
নিউইয়র্কে ২২ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সময় রাতে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস নিহত পুলিশ কর্মকর্তা দিদারুল ইসলামের পরিবারকে নিয়ে জ্ঞাপিত শোক ও সমবেদনা জানান। এ সময় তিনি পরিবারের হাতে সম্মানসূচক ক্রেস্ট তুলে দেন এবং বাংলাদেশি কমিউনিটি ও নিউইয়র্ক পুলিশের শ্রদ্ধাব্যঞ্জক অনুষ্ঠানের কথা তুলে ধরেন। নিহত দিদারুল ছিলেন ব্রঙ্কসের ৪৭ নম্বর প্রিসিঙ্কটে কর্মরত একজন প্রশংসিত অফিসার; ২৮ জুলাই পার্ক অ্যাভিনিউ-তে বন্দুকধারীর হামলায় তিনি প্রাণ হারান।
প্রধান সংবাদবিবরণী
নিউইয়র্ক — স্থানীয় সময় সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) রাতে নিউইয়র্কের একটি হোটেলে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস নিহত পুলিশ কর্মকর্তা দিদারুল ইসলামের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাতের সময় তিনি নিহত অফিসারের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন এবং পরিবারের হাতে শ্রদ্ধা স্বরূপ একটি ক্রেস্ট তুলে দেন।
সাক্ষাতে উপস্থিত ছিলেন দিদারুলের বাবা মোহাম্মদ আবদুর রব, মা মিনারা বেগম, দুই ছেলে — আয়হান ইসলাম ও আজহান ইসলাম, ভাই কামরুল হাসান, ভাইয়ের ছেলে আদিয়ান হাসান, বোন নাদিমা বেগম ও চাচা আহমেদ জামাল উদ্দিন। প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন এবং যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. তাসনিম জারা।
প্রধান উপদেষ্টা সাক্ষাতকালে বলেন, “পত্রিকায় ঘটনাটি পড়ে আমি হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম। টিভিতে দেখলাম নিউইয়র্কে তার শেষ বিদায়ে হাজারো মানুষের সমাগম হয়েছিল। বহু মানুষের শোক, শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা তিনি পেয়েছেন। নিউইয়র্কে আসার পরিকল্পনা করার সময়ই মনে হয়েছিল — আপনাদের সঙ্গে দেখা করা প্রয়োজন।”
ঘটনার সংক্ষিপ্ত পুনরাবৃত্তি ও প্রেক্ষাপট
২৮ জুলাই, নিউইয়র্কের ম্যানহাটানের পার্ক অ্যাভিনিউ এলাকায় একটি বহুতল করপোরেট ভবনের ভেতরে এক তরুণ বন্দুকধারী গুলি চালান। ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা হামলাকারীকে থামানোর চেষ্টা করেন; সেই दौरान পুলিশের একজন নির্দিষ্ট অফিসার — দিদারুল ইসলাম — গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। তাঁর পরিবারের বরাত দিয়ে জানা যায় যে দিদারুলের মরদেহে আট থেকে দশটি বুলেটের চিহ্ন ছিল। হামলাকারী পরে আত্মহত্যা করেন। নিহত দিদারুল ২০২১ সালে পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করেছিলেন এবং ব্রঙ্কস ৪৭ নম্বর প্রিসিঙ্কটে কর্মরত ছিলেন। তিনি কৃতিসন্তান, ও দায়বদ্ধ একজন পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে প্রশংসিত ছিলেন এবং দুটি সন্তান রেখে গেছেন।
পরিবার ও কমিউনিটির প্রতিক্রিয়া
দিদারুলের পরিবারের সদস্যরা সাংবাদিকদের বলেন, দিদারুল ছিলেন ন্যায়পরায়ণ, সহানুভূতিশীল ও কর্তব্যনিষ্ঠ একজন মানুষ। বাউন্সার নয়, তিনি ছিলেন সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানো একজন পুলিশ কর্মকর্তা। পরিবারের ভাষ্যমতে, দিদারুল সবসময় বলতেন যে পুলিশ হওয়ার মানে হল জনগণের সেবা করা এবং দুর্দশাগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানো। তার ছোট ছেলে আয়হান ও আজহান— যারা তখন আরও ছোট— তাদের বাবার সাহসিকতা ও আত্মত্যাগ নিয়ে গর্ব করে। পরিবারের সদস্যরা বলেন, দিদারুলের মৃত্যু পরিবার ও জনগোষ্ঠীর জন্য একটি অপূরণীয় ক্ষতি।
নিউইয়র্কের বাংলাদেশি কমিউনিটিতেও গভীর শোক ও সমবেদনা নজির কেড়ে নিয়েছে। কমিউনিটি নেতারা, স্থানীয় ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো এবং সহকর্মীরা শ্রদ্ধা জানান এবং নিহত অফিসারের পরিবারের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। শেষ শ্রদ্ধা জানাতে হাজারো মানুষ একত্র হয়েছিল বলে সংবাদ-চ্যানেল ও সামাজিক মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়েছিল।
রাষ্ট্রীয়/প্রতিষ্ঠানগত প্রতিক্রিয়া
স্থানীয় আইনপ্রণেতা, নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগ এবং বাংলাদেশ কনস্যুলেট— প্রত্যেকেই দিদারুল ইসলামের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন। পুলিশ বিভাগ কর্তৃপক্ষ তাঁর সাহসিকতা ও কর্তব্যনিষ্ঠতার প্রশংসা করেছেন এবং গুলিতে নিহত সহকর্মীর স্মরণে প্রতিষ্ঠিত প্রণোদনা ও সুরক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। বাংলাদেশি কিউনার্সুলেট পরিবারকে সাধারণ সহায়তা প্রদানে তাদের প্রস্তুতি ব্যক্ত করেছে এবং প্রয়োজনে কূটনৈতিক সহায়তা দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছে।
সাক্ষাতের তাৎপর্য ও রাজনৈতিক/সামাজিক প্রভাব
প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের মতো একজন প্রখ্যাত ব্যাক্তিত্বের পক্ষ থেকে সরাসরি সাক্ষাৎ ও সমবেদনা জানানোর কর্মটি নানা দিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ। এটি কেবল একটি মানবিক সাক্ষাৎ নয় — একই সঙ্গে এটি আন্তর্জাতিক স্তরে নিহত বাংলাদেশি পুলিশের করুণ আত্মত্যাগকে সম্মান জানানো। এই সাক্ষাত বাংলাদেশি অভিবাসী ও সাধারণ জনগোষ্ঠীর মনোবল বাড়ায় এবং নিহত অফিসারের পরিবারকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও মানসিক সহায়তা প্রদানের প্রতীকও হতে পারে।
ঘটনাটি স্থানীয়ভাবে পুলিশের কর্মপ্রক্রিয়া, বিবাদ নিষ্পত্তি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রশ্নও তুলেছে। বহুতল ভবনে ঘটে যাওয়া এ ধরনের গু খণ্ডন ও জনসাধারণের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনীতিক ও সামাজিক পর্যবেক্ষকরা বলেন, প্রত্যেক পুলিশ কর্মকর্তা যে ব্যক্তিগত ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেন — তাদের জীবনের প্রতি সমাজের দায়বদ্ধতা থাকা উচিত; মৃত্যুর পর পরিবারকে যথাযথ সহায়তা ও বিচার নিশ্চিত করা জরুরি।
নিহত দিদারুলের জীবন ও কর্মজীবন (সংক্ষিপ্ত জীবনবৃত্তান্ত)
দিদারুল ইসলাম ২০২১ সালে নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগে যোগ দেন। ব্রঙ্কসের ৪৭ নম্বর প্রিসিঙ্কটে তিনি কর্মরত ছিলেন এবং সহকর্মী ও অধীনস্তদের মধ্যে তিনি একজন পরিশ্রমী, দায়িত্বশীল ও নম্র ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন। কর্মজীবনে তিনি কমিউনিটি পুলিশিং ও পার্সোনাল সার্ভিসে স্বতন্ত্র ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি পিআর কাজে অবদান রেখেছেন, স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন এবং স্কুল ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সহযোগিতা প্রদান করেছেন।
ব্যক্তিগত জীবনে তিনি এক পরিচর্যাপূর্ণ পিতা ও সন্তানের অভিভাবক ছিলেন। তাঁর স্ত্রী বা পরিবারের অন্যান্য ব্যক্তির নাম প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়নি; তবে উল্লেখ্য, তিনি দুই সন্তানের পিতা ছিলেন — আয়হান ইসলাম ও আজহান ইসলাম।
তদন্ত ও আইনি অগ্রগতি
ঘটনাস্থল থেকে তদন্তকারী সংস্থাগুলো প্রাথমিকভাবে বলেছে যে হামলাকারী একজন তরুণ ও মানসিক চাপগ্রস্ত ব্যক্তি ছিল। হামলাকারীর মোটিভ, অস্ত্রের উত্স, সেই রাতের পূর্বাভাস বা সতর্কসংকেত ইত্যাদি নিয়ে বিস্তারিত তদন্ত চলছে। নিহত অফিসারের পরিবার ও কমিউনিটি প্রতিনিধিরা সুষ্ঠু তদন্ত এবং হামলাকারীর পেছনের কারণ চিহ্নিত করে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। পুলিশ বিভাগ বলেছে যে তারা পুরো ঘটনার তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করে পরিবারের কাছে প্রদান করবে এবং সংশ্লিষ্ট প্রশ্নের উত্তর দেবে।
আন্তর্জাতিক এবং দ্বিপাক্ষিক দিক
নিহত বাংলাদেশি অফিসারের ঘটনা আন্তর্জাতিকভাবে মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। নিেয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো— এবং অভিবাসী সম্প্রদায়— এ ধরনের ঘটনার সময় স্থানীয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিক্রিয়া এবং কনস্যুলেটের সেবা গ্রহণের গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা বাড়িয়েছে। আফসোস প্রকাশের পাশাপাশিও, বাংলাদেশি কনস্যুলেট ও স্থানীয় নেতারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, কীভাবে অভিবাসী পুনরায় সুরক্ষা পাবে এবং স্থানীয় আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী কী ধরনের সহায়তা দেবে।
পরিবারের দাবি ও দাবিতল্প (পরবর্তী পদক্ষেপ)
পরিবার সর্বপ্রকার সহযোগিতা পেতে চাচ্ছে — আইনগত, মানসিক ও আর্থিকভাবে। তারা চান নিহত অফিসারের তাত্ক্ষণিকভাবে সুষ্ঠু তদন্ত হোক, এবং সরকারি ও বেসরকারি সহায়তা নিশ্চিত করা হোক। এছাড়া পরিবারের অনুরোধ, দিদারুলের স্মৃতিতে বিশেষভাবে কোনো সামাজিক/সামাজিক কর্মসূচি বা বিস্তারযোগ্য সহায়তা ব্যবস্থা চালু করা হোক, যাতে তার বাচ্চারা প্রয়োজনীয় শিক্ষা এবং জীবনযাপন চালিয়ে যেতে পারে।
বিশ্লেষণ: কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ?
১) ব্যক্তির আত্মত্যাগ ও ন্যায়বিচারের প্রশ্ন: একজন নিরীহ পুলিশ অফিসারের জীবন উৎসর্গ একটি বড় সামাজিক বার্তা দেয় — আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যক্তিগত জীবনও রক্ষা করা জরুরি। সেই সঙ্গে এটি স্মরণ করায় যে পুলিশের সদস্যরা প্রতিদিনই ঝুঁকি নিয়ে জনসেবা করেন।
২) অভিবাসী ও স্থানীয় কমিউনিটির সম্পর্ক: অধিকাংশ সময় অভিবাসী সম্প্রদায় স্থানীয় নিরাপত্তা ও সাহায্যের ওপর নির্ভর করে; এমন একজন সদস্যের শূন্যতা তাদের মধ্যে ভয় ও অনিশ্চয়তার সঞ্চার করে। আন্তর্জাতিক মনোভাব ও সম্মান প্রদর্শন কমিউনিটির বিশ্বাস পুনরুজ্জীবিত করতে পারে।
৩) নীতিগত প্রতিক্রিয়া: শ্লেষ বা নিরাপত্তাসংক্রান্ত পরিবর্তন, বহুতল ভবনগুলোর নিরাপত্তা, কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ এবংসামাজিক মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নজর দেওয়া— এসব নীতিগত পরিমার্জন আলোচনা ছুঁড়ে দিতে পারে।
শেষ কথা ও আহ্বান
নিহত দিদারুল ইসলামের পরিবার ও নিকটজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সাক্ষাৎ ও সম্মাননা— এটি একটি মানবিক প্রতিক্রিয়া, যা পরিবারকে কিছুটা মানসিক সহায়তা দিয়েছে। আমাদের প্রার্থনা ও সচেতনতা থাকা উচিত, যাতে যারা সমাজের কল্যাণে জীবন উৎসর্গ করেন তাদের পরিবার সুষ্ঠু সহায়তা পায় এবং বিচারপ্রক্রিয়া স্বচ্ছভাবে সম্পন্ন হয়।
ওই সঙ্গে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সমাজকে আহ্বান করা হচ্ছে — সমবেদনার চেয়েও বড় কাজ হলো বাস্তব সহায়তা, নীতিগত সংশোধন ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। দিদারুলের মতো সকল কর্মীর আত্মত্যাগের কদর করেই ভবিষ্যতে সম্ভাব্য এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা সম্ভব হবে।
MAH – 12960 I Signalbd.com