনকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
নরসিংদী সদর হাসপাতালের আরএমও ডা. ফরিদা গুলশানা কবির জানান, আহত আনোয়ার হোসেন সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন। তার ঘাড় ও পায়ে রক্ত জমাট বাঁধা এবং মারাত্মক আঘাত হয়েছে। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের বর্ণনা
আহত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন বলেন, “বীরপুর এলাকা থেকে ফেরার সময় দেখি কয়েকজন চলন্ত গাড়ি থেকে চাঁদা তুলছে। জিজ্ঞাসা করতেই তারা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। মুহূর্তের মধ্যে ৪০-৫০ জন মিলে আমার ওপর হামলা চালায়। আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ি। পড়ার পরও তারা লাথি, কিল ও ঘুষি মারতে থাকে। পরে স্থানীয়রা আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।”
তিনি আরও বলেন, হামলায় জড়িতদের মধ্যে মূলত আরশীনগর মোড়ের সিএনজি স্টেশনের ইজারাদারের লোকজন রয়েছে। পুলিশ ইতিমধ্যে এই হামলার জন্য আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে উদ্যোগ নিয়েছে।
হামলাকারীদের অবস্থান ও পুলিশের পদক্ষেপ
নরসিংদী জেলা পুলিশ সুপার মো. মেনহাজুল আলম বলেন, “আমি মিটিংয়ে আছি। এখন পর্যন্ত বিস্তারিত জানি না। তবে ঘটনার তথ্য সংগ্রহ করছি। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ইজারাদার আলমগীর হোসেন হামলায় তার লোকজন জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে সরাসরি জানানো উচিত ছিল। আমাদের লোকজন হামলায় জড়িত নয়। আরশীনগর মোড় এলাকা পৌর প্রশাসক দ্বারা নির্ধারিত। যদি পুলিশের অভিযোগ থাকে, তারা পৌর প্রশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।”
নরসিংদী শহরে চাঁদাবাজি সমস্যা
নরসিংদী শহরে চাঁদাবাজি একটি দীর্ঘদিনের সমস্যা। বিশেষ করে অটোরিকশা ও সিএনজি চালকরা নিয়মিত চাঁদাবাজদের কাছ থেকে অর্থ দিতে বাধ্য হয়। হাইকোর্ট ইতোমধ্যে রাস্তায় চাঁদাবাজি করার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
নগরবাসী জানান, চাঁদাবাজরা প্রায়শই বিভিন্ন সিএনজি স্টেশন, মার্কেট ও মোড়ে চালকদের কাছ থেকে অর্থ দাবি করে। কেউ প্রতিবাদ করলে সহিংসতা ঘটায়। এমন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য পুলিশ প্রায়ই অভিযান চালায়।
পুলিশি অভিযান ও আইন শৃঙ্খলা
পুলিশি সূত্রে জানা যায়, শহরে চাঁদাবাজি প্রতিরোধের জন্য জেলা পুলিশ নিয়মিত অভিযান চালায়। ইতিমধ্যেই অনেক চাঁদাবাজকে আটক করা হয়েছে। তবে অনেক সময় স্থানীয়দের সহায়তায় বা ভয় দেখিয়ে আটককৃতদের ছিনিয়ে নেওয়া হয়।
এ ধরনের হামলার ঘটনা নতুন নয়। বিশেষ করে সিএনজি স্টেশন এবং ব্যস্ত মোড়গুলো চাঁদাবাজদের জন্য প্রধান কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে। নরসিংদী জেলা পুলিশ ইতিমধ্যেই চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষ টিম গঠন করেছে।
স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া
নরসিংদী সদর এলাকার স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, চাঁদাবাজির কারণে অটোরিকশা ও সিএনজি চালকদের দৈনন্দিন জীবনে অনেক সমস্যা হয়। কেউ প্রতিবাদ করলে হামলার মুখোমুখি হতে হয়। স্থানীয়রা আশা করছেন, পুলিশ এই ধরনের হামলার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে।
একজন অটো চালক বলেন, “প্রতিদিন আমাদের কাছ থেকে চাঁদা নেওয়া হয়। কেউ কিছু বললে তাদের ওপর হামলা চালানো হয়। আমাদের নিরাপত্তা দিতে হবে।”
সরকারের পদক্ষেপ ও সুপারিশ
বাংলাদেশ পুলিশ চাঁদাবাজি এবং সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে। বিশেষ করে জেলা ও মহানগর পুলিশের টিমগুলো রাত-দিন সচেতন। হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, রাস্তায় চাঁদাবাজি করা কঠোরভাবে দমন করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, চাঁদাবাজি দমন করতে হলে শুধু পুলিশি অভিযান নয়, বরং স্থানীয় প্রশাসন এবং সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। সঠিক নজরদারি এবং স্থানীয় পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে চাঁদাবাজির হার কমানো সম্ভব।
নরসিংদী শহরের আরশীনগর মোড়ে পুলিশের ওপর হামলা এবং চাঁদাবাজদের আটককৃতদের ছিনিয়ে নেওয়া ঘটনাটি শহরের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির একটি উদ্বেগজনক চিত্র তুলে ধরেছে। স্থানীয়রা পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে চাঁদাবাজি প্রতিরোধের জন্য সচেতন। আশা করা যায়, পুলিশ এবং প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপে চাঁদাবাজি দমন সম্ভব হবে।
নরসিংদী জেলা পুলিশ এবং স্থানীয় প্রশাসন ঘটনার তদন্ত চালাচ্ছে এবং দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে। এছাড়া, সাধারণ মানুষকে সতর্ক থাকতে এবং চাঁদাবাজদের সাথে জড়িত না হতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
MAH – 13154 I Signalbd.com