বাংলাদেশ

রাজবাড়ীতে সড়ক দুর্ঘটনা: ট্রাকের ধাক্কায় চালক-সহকারী নিহত

Advertisement

রাজবাড়ীর সদর উপজেলার কল্যাণপুর এলাকায় একটি থেমে থাকা সবজিবোঝাই পিকআপ ভ্যানকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয় দ্রুতগামী একটি চালবোঝাই ট্রাক। এতে পিকআপের চালক ও সহকারী ঘটনাস্থলেই মারা যান।

মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনা ঘটে মঙ্গলবার দিবাগত রাত প্রায় ১টার দিকে রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের কল্যাণপুর বাজার এলাকায়

নিহতদের পরিচয়

পুলিশ জানায়, নিহতরা হলেন—

  • নাজমুল (৩৫): কুষ্টিয়া সদর উপজেলার পারখানা ত্রিমোহনীর মনসুর মোল্লার ছেলে।
  • কাওসার (৩০): কুষ্টিয়ার পশ্চিম মৌজমপুর এলাকার শাহিন মোল্লার ছেলে।

তারা দীর্ঘদিন ধরে পিকআপ ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন।

ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, ঢাকামুখী একটি সবজিবোঝাই পিকআপ ভ্যান কল্যাণপুরে দাঁড়িয়ে চাকা পরিবর্তন করছিল। এসময় কুষ্টিয়া থেকে আসা একটি চালবোঝাই ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পেছন দিক থেকে জোরে ধাক্কা দেয়।

ধাক্কার পর পিকআপের সামনের অংশ দুমড়ে-মুচড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই মারা যান চালক নাজমুল ও তার সহকারী কাওসার।

খবর পেয়ে আহলাদিপুর হাইওয়ে থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশ উদ্ধার করে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে পাঠায়। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।

পুলিশের বক্তব্য

আহলাদিপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শামীম শেখ বলেন—

“দুটি যানবাহনই কুষ্টিয়া থেকে ঢাকার দিকে যাচ্ছিল। কল্যাণপুর এলাকায় পিকআপটি দাঁড়িয়ে থাকার সময় পেছন থেকে আসা ট্রাকটি ধাক্কা দেয়। এতে চালক ও সহকারী নিহত হন। দুর্ঘটনার পর ট্রাক দুটি জব্দ করা হয়েছে এবং আইনি প্রক্রিয়া চলছে।”

দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে প্রাথমিক ধারণা

পুলিশ ও স্থানীয়রা ধারণা করছেন—

  1. ট্রাক চালক হয়তো অতিরিক্ত গতিতে ছিলেন।
  2. হঠাৎ দাঁড়িয়ে থাকা পিকআপ ভ্যান লক্ষ্য করতে পারেননি।
  3. মহাসড়কে আলোর পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় দৃশ্যমানতা কম ছিল।
  4. চালকের ক্লান্তি বা অসতর্কতাও দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে।

নিহত পরিবারের কান্নায় ভেঙে পড়া পরিবেশ

নিহতদের বাড়িতে এখন শোকের মাতম। একদিকে সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে পরিবারগুলো দিশেহারা হয়ে পড়েছে।

নাজমুলের প্রতিবেশীরা জানান, তিনি অত্যন্ত পরিশ্রমী ও দায়িত্বশীল ছিলেন। পরিবারের উন্নতির স্বপ্ন দেখছিলেন। কিন্তু এক মুহূর্তেই সব শেষ হয়ে গেল।

কাওসারের পরিবারও কান্নায় ভেঙে পড়েছে। ছোট ভাইবোনদের পড়াশোনা ও সংসারের খরচ বহন করতেন তিনি।

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ভয়াবহ চিত্র

বাংলাদেশে প্রায় প্রতিদিনই সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটছে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য অনুযায়ী—

  • ২০২৪ সালে ৬,৫০০-এর বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে।
  • এসব দুর্ঘটনায় ৭,০০০-এর বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।
  • এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটে হাইওয়ে সড়কে।

রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কও দীর্ঘদিন ধরে দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত।

দুর্ঘটনা প্রতিরোধে করণীয়

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এ ধরনের দুর্ঘটনা কমাতে হলে—

  • মহাসড়কে পর্যাপ্ত স্ট্রিটলাইট স্থাপন করতে হবে।
  • ট্রাক ও বাস চালকদের বিশ্রামের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
  • যানবাহনে প্রযুক্তিগত ত্রুটি আছে কিনা, তা নিয়মিত পরীক্ষা করা দরকার।
  • চালকদের জন্য কড়া নিয়ম ও শাস্তি কার্যকর করতে হবে।
  • জরুরি অবস্থায় রাস্তার পাশে সেফ জোন বা পার্কিং স্পট তৈরি করা প্রয়োজন।

স্থানীয়দের দাবি

কল্যাণপুর এলাকার মানুষ বলেন, এখানে প্রায়ই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটে। বিশেষ করে রাতের বেলা আলো না থাকায় বড় ট্রাক ও বাসের কারণে মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি হয়। তারা দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

প্রশাসনের অবস্থান

রাজবাড়ী জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহত পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, দ্রুত দুর্ঘটনাপ্রবণ স্থানে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা জোরদার করা হবে।

রাজবাড়ীতে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় দুইজনের প্রাণহানি ঘটেছে। দুর্ঘটনার জন্য অতিরিক্ত গতি, অসতর্কতা ও মহাসড়কের নিরাপত্তাহীনতাকে দায়ী করা হচ্ছে। নিহতদের পরিবার আজ শোকে স্তব্ধ। আর প্রতিদিনের মতো আবারও প্রশ্ন উঠছে—বাংলাদেশের মহাসড়কগুলো কি কখনও নিরাপদ হবে?

MAH – 12979 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button