বাংলাদেশ

ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিলো চার পশ্চিমা দেশ: বাংলাদেশ স্বাগত জানালো

Advertisement

নিউইয়র্ক: ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে চারটি প্রভাবশালী পশ্চিমা দেশ—কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য এবং পর্তুগাল। এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এই বিষয়টি প্রকাশ করেন।

তৌহিদ হোসেন বলেন, “বাংলাদেশ সব সময় ফিলিস্তিনের পক্ষে দাঁড়িয়েছে। আমরা ফিলিস্তিনের জনগণের অধিকার এবং স্বাধীনতা অর্জনের উদ্যোগকে সমর্থন করে আসছি। তাই চার দেশের এই স্বীকৃতি আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও আনন্দদায়ক খবর।”

উপদেষ্টা আরও জানান, “যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং পর্তুগালের পক্ষ থেকে স্বীকৃতি পাওয়া ফিলিস্তিনের জন্য চূড়ান্ত স্বাধীনতার দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তবে ফিলিস্তিনের জনগণকে এখনো আরও দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে। আন্তর্জাতিক সমর্থন ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার মাধ্যমে তাদের এই স্বপ্ন পূরণ সম্ভব হবে।”

ফ্রান্সও স্বীকৃতির পথে

তৌহিদ হোসেন জানিয়েছেন, বিশ্বের আরেক প্রভাবশালী পশ্চিমা দেশ ফ্রান্সও শিগগিরই ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে। এটি হলে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচটি স্থায়ী সদস্য দেশের মধ্যে চারটি দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে। এর ফলে ফিলিস্তিন আন্তর্জাতিক কূটনীতির ক্ষেত্রে আরও শক্ত অবস্থানে পৌঁছাবে।

তিনি বলেন, “ফ্রান্সের এই সিদ্ধান্ত নিলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ে ফিলিস্তিনের মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় নতুন পথ উন্মোচিত হবে। বাংলাদেশ সবসময় ফিলিস্তিনের পাশে রয়েছে এবং থাকবে।”

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে অংশগ্রহণ

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বর্তমানে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্কে অবস্থান করছেন। তিনি গত শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে ঢাকা ত্যাগ করেন। জাতিসংঘের এই উচ্চ পর্যায়ের অধিবেশনে বাংলাদেশের অবস্থান এবং ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা বিষয়ক সমর্থন আন্তর্জাতিক মঞ্চে দৃঢ় বার্তা বহন করছে।

তৌহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানান, “জাতিসংঘে বাংলাদেশ সবসময় ন্যায় ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে। ফিলিস্তিনের জনগণের স্বাধিকার রক্ষা আমাদের নীতি ও অবস্থান।”

ফিলিস্তিনের দীর্ঘ সংগ্রাম

ফিলিস্তিন বহু দশক ধরে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য সংগ্রাম করছে। পশ্চিমা বিশ্বের চার দেশের এই স্বীকৃতি একটি বড় পদক্ষেপ। এটি ফিলিস্তিনিদের জন্য রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক শক্তি বৃদ্ধি করবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য এবং পর্তুগালের স্বীকৃতি ফিলিস্তিনকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে বৈধতা দেবে এবং ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের সমাধানের জন্য শান্তিপূর্ণ পথ তৈরিতে সহায়ক হবে।

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা আন্দোলন চলাকালীন আন্তর্জাতিক সমর্থন সবসময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বিভিন্ন দেশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি না দেওয়া পর্যন্ত তাদের আন্তর্জাতিক চাপে রাখতে সহায়তা করেছে। এ ক্ষেত্রে এই চার দেশের পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক উন্মোচন করছে।

বাংলাদেশের স্থিতিশীল অবস্থান

বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তিনের পাশে থাকার নীতি অবলম্বন করে আসছে। বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ ও কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ফিলিস্তিনিদের মানবিক ও রাজনৈতিক সহায়তা নিশ্চিত করছে।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, “ফিলিস্তিনের জনগণ যে শান্তি এবং স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখে, বাংলাদেশ সবসময় তাদের পাশে থাকবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন ও সহযোগিতা ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার পথে শক্তি যোগাবে।”

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার এই খবর আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়েছে। বিভিন্ন দেশে বিশেষজ্ঞরা একে ফিলিস্তিনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক বিজয় হিসেবে মূল্যায়ন করছেন।

বিশ্বব্যাপী মানুষ ফিলিস্তিনের পক্ষে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির গুরুত্ব বোঝাচ্ছেন। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি ও শান্তি প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে এই পদক্ষেপ নতুন দিক নির্দেশনা দিতে পারে।

স্বীকৃতির অর্থ

ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া মানে হলো আন্তর্জাতিক মঞ্চে তাদের নিজস্ব বৈধতা ও মর্যাদা নিশ্চিত হওয়া। এটি তাদের জন্য:

  • জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থায় অধিক সক্রিয় ভূমিকা নেওয়ার সুযোগ তৈরি করবে।
  • রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে শক্তিশালী অবস্থান দেবে।
  • শান্তি প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের সুযোগ বাড়াবে।
  • আন্তর্জাতিক বাজার ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা লাভের ক্ষেত্রে সহায়ক হবে।

এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ফিলিস্তিন দীর্ঘ সময় ধরে যে স্বাধীনতা ও স্বীকৃতি কামনা করছে, তার বাস্তবায়নের দিকে বড় ধাপ এগোতে পারে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

ফিলিস্তিনের জনগণ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আশা করছে, আরও দেশ স্বীকৃতি দেবে এবং ফিলিস্তিনকে সমর্থন করবে। এর মধ্যে ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি ও স্পেনের মতো দেশগুলোও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

বাংলাদেশও তার নীতি অনুযায়ী ফিলিস্তিনের পাশে থাকবে। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, “আমরা সবসময় মানবাধিকার, ন্যায় এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করি। ফিলিস্তিনের জন্যও আমরা এভাবে কাজ করতে থাকব।”

ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এটি ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা আন্দোলনকে নতুন মাত্রা দিচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে সমর্থন বাড়াচ্ছে। বাংলাদেশও এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে এবং ফিলিস্তিনের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছে।

ফিলিস্তিনের জনগণকে আরও পথ পাড়ি দিতে হবে, কিন্তু আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি তাদের স্বাধীনতার স্বপ্ন পূরণের পথে শক্তিশালী ধাপ হিসেবে কাজ করবে। এটি মানবাধিকার, ন্যায় এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রতীক।

MAH – 12946 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button