বাংলাদেশ

সাতকানিয়ায় বিস্ফোরণ: মৃত্যু বেড়ে ৫

Advertisement

চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার চরতী এলাকায় অবস্থিত একটি অবৈধ গ্যাস ক্রসফিলিং গুদামে ভয়াবহ বিস্ফোরণে দগ্ধ এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় দগ্ধ ১০ জনের মধ্যে মোট পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টার দিকে ঢাকার জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মো. হারেছ প্রকাশ হারুন (৩০) মারা যান। তিনি চন্দনাইশ উপজেলার হাশিমপুর ইউনিয়নের ছৈয়দাবাদ পর্দার ডেবা এলাকায় নুরুল ইসলামের ছেলে ছিলেন।

সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও গাউছিয়া কমিটি চন্দনাইশ মানবিক টিমের প্রধান মাওলানা মো. সোলাইমান ফারুকী সাংবাদিকদের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

বিস্ফোরণের পেছনের ঘটনা

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৭ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ৬টার দিকে চন্দনাইশ-সাতকানিয়ার সীমান্তবর্তী দ্বীপ চরতী সর্বিরচর এলাকায় অবৈধ গ্যাস ক্রসফিলিং গুদামে বিস্ফোরণ ঘটে। এই বিস্ফোরণের ফলে আগুন ছড়িয়ে পড়ে এবং গুদামে অবস্থানকারী ১০ জন শ্রমিক দগ্ধ হন।

প্রাথমিকভাবে স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। গুরুতর আহত ৪ জনকে পরে ঢাকার জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে স্থানান্তর করা হয়। পরে অপর ৬ জনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদেরকেও ঢাকায় পাঠানো হয়।

এ পর্যন্ত গুদাম মালিকসহ পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা এখনও গুরুতর।

নিরাপত্তা লঙ্ঘন ও অবৈধ গুদামের সমস্যা

এই দুর্ঘটনা আবারও দেশের ক্রসফিলিং গুদামের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, বিস্ফোরিত গুদামটি বৈধ অনুমোদন ছাড়াই চালানো হচ্ছিল। গ্যাস সিলিন্ডার সংরক্ষণে কোনো বৈধ নিরাপত্তা মানদণ্ড মানা হয়নি।

নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্যাস সিলিন্ডারের নিরাপদ সংরক্ষণ, নিয়মিত পরীক্ষা, এবং প্রশিক্ষিত কর্মীর উপস্থিতি নিশ্চিত না হলে এমন দুর্ঘটনা ঘনঘন ঘটতে পারে।

উদ্ধার ও চিকিৎসা ব্যবস্থা

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। গুরুতর দগ্ধদের ঢাকা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়। বার্ন ইনস্টিটিউটের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, দগ্ধদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা এখনো আশঙ্কাজনক।

মৃতদের পরিবারকে মানসিক সহায়তা ও আর্থিক সাহায্যের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ও মানবিক সংগঠনগুলো আহতদের চিকিৎসার খরচ এবং নিহতদের পরিবারের জন্য তহবিল গঠন করেছে।

স্থানীয়দের বক্তব্য

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গুদামের মালিক প্রায়শই শ্রমিকদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা উপেক্ষা করতেন। আগে থেকেই গ্যাস সিলিন্ডারের সংরক্ষণ ও পরিচালনায় শৃঙ্খলা ছিল না। স্থানীয়রা বলছেন, এ ধরনের অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ করতে প্রশাসনকে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

প্রতিক্রিয়া ও প্রশাসনের পদক্ষেপ

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। জেলা প্রশাসক সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, অবৈধভাবে পরিচালিত গুদাম ও নিরাপত্তা মানদণ্ড না মানার কারণে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে। তিনি আরও জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কঠোর অভিযান চালানো হবে।

প্রধানমন্ত্রী এবং স্থানীয় এমপি আহতদের সঙ্গে দেখা করেছেন এবং পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। আহতদের দ্রুত চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য জাতীয় স্বাস্থ্য সংস্থা এবং বার্ন ইনস্টিটিউটকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

নিরাপত্তা সচেতনতার প্রয়োজনীয়তা

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে গ্যাস ক্রসফিলিং সংক্রান্ত নিরাপত্তা মানদণ্ড কঠোরভাবে প্রয়োগ না হলে এ ধরনের দুর্ঘটনা বন্ধ করা সম্ভব হবে না। সিলিন্ডার সংরক্ষণ, শ্রমিক প্রশিক্ষণ, এবং আগুন প্রতিরোধ ব্যবস্থা অবিলম্বে উন্নয়ন করতে হবে।

এ ধরনের দুর্ঘটনা শুধু ব্যক্তিগত ক্ষতি নয়, বরং স্থানীয় অর্থনীতি ও সামাজিক নিরাপত্তার উপরও প্রভাব ফেলে। স্থানীয় প্রশাসন এবং জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থাকে যৌথভাবে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

সাতকানিয়ায় এই ভয়াবহ বিস্ফোরণ দেশের ক্রসফিলিং গুদামের নিরাপত্তা ব্যবস্থার অভাব স্পষ্টভাবে প্রমাণ করেছে। মৃতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানো হয় এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করা হয়।

স্থানীয় প্রশাসন এবং মানবিক সংস্থাগুলো প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা এখন অতীব জরুরি।

সাতকানিয়ায় অবৈধ গ্যাস ক্রসফিলিং গুদামে বিস্ফোরণে ৫ জনের মৃত্যু এবং ৫ জন গুরুতর আহত। বিস্ফোরণ নিরাপত্তা লঙ্ঘন ও অবৈধ গুদামের কারণে ঘটেছে। প্রশাসন তদন্ত শুরু করেছে এবং আহতদের চিকিৎসার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

MAH – 12971 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button