বাংলাদেশ

লিবিয়ার আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের আনাসের বিশ্বজয়

Advertisement

লিবিয়ার বেনগাজিতে অনুষ্ঠিত ১৩তম আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতা ২০২৫-এ বাংলাদেশকে গর্বিত করে তৃতীয় স্থান অর্জন করেছেন হাফেজ আনাস বিন আতিক। এই কৃতিত্বপূর্ণ অর্জন বাংলাদেশের কোরআনী শিক্ষার মান ও আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতায় দেশের অবস্থান আরও দৃঢ় করেছে।

রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাতে লিবিয়ার আওকাফ ও ইসলাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত একটি বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী, সচিব, সরকারি কর্মকর্তা, সামরিক বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং বিপুলসংখ্যক জনসাধারণ।

প্রতিযোগিতার ধরন ও বাংলাদেশির সাফল্য

আন্তর্জাতিক ক্বিরাত সংস্থা বাংলাদেশের তত্ত্বাবধানে মনোনীত হাফেজ আনাস বিন আতিক পূর্ণ কোরআন হিফজ ক্যাটাগরিতে অংশগ্রহণ করেন। তার অসাধারণ তেলাওয়াত ও হিফজের দক্ষতার জন্য তিনি তৃতীয় স্থান অর্জন করেন। পুরস্কার হিসেবে আনাস ৫০,০০০ লিবিয়ান দিনার লাভ করেন।

এ প্রতিযোগিতা বিশ্বমানের কোরআন শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম। এবারের প্রতিযোগিতায় বিশ্বের ৭৫টি দেশের ১২০ জন প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করেন। চূড়ান্ত পর্বে মোট ১৮ জন প্রতিযোগীকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।

আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ ও বাংলাদেশি অংশগ্রহণ

আন্তর্জাতিক ক্বিরাত সংস্থা বাংলাদেশের মহাসচিব শায়েখ সাদ সাইফুল্লাহ মাদানী (হাফিযাহুল্লাহ) এর প্রতিনিধি হিসেবে এই প্রতিযোগিতায় মাওলানা ক্বারী মাসউদুর রহমান যোগ দেন কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে। তিনি পর্যালোচক হিসেবে উপস্থিত থেকে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের কার্যক্রম এবং প্রতিযোগীর মান পর্যবেক্ষণ করেন।

বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতায় ধারাবাহিকভাবে সাফল্য অর্জন করছে। গত অর্ধযুগে বাংলাদেশের হিফেজ ও তাফসির প্রতিযোগীরা লিবিয়ার এই প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন সময়ে বিশ্বমঞ্চে দেশের সুনাম বৃদ্ধি করেছেন।

উদাহরণস্বরূপ:

  • ২০২২: সালেহ আহমদ তাকরীম – ৭ম স্থান
  • ২০২৩: আবু তালহা – ২য় স্থান, পুরস্কার ২ লাখ লিবিয়ান দিনার; মুস্তাফিজুর রহমান গাজী – তাফসির ক্যাটাগরিতে ৬ষ্ঠ স্থান
  • ২০২৪: মাহমুদুল হাসান – তাফসির ক্যাটাগরিতে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি

এ ধারাবাহিকতা বাংলাদেশের কোরআন শিক্ষার মান এবং শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতির প্রতি আন্তর্জাতিক মহলের বিশ্বাসকে আরও দৃঢ় করেছে।

হিফজুল কোরআনের গুরুত্ব

হিফজুল কোরআন শুধুমাত্র ধর্মীয় শিক্ষার একটি অংশ নয়, এটি মুসলিমদের আধ্যাত্মিক উন্নয়ন এবং মানসিক শৃঙ্খলার প্রতীক। আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতা শিক্ষার্থীদের মধ্যে কোরআন চর্চার প্রতি উৎসাহ সৃষ্টি করে। এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা কোরআনের যথাযথ উচ্চারণ, তেলাওয়াতের সৌন্দর্য এবং তাফসির জ্ঞান প্রদর্শন করেন।

বিশ্বব্যাপী মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে এ প্রতিযোগিতা শিক্ষার্থীদের মধ্যে সৌহার্দ্য ও আন্তঃসাংস্কৃতিক বন্ধন গড়ে তোলে। বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে আসছে এবং প্রমাণ করেছে, দেশের শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক মানের।

বাংলাদেশের কোরআন শিক্ষার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি

বাংলাদেশের কোরআন শিক্ষার ধারাবাহিকতা এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে সাফল্য অর্জনের পেছনে রয়েছে আন্তর্জাতিক ক্বিরাত সংস্থা বাংলাদেশের তত্ত্বাবধান। এই সংস্থা শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দেয়, তাদের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুত করে এবং মানসম্মত প্রশিক্ষক ও শিক্ষণ উপকরণ সরবরাহ করে।

হাফেজ আনাসের এই অর্জন শুধুমাত্র ব্যক্তি পর্যায়ে নয়, এটি দেশের কোরআন শিক্ষার মান ও আন্তর্জাতিক সুনামের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক। তিনি যে তৃতীয় স্থান অর্জন করেছেন, তা দেশের জন্য নতুন গৌরব এবং আন্তর্জাতিক কোরআনী মঞ্চে বাংলাদেশের অবস্থান আরও দৃঢ় করেছে।

আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতার গুরুত্ব

লিবিয়ার বেনগাজিতে অনুষ্ঠিত এই আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা কোরআন শিক্ষার ক্ষেত্রে বিশ্বমানের একটি প্রতিমূর্তি। প্রতিযোগিতা কেবল হিফজুল কোরআনেই সীমাবদ্ধ নয়, এখানে কোরআনের সঠিক উচ্চারণ, তেলাওয়াতের সৌন্দর্য এবং তাফসির জ্ঞান প্রদর্শনের মাধ্যমে প্রতিযোগীরা নিজেদের দক্ষতা প্রমাণ করেন।

বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম দেশ থেকে আগত শিক্ষার্থীরা এখানে অংশগ্রহণের মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে সৌহার্দ্য এবং আন্তঃসাংস্কৃতিক বন্ধন স্থাপন করে। এটি শুধু একটি প্রতিযোগিতা নয়, বরং কোরআনের শিক্ষাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।

বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ধারাবাহিক সাফল্য

বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতায় ধারাবাহিকভাবে সাফল্য অর্জন করে আসছে। এর ফলে আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশ কোরআন শিক্ষার ক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী পরিচিতি লাভ করেছে।

২০২৫ সালে হাফেজ আনাসের সাফল্য বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন গৌরব এবং আন্তর্জাতিক কোরআনী মঞ্চে দেশের অবস্থান আরও দৃঢ় করেছে। এটি প্রমাণ করে যে বাংলাদেশের কোরআন শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষার্থী এবং বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে সক্ষম।

হাফেজ আনাসের জীবন ও প্রশিক্ষণ

হাফেজ আনাস বিন আতিক বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ক্বিরাত সংস্থার তত্ত্বাবধানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। ছোটবেলা থেকেই তিনি কোরআন শিক্ষার প্রতি আগ্রহী ছিলেন। তার মেধা, অধ্যবসায় এবং পরিশ্রম তাকে আন্তর্জাতিক মানের হিফজ হিসেবে গড়ে তুলেছে।

প্রতিযোগিতার প্রস্তুতির জন্য তিনি দীর্ঘ সময় ধরে কঠোর অনুশীলন ও তেলাওয়াত চর্চা করেছেন। তার এই প্রতিভা এবং অধ্যবসায় তাকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে তৃতীয় স্থান অর্জনের সুযোগ করে দিয়েছে।

সাফল্যের প্রভাব

হাফেজ আনাসের এই সাফল্য বাংলাদেশের কোরআন শিক্ষার মান আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রমাণ করেছে। এটি দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে। ভবিষ্যতে আরও বেশি শিক্ষার্থী আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে দেশের সুনাম বৃদ্ধি করবে।

এছাড়া, এই সাফল্য বাংলাদেশের কোরআন শিক্ষার মান বৃদ্ধিতে সরকারের নীতি, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ এবং আন্তর্জাতিক ক্বিরাত সংস্থার তত্ত্বাবধানের গুরুত্বকেও তুলে ধরে।

হাফেজ আনাস বিন আতিকের তৃতীয় স্থান অর্জন শুধু তার ব্যক্তিগত সাফল্য নয়, এটি বাংলাদেশের কোরআন শিক্ষার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। এটি প্রমাণ করে, বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক মঞ্চেও প্রতিভার পরিচয় দিতে সক্ষম।

আন্তর্জাতিক ক্বিরাত সংস্থা বাংলাদেশের তত্ত্বাবধানে দেশের শিক্ষার্থীরা ধারাবাহিকভাবে সাফল্য অর্জন করে আসছে। এর ফলে বাংলাদেশ কোরআন শিক্ষার ক্ষেত্রে বিশ্বমানের দেশের স্বীকৃতি লাভ করেছে এবং মুসলিম বিশ্বের মধ্যে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান প্রতিষ্ঠা করেছে।

MAH – 13065 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button