অর্থনীতি

দেশের রিজার্ভ আরও বাড়ল

Advertisement

বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আবারও বৃদ্ধি পেয়েছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশের মোট রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩১ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলার। এর আগে আগস্টের শেষ সপ্তাহে এই অঙ্ক কিছুটা কম ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, নতুন তথ্য অর্থনীতির জন্য আশাব্যঞ্জক হলেও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবপদ্ধতিতে নিট রিজার্ভ তুলনামূলকভাবে কম রয়েছে।

রিজার্ভ বৃদ্ধির সর্বশেষ তথ্য

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের গ্রস রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩১ হাজার ৩৮৮ দশমিক ১২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ৩১ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলার।
আইএমএফ অনুমোদিত বিপিএম-৬ হিসাব পদ্ধতিতে এই রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৬ হাজার ৩৯৯ দশমিক ৯৩ মিলিয়ন ডলার।

এর আগে ২৮ আগস্ট পর্যন্ত গ্রস রিজার্ভ ছিল ৩১ হাজার ১৮৭ দশমিক ১৩ মিলিয়ন ডলার। বিপিএম-৬ অনুযায়ী নিট রিজার্ভ ছিল ২৬ হাজার ১৯১ দশমিক ২৪ মিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ, মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে রিজার্ভে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি দেখা গেছে।

রিজার্ভ বৃদ্ধির পেছনের কারণ

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রিজার্ভ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হলো প্রবাসী আয়ের প্রবাহ কিছুটা বাড়া। আগস্ট মাসের শেষভাগে বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রেরণ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। একইসাথে, সাম্প্রতিক সময়ে রপ্তানি আয়ে স্থিতিশীলতা লক্ষ্য করা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে, যার প্রভাব ইতোমধ্যেই রিজার্ভে পড়ছে। বিশেষ করে, ডলার লেনদেনের নীতিতে কঠোরতা আনা হয়েছে, যা বৈধ পথে অর্থ প্রবাহকে উৎসাহিত করছে।

নিট রিজার্ভ গণনা ও আইএমএফ পদ্ধতি

দেশের প্রকৃত রিজার্ভ কত তা নির্ণয়ে আইএমএফের বিপিএম-৬ পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। এই হিসেবে স্বল্পমেয়াদি দায় বাদ দিয়ে যে অর্থ অবশিষ্ট থাকে, সেটিই নিট বা প্রকৃত রিজার্ভ হিসেবে গণ্য হয়।
গ্রস রিজার্ভের পরিমাণ যতই হোক না কেন, আইএমএফের মানদণ্ডে নিট রিজার্ভ তুলনামূলক কম থাকে। এর কারণ হলো, অনেক সময় বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ, আমদানির দায় এবং বিভিন্ন স্বল্পমেয়াদি প্রতিশ্রুত অর্থ এই হিসাবে বাদ দেওয়া হয়।

রিজার্ভ বৃদ্ধির অর্থনীতিতে প্রভাব

রিজার্ভ বৃদ্ধি সাধারণত একটি দেশের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক সংকেত। এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক লেনদেনে আস্থা বাড়ে, বৈদেশিক বিনিয়োগকারীদের কাছে স্থিতিশীল অর্থনীতির চিত্র উপস্থাপন করা যায়।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে রিজার্ভ বৃদ্ধির প্রভাব পড়তে পারে মুদ্রাবাজার ও মূল্যস্ফীতির ওপর। রিজার্ভ বেশি থাকলে আমদানি ব্যয় নির্বিঘ্নে মেটানো সম্ভব হয়, যার ফলে বাজারে অস্থিরতা কমে আসতে পারে। একইসাথে, ডলারের সরবরাহ স্থিতিশীল থাকলে টাকার ওপর চাপ কমে যায়।

অতীতের তুলনায় বর্তমান অবস্থা

কয়েক বছর আগেও দেশের রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছিল। তবে পরবর্তীতে বিশ্ববাজারে জ্বালানি ও খাদ্যপণ্যের দামের উল্লম্ফন, আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি, এবং ডলার সংকটের কারণে রিজার্ভে চাপ পড়ে।
এখন রিজার্ভ আবারও বেড়ে ওঠায় অর্থনীতিবিদরা কিছুটা আশাবাদী হলেও তারা সতর্ক করছেন, দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীলতা আনতে হলে রপ্তানি আয় বাড়ানো এবং বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রবাহ অব্যাহত রাখতে হবে।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ সামাদ বলেন, “রিজার্ভ বৃদ্ধি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক খবর। তবে এটি যদি দীর্ঘমেয়াদি ধারা হয়ে ওঠে, তবেই অর্থনীতি প্রকৃত অর্থে উপকৃত হবে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “আমাদের আমদানি নিয়ন্ত্রণ, রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণ এবং প্রবাসী আয় বাড়ানোর দিকে মনোযোগী হতে হবে। কেবল সাময়িক প্রবৃদ্ধি দিয়ে অর্থনীতির সব সমস্যা সমাধান হবে না।”

সামনে কী হতে পারে

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যদি বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রেরণ অব্যাহত থাকে এবং রপ্তানি খাত থেকে আয় বৃদ্ধি পায়, তবে রিজার্ভ আরও শক্তিশালী হবে। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম এবং বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের চাপ ভবিষ্যতে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে জানিয়েছে, রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে তারা বিভিন্ন কৌশল বাস্তবায়ন করছে। এর মধ্যে আছে বৈদেশিক ঋণ ব্যবস্থাপনা, রপ্তানি আয়ে উৎসাহ প্রদান এবং প্রবাসী আয় বৈধ পথে আনতে প্রণোদনা অব্যাহত রাখা।

শেষ কথা 

দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সাম্প্রতিক বৃদ্ধি অর্থনীতির জন্য একটি আশার আলো। যদিও আইএমএফের হিসাবপদ্ধতিতে নিট রিজার্ভ তুলনামূলক কম, তবে সামগ্রিকভাবে এই অগ্রগতি অর্থনীতিকে কিছুটা স্থিতিশীলতা এনে দিয়েছে। ভবিষ্যতে এই ধারা বজায় রাখা সম্ভব হলে দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি আরও মজবুত হবে।

এম আর এম – ১১৫০, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button