
আবারও সক্রিয় হয়েছে মৌসুমি বায়ু। সাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে শুরু হয়েছে বৃষ্টি। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আগামী কয়েকদিন দেশের অধিকাংশ এলাকায় বজ্রসহ বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে। কিছু কিছু জায়গায় হতে পারে ভারী বর্ষণও।
বৃষ্টির পূর্বাভাস দিল আবহাওয়া অফিস
আবারও বৃষ্টির আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। সমুদ্র উপকূল ও আশপাশের এলাকায় সকাল থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে। আগামী কয়েকদিন দেশের বেশিরভাগ এলাকায় মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণের সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে আবহাওয়াবিদরা।
আবহাওয়াবিদ আফরোজা সুলতানা জানান, “রবিবার সকাল থেকেই কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, বরিশালসহ উপকূলীয় অঞ্চলে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। সোমবার থেকে আরও বিস্তৃত হবে বৃষ্টির পরিধি। চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, সিলেট এবং ঢাকার অনেক এলাকায় বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।”
কেন হচ্ছে এই বৃষ্টি?
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। সেই সঙ্গে দেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে সক্রিয় মৌসুমি বায়ু। এই দুইয়ের মিলিত প্রভাবে আর্দ্রতা বেড়ে গিয়ে মেঘ সঞ্চারিত হচ্ছে এবং বিভিন্ন জায়গায় বৃষ্টি হচ্ছে।
আফরোজা সুলতানা আরও বলেন, “এই সময়কার বৃষ্টির একটা বৈশিষ্ট্য হলো, অনেক সময় একটানা না হয়ে দমকা হাওয়াসহ ভারী বর্ষণ হয়। আবার কিছু সময় বিরতি দিয়ে বৃষ্টি হতে থাকে। এ সপ্তাহজুড়ে এমন প্রবণতা থাকতে পারে।”
বৃষ্টি হচ্ছে, তবুও কমছে না গরম!
অনেকেই ভাবেন, বৃষ্টি হলে গরম কমে যাবে। কিন্তু বাস্তবে সেটা হচ্ছে না। এর পেছনে কারণ বাতাসে জলীয় বাষ্পের উচ্চমাত্রা। ফলে মানুষ শীতলতা অনুভব না করে বরং অস্বস্তিকর গরম অনুভব করছে।
ঢাকায় শনিবার রাতে ১৫ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। তবে তাপমাত্রা ছিল ২৭.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বাতাসে আর্দ্রতা ছিল ৯৫ শতাংশ, যা ভ্যাপসা গরমের জন্য দায়ী।
ফেনীতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, ক্ষতির মুখে মানুষ
টানা বৃষ্টি এবং পাহাড়ি ঢলের ফলে ফেনীর মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর পানি বেড়ে বন্যা দেখা দিয়েছে। জেলার পরশুরাম, ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া, দাগনভূঞা ও সদর উপজেলার অন্তত ১৩৭টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, নিচু এলাকায় এখনও পানি রয়েছে। আনন্দপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা নুর আলম বলেন, “বন্যার পানি ঘরে ঢুকে গেছে, এখন পরিবার নিয়ে অন্যের বাড়িতে থাকতে হচ্ছে। আমরা ত্রাণ চাই না, চাই টেকসই বাঁধ।”
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ৩১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও ২২০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে দুর্গতদের জন্য। তবে ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত চিত্র জানতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে।
কৃষি ও মৎস্য খাতেও ক্ষতির আশঙ্কা
বৃষ্টির কারণে শুধু ঘরবাড়িই নয়, ক্ষতি হচ্ছে কৃষি ও মৎস্য খাতেও। প্রাথমিক তথ্যে দেখা গেছে, ফেনীতে ২৩০০টি মাছের ঘের ও পুকুর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ৩৬৭০ হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে।
কৃষি অফিস সূত্র জানায়, এই ক্ষতি পূরণে সময় লাগবে। অনেক কৃষক আবারও বীজ বপনের সুযোগ না পেলে পুরো মৌসুমের ফসল হারাতে পারেন।
জনজীবনে দুর্ভোগ
বৃষ্টির কারণে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে সড়কে পানি জমে যাচ্ছে। জলাবদ্ধতার কারণে অফিসযাত্রী ও শিক্ষার্থীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। আবার কোথাও কোথাও বিদ্যুৎ বিভ্রাটও দেখা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে নাগরিকরা আবহাওয়ার উন্নতির অপেক্ষায় রয়েছেন।
পরবর্তী পরিস্থিতি কেমন হতে পারে?
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সপ্তাহজুড়েই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টিপাত চলবে। বিশেষ করে বিকেল ও রাতে বৃষ্টির প্রবণতা বেশি থাকবে। কোথাও কোথাও দমকা হাওয়ার সাথে ভারী বর্ষণও হতে পারে। তাই জনসাধারণকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
“এই সময়কার বৃষ্টির বৈশিষ্ট্যই এমন—বৃষ্টি হলেও তাপমাত্রা কমে না”—আবহাওয়াবিদ আফরোজা সুলতানা
সারাদেশে শুরু হওয়া বৃষ্টি জনজীবনে মিশ্র প্রভাব ফেলছে। একদিকে গরম থেকে সাময়িক মুক্তি মিললেও, অন্যদিকে দেখা দিচ্ছে জলাবদ্ধতা, বন্যা ও কৃষিক্ষেত্রে ক্ষতির আশঙ্কা। আগামী কয়েকদিন কীভাবে পরিস্থিতি বদলাবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
এম আর এম – ০৩২৯, Signalbd.com