
ইসলামিক ফাউন্ডেশন আয়োজিত ইসলামী বইমেলা এবছর শুরুতেই জমে উঠেছে। গত কয়েক বছরের অভ্যাস অনুযায়ী, সাধারণত বইমেলায় দর্শক ও পাঠকের সমাগমে কিছুটা সময় লেগে যেত। তবে এবার মেলার প্রথম সপ্তাহেই বইপ্রেমী মানুষদের উপচে পড়া ভিড় চোখে পড়ার মতো।
শুক্রবার ছুটির দিনে মেলার স্টলগুলোতে দর্শক উপস্থিতি ছিল তীব্র। পাঠকরা স্টল ধরে ঘুরে বই দেখেছেন, অনেকেই পছন্দের বই কিনেছেন, আর নতুন প্রকাশিত বইয়ের মোড়কও উন্মোচিত হয়েছে। এছাড়া লিটলম্যাগ কর্নারে তরুণ লেখক ও পাঠকরা নানা ধরনের আড্ডা দিয়েছেন।
গার্ডিয়ান পাবলিকেশনসের জেনারেল ম্যানেজার নাজমুল হুদা ঢাকা পোস্টকে বলেন, “মেলা শুরু হয়েছে মাত্র এক সপ্তাহ, তবুও পাঠকের আগ্রহ ও আনাগোনা ইতিমধ্যেই সন্তোষজনক। এবারের প্রচারণা ও মিডিয়ার গুরুত্ব বৃদ্ধির কারণে দর্শকের সংখ্যা অন্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি।”
বইমেলায় পাঠকের আগ্রহ ও জনপ্রিয় ধারা
মেলায় দর্শকরা বিশেষভাবে আগ্রহ দেখাচ্ছেন সীরাত, শিশু বিষয়ক বই এবং ইসলামী সাহিত্য প্রতি। সমকালীন প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী আরিফুল হক জানান, “শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় বই বিক্রি অন্যান্য দিনের তুলনায় দ্বিগুণ। এবারের বইমেলা একেবারেই ভিন্ন এবং বিশেষ, কারণ এবার প্রথমবারের মতো বিদেশি প্রকাশনাও অংশ নিয়েছে। আশা করা যায়, আগামী দিনগুলোতে বিদেশি প্রকাশকের সংখ্যা আরও বাড়বে।”
একজন পাঠক তাশরীফ মাহমুদ বলেন, “আমি এখনও ঘুরে ঘুরে বই দেখছি। আজ বই কিনবো না, পুরো সময়টা শুধু ঘুরে কাটাবো। আগামী সপ্তাহ থেকে পছন্দমতো বই কিনব।”
এবারের বইমেলার বিশেষ আকর্ষণ
প্রতি বছরের মতো এবছরও রবিউল আওয়াল মাস উপলক্ষে ইসলামী বইমেলার আয়োজন করেছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। এবারের মেলায় অংশ নিয়েছে মোট ১৯৯টি স্টল, যেখানে রয়েছে:
- ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রকাশনা
- দেশের স্বনামধন্য ইসলামী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান
- নেতৃস্থানীয় ইসলামী পুস্তক ব্যবসায়ী
- বিদেশি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান: মিশর, লেবানন, পাকিস্তান
মেলায় লেখক কর্নার, ফুড কর্নার, আলোচনা সভা এবং কবিতা পাঠের আয়োজন করা হয়েছে। মেলা প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত, আর ছুটির দিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
মেলার ইতিহাস ও গুরুত্ব
ইসলামী বইমেলা ঢাকায় প্রতি বছর আয়োজন করা হয় এবং এটি শুধু বই বিক্রির জায়গা নয়, বরং এটি শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ধর্মীয় জ্ঞানের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে বিবেচিত। মেলায় অংশগ্রহণকারীরা শুধুমাত্র বই কেনেন না, তারা লেখকদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেন, নতুন বই প্রকাশের খবর পান, এবং শিশুদের জন্য শিক্ষামূলক কার্যক্রমে অংশ নেন।
বাংলাদেশে ইসলামিক বইমেলার গুরুত্ব ক্রমেই বেড়েছে। এটি তরুণ প্রজন্মকে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার দিকে আকৃষ্ট করার পাশাপাশি পাঠাভ্যাস গড়ে তোলার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।
পাঠক ও প্রকাশকের অভিজ্ঞতা
গার্ডিয়ান পাবলিকেশনসের নাজমুল হুদা বলেন, “মেলা শুরুর পরপরই পাঠকের আগ্রহ দেখে আমরা সত্যিই খুশি। মিডিয়ার প্রচারণার মাধ্যমে মানুষ আরও উৎসাহিত হয়েছে। আশা করি, আগামী দিনগুলোতে বিক্রি আরও বাড়বে।”
সমকালীন প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী আরিফুল হক জানান, “এবারের বইমেলা অন্যান্য বছরের তুলনায় ভিন্ন এবং বিশেষ। বিদেশি প্রকাশকদের অংশগ্রহণ বইমেলায় বৈচিত্র্য এনেছে। বিশেষ করে শিশু ও তরুণদের জন্য তৈরি বইগুলোর বিক্রি অত্যন্ত ভালো হচ্ছে।”
একজন তরুণ পাঠক তাশরীফ মাহমুদ বলেন, “বইমেলায় ঘুরে ঘুরে বই দেখা এবং লেখকদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়া আমার জন্য এক আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতা। বই কিনব আগামী সপ্তাহ থেকে। এবারের মেলার আয়োজন সত্যিই প্রশংসনীয়।”
মেলার বিশেষ আয়োজন ও কার্যক্রম
- লেখক কর্নার: এখানে পাঠকরা লেখকদের সঙ্গে সরাসরি আলাপ-আলোচনা করতে পারেন।
- ফুড কর্নার: বই পড়ার ফাঁকে স্বল্প মুল্যের খাবারের ব্যবস্থা।
- আলোচনা সভা: বিভিন্ন ধর্মীয় ও সাহিত্য বিষয়ক সেমিনার।
- কবিতা পাঠ: নতুন এবং প্রখ্যাত কবিদের কবিতা পাঠের আয়োজন।
এছাড়া মেলায় ছোটদের জন্য গল্প, ইসলামিক শিক্ষামূলক কার্যক্রম, এবং বই সংক্রান্ত কার্যক্রম আয়োজন করা হয়েছে।
বিদেশি প্রকাশনার অংশগ্রহণ
এবার প্রথমবারের মতো মিশর, লেবানন ও পাকিস্তানের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান বইমেলায় অংশ নিয়েছে। এতে নতুন বৈচিত্র্য এসেছে এবং পাঠকরা বিদেশি বই দেখার সুযোগ পেয়েছেন।
গার্ডিয়ান পাবলিকেশনসের নাজমুল হুদা বলেন, “ভবিষ্যতে বিদেশি প্রকাশনার সংখ্যা আরও বাড়বে। এটি পাঠকদের জন্য নতুন অভিজ্ঞতা হবে এবং মেলার বৈশ্বিক রূপায়ণ ঘটাবে।”
বইমেলার সময়সূচি ও দর্শক সুবিধা
মেলা প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।
ছুটির দিন: সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা।
প্রবেশ ফি: নেই।
মেলায় অংশগ্রহণকারীদের জন্য রয়েছে পর্যাপ্ত পার্কিং সুবিধা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ।
এবারের বইমেলা শিক্ষার্থী, তরুণ, শিশুসহ সকল বয়সী মানুষের জন্য আকর্ষণীয়। পাঠকরা বই কেনার পাশাপাশি লেখকদের সঙ্গে আলাপ, শিশুদের জন্য শিক্ষামূলক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ এবং নতুন প্রকাশিত বইয়ের তথ্য সংগ্রহ করতে পারছেন।
ইসলামী বইমেলা কেবল বই বিক্রির জায়গা নয়, এটি একটি শিক্ষা ও সংস্কৃতি কেন্দ্র। প্রতিটি পাঠক এখানে নতুন জ্ঞান, উৎসাহ এবং সামাজিক সংযোগ খুঁজে পান।
ইসলামী বইমেলা শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা, শিক্ষামূলক বইয়ের ব্যবহার, এবং ধর্মীয় সচেতনতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। এবারের মেলা পাঠক-দর্শকের উপস্থিতি ও নতুন বৈচিত্র্যের কারণে ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
MAH – 12907 I Signalbd.com