
দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির গুরুত্বে জোর দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ. ফ. ম. খালিদ হোসেন জানিয়েছেন, সনাতন ধর্মাবলম্বীরা নির্বিঘ্নে দুর্গাপূজা উদযাপন করতে পারবেন। এ উপলক্ষে সরকার সারাদেশে নিরাপত্তা তদারকির পাশাপাশি একটি হটলাইন চালু করছে, যা কোনো অপরাধ বা উদ্বেগের খবর দ্রুত প্রশাসনের কাছে পৌঁছে দেবে।
ড. খালিদ হোসেন আরও জানান, এ বছর পূজার জন্য সরকারী বরাদ্দ ২ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ কোটি টাকা করা হয়েছে। পাশাপাশি সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি মন্দির ও পুকুরঘাট নির্মাণ এবং ঢাকার খিলক্ষেতে মন্দিরের জন্য রেলওয়ের জায়গা বরাদ্দের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সারাদেশে পূজার প্রস্তুতি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা
চট্টগ্রাম মহানগরীর নালাপাড়া সার্বজনীন দুর্গোৎসব উদযাপন পরিষদের আয়োজনে শ্রী শ্রী শারদীয় দুর্গোৎসব ২০২৫ উপলক্ষে একটি প্রস্তুতিমূলক সভায় ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, “আপনারা সাহসের সঙ্গে বুক ফুলিয়ে পূজা উদযাপন করুন। প্রশাসন সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার বিষয়ে খেয়াল রাখবে। পূজার সময় স্থানীয় সবাইকে সম্পৃক্ত করলে কেউ অপরাধ করতে চাইলে তা সঙ্গে সঙ্গে প্রতিহত করা সম্ভব হবে।”
সভায় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম, জেলা পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম সান্তু, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি শ্রী দীপক কুমার পালিত, এবং মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম সহকারী পরিচালক রিংকু কুমার শর্মা।
পূজার বরাদ্দ বৃদ্ধির কারণ
ধর্ম উপদেষ্টা জানান, “এ বছরের বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হয়েছে যাতে পূজামণ্ডপ, মন্দির ও অন্যান্য উপাসনালয়ে নিরাপদ ও সুন্দর পরিবেশে পূজা উদযাপন করা যায়। এটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য সরকারের বিশেষ উদ্যোগ।”
তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকার হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও নৃ-তাত্ত্বিক সকল সম্প্রদায়ের পাশে আছে। যারা সাম্প্রদায়িক মনোভাব পোষণ করে, তারা মানবিক হতে পারে না। আমাদের সকলকে মিলেমিশে দেশের উন্নয়নে কাজ করতে হবে।
অপরাধ প্রতিরোধ ও হুঁশিয়ারি
ড. খালিদ হোসেন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, “যারা পূজার সময় আইন ভঙ্গ বা স্থান সংক্রান্ত বিরোধ তৈরি করে, তারা আইনের আওতায় আনা হবে। কেউ পূজামণ্ডপ, মন্দির বা উপাসনালয়ে হামলা করে দেশের অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে চাইলে আমরা সকলে মিলে তা প্রতিহত করব।”
তিনি জানান, সম্প্রতি সারাদেশে হটলাইন চালু করা হয়েছে, যা দিয়ে যেকোনো ধরনের অপরাধ বা ঝুঁকির খবর দ্রুত প্রশাসনের কাছে পৌঁছে যাবে। এতে করে পূজা উদযাপন নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ হবে।
স্থানীয় সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া
সভায় উপস্থিত দক্ষিণ নালাপাড়া সমন্বয় পরিষদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা লায়ন অসীত বরণ সেন বলেন, “এই ধরনের উদ্যোগ পূজার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এবং সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে সৌহার্দ্য বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে। পূজা উদযাপন সবসময় শান্তিপূর্ণ ও আনন্দময় হওয়া উচিত।”
মন্দির কমপ্লেক্স নির্মাণ ও উন্নয়ন প্রকল্প স্থানীয় মানুষদের উৎসাহিত করছে। তারা মনে করেন, সরকারী সহযোগিতার ফলে ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানের মান বৃদ্ধি পাবে।
এবারের পূজায় বরাদ্দ বৃদ্ধি, নতুন মন্দির নির্মাণ ও হটলাইন চালুর উদ্যোগ মূলত দেশের ধর্মীয় সম্প্রদায়কে নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পূজা উদযাপনের সুযোগ দেয়। ধর্ম উপদেষ্টার বার্তা স্পষ্ট: সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা ও অপরাধ প্রতিরোধের দায়িত্ব সবাইকে নিতে হবে। এবারের পূজা উদযাপন শুধু ধর্মীয় নয়, দেশের সামাজিক সম্প্রীতিরও প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হবে।
এম আর এম – ১৪২৭,Signalbd.com