
গত ২৪ ঘণ্টায় এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে নতুন করে ৬৬৪ জন রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভর্তি হয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।
এ নিয়ে চলতি বছরে দেশে ডেঙ্গুতে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ১৮৩ জনে। অপরদিকে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৩ হাজার ১৭৩ জনে।
নতুন আক্রান্ত ও মৃত্যুর বিস্তারিত
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়, সোমবার সকাল ৮টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত একদিনে নতুন করে ৬৬৪ জন রোগী ভর্তি হন। এর মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালেই ভর্তি হয়েছেন ২০৮ জন। বাকি রোগীরা ঢাকার বাইরের বিভাগগুলোতে ভর্তি হয়েছেন।
সর্বশেষ মৃত্যুর ঘটনা যুক্ত হওয়ায় এই বছরে ডেঙ্গুর প্রাণহানির সংখ্যা আবারও উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। গত রোববার একদিনেই ১২ জনের মৃত্যু হয়েছিল, যা চলতি বছরের সর্বোচ্চ দৈনিক মৃত্যুহার।
বিভাগভিত্তিক আক্রান্তের চিত্র
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ রোগী ভর্তি হয়েছে বরিশাল বিভাগে—১৩৬ জন। এরপর ঢাকার বাইরে ঢাকা বিভাগে ভর্তি হয়েছেন ১১৭ জন, চট্টগ্রামে ৭৬ জন, রাজশাহীতে ৫৭ জন, রংপুরে ৪৭ জন, ময়মনসিংহে ১৭ জন এবং সিলেটে ৬ জন।
এই পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যাচ্ছে, শুধু রাজধানী নয়, বরং সারা দেশের বিভিন্ন জেলাতেই ডেঙ্গুর প্রকোপ সমানভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।
আগের বছরের ডেঙ্গু পরিস্থিতি
তুলনামূলকভাবে দেখা যায়, গত বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে দেশে মোট ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং মারা গিয়েছিলেন ৫৭৫ জন। এর আগের বছর ২০২৩ সালে এ সংখ্যা আরও ভয়াবহ রূপ নেয়। সে বছর সর্বোচ্চ ৩ লাখ ২১ হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হন এবং প্রাণ হারান ১ হাজার ৭০৫ জন।
অতীতের এই ভয়াবহ পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, ডেঙ্গু মোকাবিলায় আরও আগেভাগে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পাওয়া রোগীর সংখ্যা
গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন ভর্তি হওয়া রোগীর পাশাপাশি হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৬৮১ জন। চলতি বছর এখন পর্যন্ত মোট ৪০ হাজার ৮৬৭ জন রোগী চিকিৎসা শেষে ছাড়পত্র পেয়েছেন।
তবে চিকিৎসকরা বলছেন, সুস্থ হয়ে বাড়ি গেলেও অনেক রোগীর শরীরে দুর্বলতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে যাচ্ছে, যেগুলোর প্রতি নজর দেওয়া জরুরি।
বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতি বছরই সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ে। বৃষ্টি ও অনিয়মিত আবহাওয়ার কারণে এডিস মশার বংশবিস্তার বেড়ে যায়।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু হাসপাতালভিত্তিক চিকিৎসা যথেষ্ট নয়; বরং স্থানীয় প্রশাসন, সিটি করপোরেশন এবং নাগরিকদের সম্মিলিত উদ্যোগে পরিচ্ছন্ন পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
একজন চিকিৎসক বলেন, “ডেঙ্গু প্রতিরোধে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস করা। ছোট-বড় পাত্রে জমে থাকা পানি নিয়মিত পরিষ্কার না করলে আক্রান্তের হার আরও বেড়ে যাবে।”
সরকারি উদ্যোগ ও নাগরিক করণীয়
সরকারি দপ্তরগুলো নিয়মিত ফগিং ও লার্ভিসাইড স্প্রে করার কথা বললেও নাগরিকদেরও সচেতন হওয়ার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। ঘরের ভেতর ও আশপাশে জমে থাকা পানি দ্রুত ফেলে দেওয়া, ফুলের টব, এসির ড্রেন ও পানির ট্যাংক নিয়মিত পরিষ্কার রাখা জরুরি।
এছাড়া জ্বরের উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে নিকটস্থ হাসপাতালে যোগাযোগ করার পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
ডেঙ্গুর প্রকোপ দিন দিন বাড়তে থাকায় দেশে জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতি আবারও শঙ্কাজনক রূপ নিচ্ছে। প্রতিদিনের আক্রান্তের সংখ্যা কিছুটা কমলেও মৃত্যুর হার উদ্বেগজনক।
এখন প্রশ্ন হলো, অতীত অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও সাধারণ মানুষ কতটা সচেতন হবে, এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই মরণব্যাধিকে কত দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে।
এম আর এম – ১৪৭৯,Signalbd.com