বাংলাদেশ

এক কিশোরীকে কেন্দ্র করে দুই কিশোরের সংঘর্ষে হত্যাকাণ্ড

Advertisement

শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলায় এক কিশোরীকে কেন্দ্র করে দুই কিশোরের মধ্যে চলমান দ্বন্দ্বের জেরে ঘটে এক মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৩ বছর বয়সী আব্দুর রহমানকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এটি স্থানীয় সমাজে নতুন করে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে।

ঘটনাটি ঘটেছে রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় বাঘবেড় খড়িয়াপাড়া গ্রামে। নিহত আব্দুর রহমান উত্তর গড়কান্দা শিমুলতলা এলাকার হাবিবুর রহমানের ছেলে। সোমবার ভোররাতে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। রাত ১১টার দিকে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে মরদেহ নিজ গ্রামে আনা হয় এবং দাফন করা হয়েছে।

ঘটনার প্রেক্ষাপট

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আব্দুর রহমান তার বন্ধুদের সঙ্গে বিকেলে অটোরিকশায় খড়িয়াপাড়া গ্রামে ঘুরতে যায়। তার সঙ্গে ছিল বন্ধু আশিক, স্বাধীন, জীবন, সিয়াম ও হিমেল। এ সময় আব্দুর রহমানের সঙ্গে অন্য একজন কিশোরও ছিলেন, যিনি একই গ্রামের রোকন।

উভয় কিশোরই একই কিশোরীর প্রতি আকর্ষণ অনুভব করেছিল। এই কিশোরীকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ শুরু হয়। এক পর্যায়ে রোকন তার বন্ধু ফায়সালসহ কয়েকজনকে নিয়ে আব্দুর রহমান ও তার বন্ধুদের ওপর হামলা চালায়। এতে আব্দুর রহমান, আশিক ও হিমেল গুরুতর আহত হন।

চিকিৎসা ও মৃত্যু

আহতদের নালিতাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। আব্দুর রহমানের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয় এবং পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়। তবে সোমবার ভোররাতে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

নিহতের চাচা ও সাবেক ইউপি সদস্য মতিউর রহমান বলেন,
“আমার ভাতিজাকে অন্যের বিরোধে বলি হতে হলো। আমরা এর ন্যায্য বিচার চাই।”

পুলিশি পদক্ষেপ

নালিতাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহেল রানা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন,
“পুলিশ আইনি প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এখনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে ঢাকায় ময়নাতদন্ত ও দাফন সম্পন্ন হওয়ায় অভিযোগ দায়ের প্রক্রিয়া চলছে।”

কিশোরী ও সামাজিক প্রভাব

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিশোরদের মধ্যে সামান্য দ্বন্দ্বও বড় ধরনের সহিংস ঘটনা তৈরি করতে পারে। বিশেষ করে প্রেম বা আকর্ষণকে কেন্দ্র করে গোষ্ঠীগত হিংসা বৃদ্ধি পেতে পারে। সম্প্রদায়ের মধ্যে সচেতনতা না থাকলে এই ধরনের ঘটনা পুনরায় ঘটার সম্ভাবনা থাকে।

স্থানীয়রা জানান, গ্রামে এমন ধরনের ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি। এটি পুরো এলাকার মানুষকে আতঙ্কিত করেছে। স্কুল ও স্থানীয় কমিউনিটি লিডারদের সঙ্গে আলোচনা করে কিশোরদের মধ্যে সহিংসতা প্রতিরোধের জন্য বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণের প্রয়োজন রয়েছে।

পরামর্শ ও সচেতনতা

মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিশোরদের মধ্যে সহিংসতা রোধ করতে প্রথমে পরিবারের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। বাবা-মা ও অভিভাবকরা কিশোরদের মধ্যে সম্পর্কের নৈতিক শিক্ষা এবং সহিংসতা প্রশমন শেখাতে পারেন। একই সঙ্গে স্কুল ও কমিউনিটি সেন্টারগুলিতে নিয়মিত মনোরোগ ও আচরণগত পরামর্শ প্রদান করা উচিত।

সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এমন হত্যাকাণ্ড শুধুমাত্র পরিবারকেই নয়, পুরো গ্রামীণ সমাজকে আহত করেছে। গ্রামে তরুণদের মধ্যে হঠাৎ সহিংসতা বৃদ্ধি পেলে, এটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সামাজিক নিরাপত্তার জন্যও বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়।

গ্রামের একজন বাসিন্দা বলেন,
“আমরা চাই কিশোরদের মধ্যে বন্ধুত্ব ও সহমর্মিতা বৃদ্ধি পায়, যেন এমন দুঃখজনক ঘটনা আর ঘট না হয়।”

শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলায় ঘটে যাওয়া এই হত্যাকাণ্ড কিশোরদের মধ্যে সহিংসতার বিরুদ্ধে সচেতনতা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে। পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসন এবং সমাজের সচেতন অংশের উদ্যোগ ছাড়া ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধ করা কঠিন।

নালিতাবাড়ী থানা পুলিশ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে। অন্যদিকে, পরিবার ও স্থানীয় সমাজের পক্ষ থেকে ন্যায়বিচারের দাবি তোলার প্রক্রিয়াও চলছে।

MAH – 12968 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button